ওসি সাহেব বাড়িতে এসে বলেছিলেন, শিশুদের সন্ধান পেতে হুজুরের কাছে যেতে। ঝাড়ফুঁক করাতে স্থানীয় বাজার ও মেলায়ও খোঁজ নিতে বলেছিলেন ওসি। – এমনটি বললেন খুন হওয়া শিশু শুভর পিতা ওয়াহিদুর রহমান।
ওসির পরামর্শে ছেলেদের সন্ধান পেতে স্থানীয় এক মাওলানার কাছে গিয়েছিলেন আরেক খুন হওয়া শিশু তাজেলের পিতা আব্দুল আজিজ। ৪ শিশুর সন্ধান পাওয়া যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন ওই মাওলানা। তবে এই শিশুদের আর জীবিত পাওয়া যায়নি।
বুধবার সকালে বাড়ির পাশের একটি হাওর থেকে মাটি চাপা অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাদের মরদেহ।
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রটিকি গ্রামের এই ৪ শিশু হত্যার ঘটনাটি এখন দেশজুড়ে আলোচনায় উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার সুন্দ্রটিকি গ্রামে এসে স্থানীয়দের সাথে সিলেট টোয়েন্টিফোর.ডটকমের প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে ওঠে এসেছে পুলিশের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ। নিখোঁজের অভিযোগ পাওয়ার পরই পুলিশ তৎপর হলে শিশুদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হতো বলে মনে করেন অনেকে।
দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করে বাহুবল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো মোশরাফ হোসেন বলেন, আমরা অভিযোগ পাওয়ার পরই তাদের বাড়িতে গিয়েছি। বিভিন্ন জায়গায় শিশুদের সন্ধান পেতে তৎপরতা চালিয়েছি।
শুভর পিতাকে হুজুরের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি তাদের আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি ও বাজারে খোঁজ নিতে বলেছি।
তবে স্থানীয় ৭ নং ভাদেশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতচ্ছির আলী বলেন, অভিযোগ পেয়ে পুলিশ বাড়িতে এসে খোঁজ নিলেও শিশুদের উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। নিখোঁজ শিশুদের পরিবারের পক্ষ থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে কয়েকজনের নাম জানানো হলেও পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদও করেনি।
কেবল সমালোচনা না করে ৪ শিশুর খুনিদের গ্রেফতারে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশের সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ড. আক্কাস উদ্দিন। তবে কারো বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
শুক্রবার খেলতে গিয়ে বাড়ির পাশের মাঠ থেকে নিখোঁজ হয়েছিলো জাকারিয়া শুভ, মনির মিয়া, তাজেল মিয়া ও ইসমাইল মিয়া। পঞ্চায়েত নিয়ে বিরোধ থেকেই শিশুদের হত্যা করা হয় বলে জানান স্থানীয়রা।
এ ঘটনায় বুধবার প্রধান অভিযুক্ত আব্দুল আলী ও তার ছেলে জুয়েলকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।