যৌন হয়রানির খবর নানা সময় আমাদের নজরে এলেও এবার ভয়াবহ একটি সংবাদ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আর তা হলো- যৌন হয়রানির শিকার হয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ করায় ওই ছাত্রীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা।
চ্যানেল আই অনলাইনের প্রতিবেদনে জানা যায়, ‘ফেনীর সোনাগাজীতে যৌন হয়রানির অভিযোগকারী ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে তারা সহপাঠিরা। শনিবার সকালে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।’
ওই প্রতিবেদনে জানা যায়, যৌন হয়রানির অভিযোগ শিক্ষার্থীর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। ১৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে তিনি যৌন হয়রানি করেন। অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ্দৌলাকে অবশ্য এরইমধ্যে আটক করেছে পুলিশ।
ধর্ষক-নিপীড়কদের পক্ষ নেয়ার ঘটনা আমরা এর আগেও দেখেছি। বিকৃত মানসিকতার কিছু লোকজনকে এক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার মেয়েদেরকেই দোষারোপ করতে দেখা যায়। এখানেও একই ঘটনা ঘটেছে। যৌন নির্যাতনকারী ওই অধ্যক্ষকে আটকের পর থেকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভও করেছে।
এ পর্যন্ত হলেও ধরে নেওয়া যেত যে বিষয়টা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বিষয়টা অধ্যক্ষের পক্ষে মানববন্ধন পর্যন্ত থেমে থাকেনি। যৌন নির্যাতনকারীর পক্ষালম্বনকারীরা ওই ছাত্রীর গায়ে আগুনও ধরিয়ে দিয়েছে।
ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আবু তাহের বলেছেন: তার শরীরের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যালের চিকিৎসকরা তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন।
পীড়াদায়ক এ খবরটি আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে। এ ঘটনা থেকে বুঝা যায় যে, আমাদের দেশে নারীরা এখনও কতোটা অনিরাপদ। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা আশা করি, আগুন দেওয়ার এ ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে শিগগিরই আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
একইসঙ্গে আমরা বলতে চাই, ভবিষ্যতে এমন ঘটনায় অভিযোগকারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা ওই ছাত্রীর উন্নত চিকিৎসা ও বিচার পাওয়া নিশ্চিত করতে যথাযথ ভূমিকা রাখার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।