চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ছাত্রলীগের কমিটিতে বয়স পরিবর্তন হলে চাকরিতে কেন নয়?

কোটা সংস্কার ও চাকরির বয়স ৩৫ করে নিলে এমন কি ক্ষতি হয়ে যেত? ছাত্রলীগের নেতৃত্বের প্রয়োজনে যদি বয়স বদল করা যায় আপামর ছাত্রদের দাবি ৩৫ কেন নয়? ছাত্ররা আন্দোলন করলো সংস্কারের জন্য আর দেয়া হলো বাতিলের ঘোষণা। যেকোন গণদাবি মূল্যায়ন করতে হয় বাস্তবতার নিরীখে, কোন অবস্থাতেই ক্ষোভ, রাগ বা মান-অভিমান দিয়ে নয়।

ছাত্রলীগের সম্মেলনে নেতা কর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রত্বের বয়স ২৮ করা হল। সহযোগী সংগঠন হিসেবে যুব সংগঠনওতো রয়েছে। তাদের কি কোন বয়স নির্ধারণ করা রয়েছে? ৬৫ বছরের বৃদ্ধকেও দেখা যাচ্ছে যুব নেতা হতে। সহযোগী সংগঠনের বয়স নীতিমালা কেবলই ছাত্রদের জন্য। যুবদের জন্য কেন নয়?

সচেতন ব্যক্তি মাত্রই এমন প্রশ্ন আসা খুবই যৌক্তিক। ছাত্রলীগের সম্মেলন উপলক্ষে ছাত্রত্বের বয়স বৃদ্ধি না হলে কি কোন আন্দোলন হতো? বয়স বৃদ্ধিতে কি সম্মেলনের কোন উপকার হলো? ছাত্রলীগের সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচন করবে ছাত্ররা। কমিটি গঠনের দায়িত্ব আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর চলে যাওয়া কি ছাত্রলীগের সম্মেলনের ব্যর্থতা নয়? ব্যর্থতা নয় কি এই নেতৃত্বের? এই বয়স বদলে কি ব্যর্থতার কিছু কমতি হল?

কোটা সংস্কারএটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও দূর্ভাগ্যজনক যে অনেক অপ্রয়োজনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সাধিত হয়ে চলেছে। যেসব পরিবর্তনে গণমানুষের কোন আসে যায় না। আর যেসব পরিবর্তন গণমানুষের প্রত্যাশিত ও প্রয়োজনীয় সেসব পরিবর্তনের দাবি হয় উপেক্ষিত। রাস্তার নাম বদল হলে রাস্তা দিয়ে চলাচলকারীদের কী কোন উপকার হয়? হাসপাতালের নাম বদল হলে কী রোগীর সেবা বাড়ে? বিশেষ নির্দেশনায় যদি পরিবর্তন হতে পারে বিমান বন্দরের নাম, বিদ্যালয়ের নাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের নাম তবে যার জন্য গোটা দেশে আন্দোলন তা সংস্কার করতে কেন এই গড়িমসি?

কোটা সাংবিধানিক বিষয়। সংবিধানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অগ্রাধিকারের বিষয় রয়েছে। মানুষের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কোটা সংস্কার কেন হতে পারে না? প্রধানমন্ত্রী যদি নির্বাহী আদেশে ঈদের ছুটি বাড়াতে পারেন কোটা সংস্কারে কি হতে পারতেন না একটি নির্বাহী আদেশ? দেশব্যাপী শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে কোটা সংস্কারের জন্য। প্রধানমন্ত্রী হয়তো আন্দোলনকারীদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে কোটা বাতিলের কথা বলেছেন। কোটা বাতিলের এই বক্তব্য কি সিদ্ধান্ত হয়ে যেতে পারে? এটা কি পুনর্বিবেচনা হতে পারে না?

কোটা সংস্কারকামীদের উপর হামলা করে তাদের আরও কেন বিক্ষুব্ধ করা হল? হামলাকারীরা কি দেশের জন্য হিতকর না অহিতকর হল? কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে আন্দোলনকারীরা আবার শাহবাগে জড়ো হলো। দেশব্যাপী ডাকলো ক্লাস বর্জন ও অবরোধ। বিঘ্ন ঘটলো জনচলাচল। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে দ্রুত থামিয়ে দেয়া উচিত। এই আন্দোলনকে জামাত বিএনপির উস্কানি বলে আন্দোলনকে তাদের দিকে ঠেলে দেয়া হবে মারাত্মক ভুল।

কারা আন্দোলন করছে সেটা বিচার্য নয়। জামাত বিএনপির অনুসারীরা এ আন্দোলনে শরীক হলে কি তাদের ফিরিয়ে রাখা যাবে? বাংলাদেশের সব শিক্ষার্থীই কোটা সংস্কারের পক্ষে নয় কি? তবে হ্যাঁ যারা কোটা সুবিধাভোগী এমন অল্প একটি অংশ এ আন্দোলনের বিপক্ষে। কোটা সুবিধা কারা পাচ্ছে? মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতিপুতিরাই সেক্ষেত্রে অধিক সুবিধাভোগী। মুক্তিযোদ্ধা কোটার অধিক সুবিধা প্রাপ্তিই আন্দোলনকারীদের উস্কে দেয়।

কোটা সংস্কারকামীদের আন্দোলনে দেশ এখনও উত্তপ্ত। এ আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে নিয়ে যাবার দুরভিসন্ধিও চালু রয়েছে অনেকের মাঝে। যারা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছে সেইসব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ কি বলতে পারতো না আমাদের কোটা নিয়েই যদি এতো আন্দোলন তাহলে আমাদের দাবি কোটা সংস্কার করা হোক। দেশের স্বার্থে আমরা এ দাবি করছি। কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন। এ আন্দোলন সরকার পতনের দিকে ধাবিত হলে কী ফল হবে তাদের? দুঃখজনক বিষয় হলো- মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে রয়েছে অনেক অমুক্তিযোদ্ধা। এসব ভুয়াদের সন্তান ও নাতিপুতিরা কোটা সুবিধা পেলে এর দায় কার? কেন এসব ভুয়াদের কারণে মেধাবীরা বঞ্চিত হবে?

কোটাসংস্কারের আন্দোলনকারীদের রাজপথে উঠতে ও তাদের ধর্মঘট ডাকার ক্ষেত্র সৃষ্টি করা খুবই ভুল সিদ্ধান্ত হবে। শান্তিকামীদের কেউ আগুন জ্বালেনা আগুন নেভায়। অনেককেই দেখা যাচ্ছে উগ্র বিরোধাত্মক কথা বলে আন্দোলনকারীদের উত্তপ্ত করে চলেছে। কোটা সংস্কার ইস্যুতে প্রজ্ঞাপনের দাবিতে  ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আবার শাহবাগে জমায়েত হল আন্দোলনকারীরা।

সেই সাথে কোটা সংস্কারের নামে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননার ইস্যুতে শাহবাগে বিক্ষোভ করলো কোটা সুবিধাভোগী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম। এ আন্দোলনকে প্রধানমন্ত্রী কিভাবে মূল্যায়ন করলেন? প্রজ্ঞাপন জারির আশ্বাস পেয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা সোমবার শাহবাগ হতে চলে গেল। তবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলল।

কোটা সংস্কারপ্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কার আন্দোলনে ক্ষুব্ধ হয়ে কোটা বাতিলের কথা বললেন আগে। এবার প্রজ্ঞাপন জারির আন্দোলনেও বিরক্ত হলেন। তিনি বললেন, আমিতো একটা কথা বলেছি। কমিটি কাজ করছে। কেউ বসে নেই।এটা একটা লম্বা প্রক্রিয়া। আন্দোলনকারীরা বলে ক্লাস করবে না। না করলে না করবে। এতে তাদেরই ক্ষতি হবে। আমিতো বলেছি হবে।

তিনি বলেছেন, সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কিছু সময় লাগে। এরপরও তারা থ্রেট দেয়। এটা সম্পূর্ণ বাড়াবাড়ি।

‘প্রধানমন্ত্রী এই ছেলেমেয়েদের প্রতি কেন ক্ষুব্ধ হচ্ছেন? সন্তান মায়ের কাছে কোন কিছু দাবি করলে কি সেটা থ্রেট হয়? যেখানে অধিকার সেখানেই দাবি নয় কি? এছাড়া যদি কোটা না থাকে যারা সংরক্ষিত কোটায় জাতীয় সংসদ সদস্য হয়েছেন তাদের কী হবে? কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে সবার আগে সংরক্ষিত নারী কোটায় নির্বাচিত সাংসদদের কি পদত্যাগ করতে বলা উচিত ছিল না? কোটা বাতিলের ঘোষণা কি সংবিধান সম্মত? প্রধানমন্ত্রীকে হয়তো আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে কেউ ভুল বুঝিয়েছে। যারা ভুল বুঝিয়েছে তারা আসলে চাচ্ছেন এই আন্দোলনটিকে বিএনপি জামাতের হাতে তুলে দিতে। এমন একটি রেডিমেড জনশক্তি কে না চায়? বিএনপি জামাত তো মুখিয়েই থাকবে তাদের পেতে।

এছাড়া দেশের সবদায়িত্ব যদি প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হয় তাহলে অন্যদের দায়িত্ব দেয়ার কী দরকার?  ছাত্রলীগের কমিটিও প্রধানমন্ত্রীকে করে দিতে হয়। সকলেই তোয়াজ তোষামোদের নামে প্রধানমন্ত্রীকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?

কোটা সংস্কার যেহেতু শিক্ষা সংক্রান্ত কোটা বাতিলের কথা না বলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কি তিনি এ বিষয়টার দ্রুত সমাধানের জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে নির্দেশ দিতে পারতেন না? অথবা পারতেন না মন্ত্রীসভার এজেন্ডা করতে?

মন্ত্রীসভায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করা হল। এই পরিবর্তনে কি কোন উপকার হল? এই পরিবর্তনকে কারা অভিনন্দন জানালো? কারা খুশি হল? সব দায় তিনি কেন নিচ্ছেন? ব্যাপারটা অন্যদের দায় এড়ানোর জন্য নয় কি? দায় এড়ানোর একটি সুচতুর চক্র গড়ে উঠছেনা তো? এ চক্র যদি থেকে থাকে তারা কিন্তু ভয়ংকরই বটে। সময়ে সজাগ থাকাই সময়ের দাবি।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)