৩৫ মিনিটের বিদায়ী ভাষণ শেষ করার আগে জোসেপ মারিয়া বার্তেমেউ জানিয়ে গেছেন, করোনার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে ইউরোপিয়ান সুপার লিগে যোগ দিচ্ছে বার্সেলোনা। তারপর থেকেই চাঞ্চল্যের শুরু, কী এই ইউরোপিয়ান সুপার লিগ।
ইউরোপের অভিজাত তথা এলিট ক্লাবগুলোকে নিয়ে একটি আলাদা টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা বেশ কয়েকবছর ধরেই আলোচনায়। ২০১৮ সালে ফুটবললিকসের বরাতে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডের স্পিগেল জানিয়েছিল, রিয়াল-বার্সাসহ ইউরোপের ১১ ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে বের হয়ে খেলবে সুপার লিগে।
ম্যানইউ, আর্সেনাল, চেলসি, ম্যানসিটি, লিভারপুল, বায়ার্ন মিউনিখ, জুভেন্টাস, পিএসজি, এসি মিলানের মতো বড় দলগুলো থাকবে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে।
নতুন টুর্নামেন্টে অতিথি দল হিসেবে থাকবে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, মার্শেই, ইন্টার মিলান ও রোমা। মোট ১৬ দলকে নিয়ে শুরু হবে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ।
দুইধাপে খেলা হবে সুপার লিগে। প্রথম ধাপে গ্রুপপর্ব, পরের ধাপে নকআউট। ছোট দলগুলোকে তুলে আনা হবে ইউরোপা লিগের মতো প্রতিযোগিতা দিয়েও।
টুর্নামেন্টের জৌলুশ হবে আকাশছোঁয়া তাই কামাইটাও হবে বেশি, এমন লোভ দেখালেও কিছু কারণে প্রস্তাবনা মুখের কথাতেই আটকে ছিল। এবার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে করোনা ভাইরাস।
করোনার কারণে প্রায় সব ক্লাবই আর্থিকভাবে কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষ করে বার্সেলোনা, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাব রীতিমত দেনার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। বাজারে এ দুক্লাবের লোকসান সবচেয়ে বেশি।
লোকসান কাটিয়ে উঠতে ক্ষমতা ছাড়ার আগে সুপার লিগের প্রতি নিজেদের সমর্থন জানিয়ে গেছেন সদ্যই সাবেক হয়ে যাওয়া বার্সা সভাপতি বার্তেমেউ। লাভের গন্ধ পেয়ে নিজেদের সমর্থন দিতে দেরি করেনি পিএসজি, ম্যানইউ, রিয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলান, লিভারপুলের মতো জায়ান্টরা। বড় ক্লাবগুলোর সমর্থন পেয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, ২০২২ সাল থেকে শুরু হয়ে যাবে ইউরোপিয়ান সুপার লিগ।
সুপার লিগটি মাঠে গড়াবে ‘ইউরোপিয়ান প্রিমিয়ার লিগ’ নামের স্বাধীন একটি বাস্কেটবল টুর্নামেন্টের আদলে। টুর্নামেন্টটিতে মোট ১৮ দল অংশ নেয়। তবে সুপার লিগে শেষপর্যন্ত কয়টি দল অংশ নেবে সেটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। একটি ভেন্যুতেই সবগুলো ম্যাচ আয়োজনের প্রস্তাবনা আছে। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের আগে বসতে পারে সুপার লিগের প্রথম আসর।
টুর্নামেন্ট আয়োজনের ব্যাপারে ৫ বিলিয়ন ইউরো আর্থিক সহায়তা দিতে হাত উঁচিয়ে আছে ব্যাংকিং জায়ান্ট জেপি মরগান। প্রয়োজনে লিভারপুল ও ম্যানইউর জন্য বিনিয়োগ করতে রাজি ওয়াল স্ট্রিট। স্পেন থেকে এই টুর্নামেন্টে জায়গা পেতে লড়ছে বার্সা, রিয়াল ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।
এই আসরকে যদিও ‘বিদ্রোহী লিগ’ আখ্যা দিয়ে বিরোধিতা শুরু করেছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা উয়েফা। বড় দলগুলো এ টুর্নামেন্টে নাম লেখালে ঐক্য, সমতা আর বন্ধনের নামে যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আয়োজন করা হয়, তার মর্যাদা কমে যাবে বলে মনে করেন উয়েফা প্রধান অ্যালেক্সান্ডার সেফারিন। সুপার লিগ বন্ধে সব উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
‘প্রথমে বলবো এই টুর্নামেন্ট বন্ধ করতে আমরা যা করার করবো। আমি জানি না বড় ক্লাবগুলো সত্যিই সুপার লিগ যাচ্ছে নাকি ফাঁকা হুমকি দিচ্ছে! তবে তারা সফল।’
‘এই পরিবর্তন বড় এবং ছোট ক্লাবগুলোর জন্য কোনো মঙ্গল বয়ে আনবে না। এটা কোনো ভালো বিষয় নয়। ক্লাবগুলো আয়োজনের ব্যাপারে কিছুই জানে না। আর এটাই ভবিষ্যতে পরিবর্তন ঘটাবে।’
‘আমরা বলতে চাই বিশ্বের সেরা ফুটবলাররা কেবল হাতেগোনা কয়টি দেশ থেকে তৈরি হয় না। আর ছোটদের জায়গা না দিলে একদিন ফুটবল হারিয়ে যাবে। দূরত্ব বাড়তেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে, আর পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপ হবে।’
সেফারিনের কথায় সমর্থন জানিয়েছেন লা লিগা সভাপতি হাভিয়ের তেবাসও। বার্তেমেউয়ের বক্তব্যের কথার পরপরই টুইটে লিখেছেন, ‘বার্সেলোনায় নিজের শেষদিনে বার্তেমেউ একটি দুর্বল এবং কাল্পনিক প্রতিযোগিতায় ক্লাবের অংশগ্রহণের বিষয়ে সম্মতি দেয়ার কথা জানিয়েছেন, এটাই তাদের ধ্বংসের কারণ হবে। ফুটবল শিল্প সম্পর্কে তার অজ্ঞানতার স্মারক হয়ে থাকবে এই সিদ্ধান্ত। সাফল্য এবং অনেক ভুল নিয়ে একজন সভাপতির দুঃখজনক সমাপ্তি।’