সিরাজগঞ্জে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হচ্ছে একটি বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাশে যমুনা নদীর তীরে ১১ অংশীদার নিয়ে গঠিত একটি কোম্পানিকে এই অঞ্চলটি গড়ে তোলার জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেজা।
এই অঞ্চলটি সম্পন্ন করা হলে সেখানে প্রায় ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলেও জানিয়েছে বেজা।
বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে বেজার কার্যালয়ে বেসরকারি খাতে এযাবতকালের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল ‘সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ কর্তৃপক্ষকে চূড়ান্ত লাইসেন্স তুলে দেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে এই কোম্পানিকে প্রাক-যোগ্যতা সনদ দিয়েছিল বেজা।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, সড়ক, নৌপথ, আকাশপথ ও রেলপথে যোগাযোগের সুব্যবস্থা সম্পন্ন উদীয়মান এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি এক হাজার ৩৬ একর জমি নিয়ে গঠিত হতে যাচ্ছে। চলতি বছরেই সেখানে ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু করা হবে।
বেজা জানায়, এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে টেক্সটাইল, আপ্যারেল ও পাটজাত দ্রব্য, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পাল্প ও কাগজ, সিরামিক, কেমিক্যাল দ্রব্য, অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক, প্লাস্টিক, চামড়াজাত দ্রব্য/জুতা, আইটি পার্ক, গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ, ফার্নিচার, এলপিজি টার্মিনাল, স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রক্রিয়াজাত মৎস্য এবং জাহাজ শিল্প স্থাপন করা যাবে।
এই অঞ্চলে ভূমি উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিসেবা ও অন্যান্য সুবিধাদি স্থাপনের জন্য মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালের মধ্যে পুরোপুরি বস্তবায়ন হলে এখানে ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মালিকানায় রয়েছে- নিট এশিয়া গ্রুপ, রাইজিং গ্রুপ, ইসকয়ার গ্রুপ, এসএম গ্রুপ (আরকে সিরামিক), টেক্সটাউন গ্রুপ, রাতুল গ্রুপ, মানামি ফ্যাশন লিমিটেড, প্যারাগন গ্রুপ, মাহমুদ গ্রুপ ও চেইঞ্জ বাংলাদেশ লিমিটেড। এছাড়া মো. কামরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তিও রয়েছেন এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের অংশীদার হিসেবে।
অনুষ্ঠান শেষে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বেসরকারি উদ্যোগে এটিই হবে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল। উত্তরাঞ্চলের প্রবেশ মুখে এটি সর্বপ্রথম বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখানে বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য সুবিধাসমূহ নিশ্চিত করা হবে। এখানে কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (সিইটিপি), ডরমিটরি, ফাইভ স্টার হোটেল, স্বাস্থ্য সেবা, ডে কেয়ার, বিনোদন কেন্দ্রসহ বাণিজ্যিক এলাকা গড়ে তোলা হবে।
এই অর্থনৈতিক অঞ্চলের সম্ভাবনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভৌগলিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা এই অঞ্চলে বেশি আগ্রহী হবেন। নতুন করে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি যুক্ত হওয়ার পর গ্যাস সঙ্কটও দূর হওয়ার পথে। ফলে সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের একটা উজ্জল ভবিষ্যত দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে সিরাজগঞ্জোর তাঁত শিল্পের জন্য এই অঞ্চলটি হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন পবন চৌধুরী।
সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল লিমিটেডের পক্ষে চেয়ারম্যান এ মতিন চৌধুরী বলেন, এ জোন উন্নয়নের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্নবাসনে প্রায় ১০০ বিঘা জমির ব্যবস্থা রেখে মাষ্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভূমি উন্নয়নে প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করা হয়েছে, সবঠিক থাকলে এ মাসে শেষ নাগাদ ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেজার নির্বাহী সদস্য মো. হারুনুর রশিদ, মোহাম্মদ আইয়ুবসহ সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল লিমিটেডের উদ্যোক্ত ও পরিচালক মাহামুদ হাসান খান, আনোয়ার হোসেন, আমিনুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, মো. নজরুল ইসলাম ও শেখ মনোয়ার হোসেন প্রমুখ।