উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও গত ১২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার থেকে চালু হলো জাতীয় জরুরী সহায়তা নাম্বার ৯৯৯। টোল ফ্রি হিসেবে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে দেশের নাগরিকেরা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স-সেবা নিতে পারবেন। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ।
উন্নত বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই জরুরী সহায়তা নাম্বার চালু আছে অনেক আগে থেকেই। সেদিক দিয়ে আমরা নবীন, তবে দেশে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার বিশেষ করে মোবাইল ফোনের ব্যাপক ব্যবহার সরকারের নতুন এই সার্ভিস আরো সহজলভ্য করবে নাগরিকদের কাছে।
কোনো অপরাধ ঘটতে দেখলে, প্রাণনাশ বা হানির আশঙ্কা দেখা দিলে, কোনো হতাহতের ঘটনা চোখে পড়লে, দুর্ঘটনায় পড়লে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে, জরুরিভাবে অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন হলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাওয়া যাবে। মোবাইল ফোন ও টেলিফোন উভয় মাধ্যমে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা যাবে বিনা খরচে। রাজধানীর ঢাকায় পুলিশের কন্ট্রোল অ্যান্ড কমান্ড সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ সেবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
কিন্তু যে কারণে শিরোনামে আমার প্রশ্ন, তার মূল কারণ আমরা আদৌ এই সেবার জন্য প্রস্তুত কিনা। আমেরিকায় এই ধরণের জরুরী সার্ভিসটির নাম্বার ‘৯১১’। স্কুলের ছোট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই জানেন এই ৯১১ কী, কীভাবে এবং কখন সেটা ব্যবহার করতে হবে। মুলত জরুরী মেডিক্যাল পরিস্থিতি, এ্যাম্বুলেন্স বা অগ্নি নির্বাপণ কাজে ব্যাবহার করার কথা থাকলেও সার্ভিসটির কার্যকারিতা, দ্রুত রেসপন্স করা, বিশেষজ্ঞ সহায়তা আর মানুষের আস্থার কারণে এই সার্ভিসটি এখন আমেরিকার মানুষের ভরসার স্থান। একই কথা বলা যায় কানাডা, সিঙ্গাপুর, ইংল্যান্ড, ফ্রান্সসহ ইউরোপের সব দেশের ক্ষেত্রে। জরুরী মেডিক্যাল পরিস্থিতিতে হেলিকপ্টার পাঠানো থেকে শুরু করে কোন পোষা জীবজন্তু বিপদে পড়লে, কেউ কোথাও সামান্যতম বিপদের আশঙ্কা করলে সেসব দেশে তারা জরুরী নম্বরসমূহে কল করে থাকে। এসব দেশে এই জরুরী সার্ভিস ব্যবহারের জন্য শিশুদের একেবারে ছোটবেলায় এর ব্যবহার পিতামাতা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিখিয়ে থাকে।
এই সার্ভিসের অপব্যবহার যাতে না হয়, কেউ যাতে দুষ্টুমি না করে, দুষ্টুমি করলে কী শাস্তি হতে পারে সেটাও জানিয়ে দেয়া হয় কঠোরভাবে। যার ফলে ওসব দেশে এই সার্ভিসের অপব্যবহার একেবারেই শূন্যের কোঠায়, হতে পারে সেটা মিথ্যা বা প্রতিহিংসার জন্য। কারণ যিনি ফোন করেন তার পরিচয় ছাড়াও লোকেশন বা অবস্থান জানা সহায়তা বা উদ্ধার কর্মীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনও হয় যে কোন দুর্ঘটনায় বা বিপদে পড়া ব্যক্তিটি শুধুমাত্র কলটি করতে পেরেছেন, কথা বলার মত শক্তি বা উপায় তার নেই। অনেক দেশে শুধু জরুরী মেডিক্যাল সার্ভিসের জন্য আরো উন্নত আর ফোনের একটি মাত্র বাটন টিপে সহায়তা চাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এসব দৃশ্য আমরা টেলিভিশন বা সিনেমায় এখন হর হামেশাই দেখে থাকি। আশা করি আমরাও আস্তে আস্তে এসব বিষয়গুলো আমরাও রপ্ত করতে পারবো।
এবার আমার দুটো বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমি মাঝে মধ্যে আমার ফোনে কল বা কোন নম্বর থেকে বার বার মিসকল পেতেই থাকি। বিরক্ত হয়ে কল ব্যাক করার পর জানতে পারি, ফোন নিয়ে একটা শিশু খেলা করছিলো। তাই বার বার কল চলে যাচ্ছে। এটা প্রায়ই হয়। বুঝুন অবস্থাটা। আর একবার আমেরিকায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার সময় দুষ্টুমি করে বললাম। দেখি তো ৯১১ এ কল করে! ব্যাস, সবাই যেন ঝাপিয়ে পড়লো আমার উপর! কেউ কেউ চিৎকার করে উঠলো, খবরদার, বিনা প্রয়োজনে বা দুষ্টুমি করে ৯১১ এ ফোন করলে কিন্তু পুলিশ এক্ষুনি আসবে। বললাম আমাকে পাবে কোথায়! বললো, এদেশের পুলিশ তোমাকে কয়েক মিনিটের মধ্যে খুঁজে বের করে ফেলবে। যেটা বুঝলাম তা হলো এসব জরুরী নাম্বার বা সেবা কিভাবে পেতে হয় বা ব্যবহার করতে হয়।
আমার ধারণা এমন একটা সার্ভিস চালু হওয়ার পর যে বিষয়টা সব থেকে জরুরী তা হলো সাধারণ মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে দ্রুত ও ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করা। না হলে মানুষ তাদের যে কোন সমস্যা বা বিপদে এমনকি কোন দুর্নীতি, অনিয়ম, হয়রানি দেখলে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করবে। বিভিন্ন অফিস, আদালত, হাসপাতালে সঠিক সেবা বা সহায়তা না পেলেও তারা ফোন করবেন ৯৯৯ নম্বরে। এসব কল কিভাবে হ্যান্ডেল করা হবে সেসব বিষয় নিশ্চয়ই পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তারা ভেবেছেন বা এ বিষয়ে ট্রেনিং নিয়েছেন। আশা করছি আমরা ৯৯৯ কে সত্যিকার অর্থেই একটি দ্রুত ও কার্যকর সেবা প্রদান সংস্থা হিসেবে দেখতে পাবো।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)।