বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে নিশ্চিহ্ন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন তৎকালীন চারদলীয় জোটের শাসনকাল দীর্ঘায়িত করতেই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল বলে আদালতে দাবি করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
সোমবার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মোশররফ হোসেন কাজল এ মামলার আইনি দিক থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় এমন দাবি করেন।
রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার এক নাম্বার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে একুশে আগস্টের ওই ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার চলছে।
আইনজীবী মোশররফ হোসেন কাজল বলেন, যারা দেশ পুনরায় পাকিস্তান তথা ১৯৪৭-এ ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল তারাই বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবার হত্যা করেছে। হত্যাকারীরা ৭৫-এর ১৫ আগস্ট শিশু শেখ রাসেলকেও হত্যা থেকে বাদ দেয়নি। সে একইভাবে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যা হাসিনাকে লক্ষ্য করা হয়।
‘তৎকালীন সরকারের ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ হাওয়া ভবনে বসে এ মামলার চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করে। এ ঘটনায় হাওয়া ভবন কার্যালয়ের কর্ণধার তারেক জিয়া সরাসরি সম্পৃক্ত। তারেকের আশ্বাস ও সহযোগিতায় ভয়াবহ ওই হামলা ঘটানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, হাওয়া ভবনসহ ১০টি স্থানে ২১ আগস্ট হামলার ষড়যন্ত্রমূলক সভা ও পরিকল্পনা করা হয়। যাতে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রীসহ তাদের অনুগত প্রশাসনের কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা অনুযায়ী হামলা কারীরা হামলা ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
মোশররফ হোসেন কাজল আরও বলেন, ২১ আগস্ট ঘটনা প্রমাণিত। কারা কারা ষড়যন্ত্র করেছে, অর্থ ও গ্রেনেড দিয়েছে, ঘটনা ঘটিয়েছেন তার বিষয়ে আমরা সাক্ষ্য প্রমাণ দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে তাদের অনেকেই আফগানিস্তান ফেরত জঙ্গি। ২১ আগস্ট হামলা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ও পরিকল্পনা নিয়েই এ ঘটনার ছক করা হয়।
নিজের যুক্তির পক্ষে বিভিন্ন মামলার রেফারেন্স তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা ও অপরাধীদের আড়াল করতে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করা হয়েছে। নিরীহ জজ মিয়াকে সম্পৃক্ত করে নাটক তৈরি করে মামলাকে ভিন্নখাতে নেয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
কাজল তার যুক্তিতর্কে মামলায় অধিকতর তদন্ত কিভাবে করা যায় তার আইনি ভিত্তি তুলে ধরেন। কালও মামলার তারিখ ধার্য রয়েছে। কাল রাষ্ট্রপক্ষে মোশররফ হোসেন কাজল তার অসমাপ্ত যুক্তিতর্ক পেশ করবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
সোমবার মামলার কার্যক্রম শেষে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, মামলায় আজসহ মোট ২৬ কার্যদিবস রাষ্ট্রপক্ষ এবং ৮৯ কার্যদিবস আসামীপক্ষ যুক্তিতর্ক পেশ করেছে। আজ ছিল মামলার যুক্তিতর্ক পেশের ১১৫তম দিন।
তিনি বলেন, এ মামলার অধিকতর তদন্ত বিষয়ে আইনগত ও পদ্ধতিগত ভাবেই করা হয়েছে। মামলার অন্যতম আসামী মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় দফায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার ক্ষেত্রেও কোনে আইনগত ব্যত্যয় ঘটেনি।
এর আগে গত ৫ আগস্ট টানা ৮৯ কার্যদিবসে আসামীপক্ষ তাদের যুক্তিতর্ক শেষ করেছে। এরপর ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী মোশররফ হোসেন কাজল আইনি পয়েন্টে যুক্তিতর্ক পেশ শুরু করেন।
উল্লেখ্য-এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়। আসামীপক্ষে সাক্ষীদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
বিচারের মুখোমুখি থাকা ৪৯ আসামির মধ্যে জামিনে রয়েছেন- বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডি’র সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ মামলার ২৩ আসামী কারাগারে রয়েছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা করছিলেন। সেই সমাবেশে আর্জেস গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ওই হামলায় ২৪ জন নিহত ও দলটির নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন।
নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলায় মারাত্মক আহত হন। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।