মেরুদণ্ডের জটিল রোগে আক্রান্ত বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অলরাউন্ডার চামেলি খাতুনের চিকিৎসায় আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল)।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার পর শুক্রবার চামেলিকে ঢাকায় আনা হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের মাধ্যমে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর শুরু হয়েছে চিকিৎসাও।
পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ফিজিওথেরাপিস্ট দিয়ে চামেলির চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এখন যে অবস্থায় আছেন তাতে দেশেই চিকিৎসা সম্ভব একসময় ব্যাটে-বলে মাঠ মাতানো জাতীয় দল সদস্যের।
চামেলির চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য সচিব ডা. জাহাঙ্গীর হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে জানালেন, ‘প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় চামেলির লিগামেন্টে ও স্পাইনের সমস্যা ধরা পড়েছে। তার স্পোর্টস ইনজুরি ছিল।’
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গনি মোল্লার নেতৃত্বে আট সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলেও জানান জাহাঙ্গীর হোসেন। সেই মেডিকেল বোর্ড দ্রুততর সময়ে চামেলির পরীক্ষা শুরু করেছে এবং আরও পরীক্ষা করবে।
‘ইতিমধ্যে ফিজিওথেরাপিস্ট দিয়ে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আমরা এখন দেখছি তার স্পাইনে টিবি আছে কিনা।’ জানান জাহাঙ্গীর হোসেন।
বর্তমানে চামেলির যে সমস্যাগুলো আছে আরও আগে আসলে সেই সমস্যাগুলো নাও হতে পারত বলে জানালেন তিনি।
চিকিৎসার জন্য চামেলিকে দেশের বাইরে নিতে হবে কিনা এমন প্রশ্নে ডা. জাহাঙ্গীর বললেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি তাতে বলতে পারি দেশেই চামেলির চিকিৎসা সম্ভব।’
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বেসরকারি বিমানের একটি ফ্লাইটে চামেলিকে ঢাকায় আনা হয়। শনিবার জাতীয় দলের সাবেক এ ক্রিকেটার জানালেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ায় তিনি কৃতজ্ঞ।
এর আগে চামেলিকে ঢাকায় পাঠানোর তত্ত্বাবধানে থাকা রাজশাহীর জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চামেলির চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছেন। তার নির্দেশনা মোতাবেক চামেলিকে শুক্রবার সকালে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে আকাশপথে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়।
পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চামেলির সঙ্গে তার বোন, দুলাভাই, ভাবীও ঢাকায় এসেছেন। চিকিৎসার স্বার্থে একজন আনসার সদস্য সার্বক্ষণিকভাবে চামেলির সঙ্গে থাকছে।
আট বছর আগে পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায় চামেলির। সেখান থেকে মেরুদণ্ডের সমস্যা। এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে ডান পায়েও। অবশ হতে চলেছে পা। আনসার ভিডিপিতে চাকরি করেন তিনি। মাসখানেক হল চাকরিতে যেতে পারছেন না।
চামেলির এ দুরাবস্থার কথা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়। তখন তার সাহায্যের আবেদন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছিল চ্যানেল আই অনলাইন।
১৯৯৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলা চামেলি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বলে তখন জানান। ১৫ বছর আগে বোনের ডিভোর্স হয়ে গেছে। মা অসুস্থ। ধারদেনা করে মায়ের চিকিৎসা করাচ্ছেন। আনসার থেকে বেতন পাওয়ার আগ পর্যন্ত নিজে ওষুধ খেতে পারেন না বলেও জানিয়েছিলেন।