শেখ কামাল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেষ্ঠ্য পুত্র। বেঁচে থাকলে এখন যাঁর বয়স হতো ৭১! কিন্তু তিনি বেঁচে ছিলেন মাত্র ২৬ বছরের মতো! আর এই সময়ের মধ্যেই বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রকৃত দেশপ্রেমিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিবাহিনীর সংগঠক এবং সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট থাকা অবস্থায় প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ক্রীড়াপ্রেমী, সংস্কৃতিমনা শেখ কামালের ক্রিকেট ছিলো মজ্জায়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলাতেও অংশ গ্রহণ করেন তিনি।
দীর্ঘদেহী ফাস্ট বোলার ছিলেন কামাল। নিখুঁত লাইন-লেন্থ আর প্রচণ্ড গতির কাছে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যান ধরাশায়ী হয়ে যেতো। শুধুমাত্র বাঙালি ও মুজিবের পুত্র হওয়ার কারণে জুয়েল, রকিবুলদের মতো চরমভাবে অবহেলিত, উপেক্ষিত হয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই তিনি ক্রীড়াবিদ সুলতানা খুকিকে বিয়ে করেন। হাতের মেহেদি শুকানোর আগেই ১৫ আগস্ট সপরিবারে নৃশংসভাবে খুন হন কামাল!
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বহুল আলোচিত বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিতব্য চলচ্চিত্রটিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে থাকছেন কামাল চরিত্রটিও। আর এই চরিত্রের জন্য বিখ্যাত নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল বাংলাদেশ থেকে প্রাথমিকভাবে মনোনীত করেছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা রওনক হাসানকে।
শেখ কামাল চরিত্রটি পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে কয়েক দশক পেছনে ফিরে যেতে হচ্ছে অভিনেতা রওনক হাসানকে। ব্যক্তিগতভাবে অনুসন্ধান করে খুঁজে বের করছেন, যারা শেখ কামালকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন! ‘বঙ্গবন্ধু’ চলচ্চিত্রে সম্ভাব্য ৫০ জন অভিনেতার নাম প্রকাশের পর চ্যানেল আই অনলাইনকে এমনটাই জানালেন অভিনেতা রওনক।
শেখ কামাল চরিত্রটির জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতির বিষয়টি জানিয়ে রওনক বলেন: কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে, শেখ কামালের বিভিন্ন ছবি ও ফুটেজ দেখে এবং এই মুহূর্তে আমার শারীরিক অবস্থা দেখে বুঝেছি, এই চরিত্রটির জন্য আমার অনেকটা ওজন কমাতে হবে।
তিনি বলেন: এছাড়া ইতিহাসের বইয়ে, অনলাইনে শেখ কামাল সম্পর্কে পড়াশোনা করছি। যারা শেখ কামালকে সামনাসামনি দেখেছেন তাদের সঙ্গে কথা বলছি। যেমন ডলি জহুর। আমি তার সঙ্গে কথা বলে শেখ কামাল সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে চেষ্টা করছি। তিনি কীভাবে কথা বলতেন, তাঁর চলা-ফেরা কেমন ছিলো এসব বিষয় জানতে চেষ্টা করছি। আপাতত নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছি। ফাইনাল ইনস্ট্রাকশন এখনো পাইনি, সেটা পেলে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেবো।
শেখ কামাল চরিত্রে অডিশনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে এই অভিনেতা বলেন: প্রথম যখন স্ক্রিন টেস্টের জন্য ডাকা হলো, তখন আমি শ্যাম বেনেগালকে পেয়েছিলাম। এটা আমার সৌভাগ্য। আমার মুখভর্তি দাঁড়ি দেখে তিনি আমাকে দেখে বললেন, ‘তুমি কি এই মুহূর্তে দাড়ি কাটতে পারবে?’ আমি বললাম, অবশ্যই। এরপর দাড়ি কাটার পর উনি খুব সুক্ষ্ণভাবে আমার লুক দেখলেন। প্রাথমিক ভাবে চূড়ান্ত হওয়ার পর পরবর্তী সাক্ষাতে আমার কস্টিউম-এর মাপ নেয়া হয়।
একেতো ‘বঙ্গবন্ধু’কে নিয়ে ছবি, তারউপর স্বপ্নের পরিচালক! তাই রওনকের ছিলো বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। বললেন, ‘শ্যাম বেনেগালের সামনে দাঁড়ানোর বিষয়টি ছিলো আমার জন্য ঘোরগ্রস্তের মতো একটা বিষয়!’
কেন? ‘কারণ অভিনয় জীবনের শিক্ষা শুরু হয় শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ছবি ‘মান্ডি’র নাসিরুদ্দিন শাহ্’র অভিনয় দেখে। আমার প্রথম মঞ্চ অভিনয় ছিলো থিয়েটার আর্টের নাটক ‘প্রহেলিকা’য়। তখন আমার বয়স মাত্র ১৮। তো সেই নাটকের নাট্যকার ও পরিচালক ছিলেন আজিজুস সামাদ ডন ভাই। সেই নাটকে হঠাৎ করেই আমি অন্যতম একটি প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যাই। যার যোগ্যতা আমার একদমই ছিলো না। আজিজ ভাই আমাকে সাহস দিলেন এবং বললেন মান্ডি ছবির নাসিরউদ্দীন শাহ্ এর চরিত্রটা দেখেন। তো সেই ছবি দেখেই আমার চরিত্র নির্মাণের শিক্ষার শুরু!’ -তবে নিজের এই মুগ্ধতার কথা পরিচালককে বলেন নি রওনক!
‘জাগো’ খ্যাত এই অভিনেতা বলেন, কোন চরিত্রে অভিনয় করবো, এগুলো আমি শুরুতে ভাবিই নি। একে তো এই চলচ্চিত্রে অংশ নেয়া মানে, ইতিহাসে নাম লেখানোর মতো একটি বিষয়! আর যখন শুনলাম, চলচ্চিত্রটির পরিচালক শ্যাম বেনেগাল, তখনতো কথায় নেই! তাঁর সামনে দাঁড়াবো, এটাইতো আমার মতো অভিনেতার জন্য পরম পাওয়া!
‘উনার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, শুধু তাই না আমার মুখ ধরে, থুতনি ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেছেন-এতোটুকু তো কল্পনাও করি নি। উনার ছবিতে একটা পাসিং শট দিয়েও যদি অংশ গ্রহণের সুযোগ থাকতো, আমি সেটাই করতাম।’-বলছিলেন রওনক হাসান।
শোনা যাচ্ছে, আসছে ১৮ মার্চ থেকে শুরু হবে ‘বঙ্গবন্ধু’ চলচ্চিত্রটির শুটিং। তারআগে শ্যাম বেনেগালসহ ডিরেক্টোরিয়াল টিমের অন্যান্য সদস্যরা বাংলাদেশে আসবেন ১২ মার্চ। এরপর ‘বঙ্গবন্ধু’ চলচ্চিত্রের জন্য মনোনীত অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে মহড়া দিবেন।