টানা চতুর্থবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে ভ্লাদিমির পুতিন (৬৫) দেশের মেধা লালন ও বিকাশের মাধ্যমে সাফল্য অর্জনের অঙ্গীকার করেছেন।
ক্রেমলিন হলের এক জমকালো অনুষ্ঠানে সোমবার প্রায় ৫ হাজারের মতো অতিথির অংশগ্রহণে শপথ নেন পুতিন। চলতি বছরের ১৮ মার্চের নির্বাচনে জয়লাভের তিন সপ্তাহ পর তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলো।
মস্কোর ক্রেমলিনে অনুষ্ঠিত এবারের শপথ অনুষ্ঠানে ২০১২ সালের মতো দেশের শীর্ষ স্থানীয় অনেককেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। নির্বাচনে পুতিনের পক্ষে কাজ করছেন এমন স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে তার।
রাশিয়ান টিভিতে পুতিনকে ক্রেমলিন অফিস থেকে বেরিয়ে এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ করিডর দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। পরে তিনি ক্রেমলিন আঙ্গিনায় রাশিয়ার নির্মিত লিমোজিন ‘কর্টেজ’ এ চড়েন। এর আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট ও তার সহকারীরা বিদেশী অভিজাত গাড়ি ব্যবহার করত।
এর আগের বছরগুলোতে বিশাল মোটরশোভাযাত্রায় মস্কো ঘুরে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আসতেন প্রেসিডেন্ট।
পুতিন বলেন, আমরা আমাদের পিতৃভূমির গর্ব পুনরুজ্জীবিত করেছি। রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে রাশিয়ার শক্তি ও সমৃদ্ধি বহুগুণ বাড়াতে আমি সম্ভব সবকিছুই করবো।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের সাফল্য দরকার। নতুন ও প্রগতিকে স্বাগত জানানো মুক্ত সমাজের মাধ্যমেই তা সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস।
তিনি বলেন, অতীতের রাশিয়া নানা প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও ‘ফিনিক্সের মতো’ আবার জেগে উঠেছে।
প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৮ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা পুতিনের বিরোধীরা তার শাসনকালকে রাশিয়ার জার বা সম্রাটের শাসনামলের সাথে তুলনা করেন।
২০২৪ সালে যখন পুতিনের চতুর্থ মেয়াদ শেষ হবে তখন তার শাসনকাল হবে ২৪ বছর দীর্ঘ। শাসনকাল দীর্ঘ হলেও সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিনের ৩১ বছরের শাসনকাল থেকে তা অনেকটাই পিছিয়ে। কয়েকজন রুশ জার, দ্বিতীয় আলেকজান্ডার (২৬ বছর) এবং প্রথম নিকোলাস (৩০ বছর) এর শাসনকালের চেয়েও তা কম।
‘তিনি আমাদের জার নন’ স্লোগান তুলে পুতিন বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল থেকে শনিবার গ্রেপ্তার হন প্রধান বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি।
বেশ কয়েকদিন ধরে রাজধানী মস্কোসহ রাশিয়ার অন্যান্য শহরে দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে পুতিন বিরোধীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে কয়েকবার। নির্বাচনে ৭৬ শতাংশ ভোট পেলেও দেশ জুড়েই তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
পুতিনের শপথ নেবার সময়ও সহিংসতার আশঙ্কায় আগে থেকেই সতর্ক অবস্থান নেয় পুলিশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে দেশটির ১৯টি শহর থেকে এক হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের অর্ধেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন রাজধানী মস্কো থেকে।
২০০০ সালে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন পুতিন। এরপর ২০০৪ সালে তিনি আবার নির্বাচিত হন। একটানা দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট না থাকার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
তখন নিজের ঘনিষ্ঠ মিত্র দিমিত্রি মেদভেদকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী করে এনে নিজে তার অধীনে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন। তবে দুজনের মধ্যে পুতিনের হাতেই বেশি ক্ষমতা ছিল বলে সন্দেহ পর্যবেক্ষকদের।
২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের নির্বাচিত হন পুতিন। এই সময় তার প্রেসিডেন্ট মেয়াদকাল হয় ছয় বছরের। চলতি বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবার জয়ী হন তিনি।
২০২৪ সালে চতুর্থ মেয়াদ মেয়াদ শেষ করতে পারলে ২৪ বছর রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকার গৌরব অর্জন করবেন তিনি, যা হবে সোভিয়েত আমলের নেতা জোসেফ স্ট্যালিনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সময় রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড।