চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামে কয়েকজনের বর্ণবাদী মন্তব্যে ফেসবুক প্রতিক্রিয়ায় আশংকার কথা জানিয়েছেন সমাজতত্ত্ববিদ, গবেষক, লেখক আমিনুল ইসলাম।
তিনি লিখেছেন: এইবার চট্টগ্রাম টেস্ট বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে আইসিসি। আরেকবার এই রকম হলে চট্টগ্রাম টেস্ট বন্ধ করে দেয়া হবে! দক্ষিণ আফ্রিকার এক কালো খেলোয়াড়কে বাংলাদেশি সমর্থকরা “নিগ্রো” বলে গালি দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকানরা এই নিয়ে ম্যাচ রেফারিকে নালিশ করেছে। ম্যাচ রেফারি জানিয়েছেন আরেকবার এই ধরনের ঘটনা ঘটলে চট্টগ্রাম টেস্ট বন্ধ করে দেয়া হবে।
তিনি লিখেছেন, একটা বিষয় আপনাদের ক্লিয়ার করি। “নিগ্রো” এবং “ব্ল্যাক” শব্দ দুটো ব্যবহারের মাঝে খানিক পার্থক্য আছে। বাংলাদেশের মানুষ কালো কেউকে দেখলেই “নিগ্রো” বলে আখ্যায়িত করে। এটা ঠিক না। ৬০-এর দশকের পর থেকে “নিগ্রো” শব্দটির ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ এর সাথে রয়েছে শত বছরের দাস প্রথা, অত্যাচার ও ডিস্ক্রিমিনেশনের ইতিহাস। তাই এই শব্দটি সভ্য সমাজে এখন আর ব্যবহার করা হয় না।
‘এখন যদি কেউ নিতান্তই “কালো” বুঝাতে গিয়ে কিছু বলতে চায় তাহলে বলে “ব্ল্যাক আমেরিকান” কিংবা “ব্ল্যাক ব্রিটিশ” বা “ব্ল্যাক আফ্রিকান!” আর আপনি যদি “নিগ্রো” বলেন তাহলে সেটি গালির পর্যায়ে বর্ণবাদী মন্তব্য হয়ে যায়। আশা করছি এইবার বোঝা গেছে “নিগ্রো” শব্দটি কতোটা খারাপ অর্থে ব্যবহার করা হয়,’ লিখেছেন আমিনুল।
এতো গেলো একটা দিক, মন্তব্য করে তিনি বলেছেন: আমি দীর্ঘদিন ধরে লিখে চলেছি আমাদের সাম্প্রদায়িক ও বর্ণবাদী মানসিকতার কথা! আপনারা বলেন, এই গুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এই গুলো নিয়ে লেখার কি আছে! একবার স্টেডিয়ামে গিয়ে ভালো করে শোনার চেষ্টা করবেন আপনার আশপাশের মানুষগুলো কি বলছে, কেমন মন্তব্য করছে! সাকিবের বউকে কেউ উদ্ধার করে ছাড়ছে, কেউ আবার তামিমের বল খুঁজে পাচ্ছে না বউয়ের আচলে থাকায়; কেউ বলছে সৌম্য তো হিন্দু কোটায় দলে আছে, কেউবা আবার বলছে এই খেলোয়াড়রা তো টাকা উড়ায় বেশ্যা পল্লীতে গিয়ে, এইগুলাকে পারিশ্রমিকের টাকা না দেয়াই ভালো!
‘আমি খুব ভদ্র ভাষার কিছু মন্তব্য আপনাদের বললাম। অন্য মন্তব্যগুলো বলার রুচি আমার নেই, তবে আপনারা খেলোয়াড়দের ফেসবুক পেজে ঘুরলেই বুঝে যাবেন লোকজনদের রুচি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। এই ব্যাপারগুলো যদি এখনই বন্ধ না করা হয়, তাহলে কেবল দর্শকদের বিরূপ আচরণের কারণে আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে।’
তার পোস্টটি এভাবে শেষ করেছন আমিনুল: চট্টগ্রাম টেস্টের আরো তিন দিন আছে; এই তিন দিনের মাঝে কোনো দর্শক যদি এই ধরনের মন্তব্য আবার করে বসে, তাহলে আমাদের ক্রিকেটের গত কয়েক মাসের অবদান সম্পূর্ণ ম্লান হয়ে যাবে। এটি মনে রাখবেন, এক গ্লাস দুধে, এক ফোঁটা লেবুর রস পড়লেই কিন্তু দুধ নষ্ট হয়ে যায়!