বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সিআরবি মোড় থেকে টাইগার পাস, কদমতলী ও জিএম বাংলোমুখী রাস্তার দু’পাশে শতবর্ষী রেইন ট্রি ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি রয়েছে। যেগুলো ছায়া, অক্সিজেনের পাশাপাশি নগরীর শোভা বর্ধন করে আসছে, যা চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ হিসেবেই পরিচিত।
সাম্প্রতিক সময়ে এই এলাকায় বড়সড় একটি হাসপাতাল নির্মাণের লক্ষ্যে ওইসব গাছ কাটার প্রক্রিয়া চলছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের এই পদক্ষেপ নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিক্ষোভ ও সামাজিক মাধ্যমে জাতীয়ভাবে সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
চট্টগ্রামের সিআরবি ভবনটি ও এর আশেপাশের গাছগুলোর রয়েছে ঐতিহাসিক নানা গুরুত্ব। ভবনটি দেশের ব্রিটিশ বা কলোনিয়াল স্থাপত্যের নিদর্শনের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপত্যকলা। যা স্থাপত্য কিংবা ইতিহাসের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা ও গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এছাড়া সংবিধানের ২য় ভাগের ২৪ ধারা অনুযায়ী ‘ঐতিহ্য ভবন’ ঘোষণা করে এই এলাকাটিকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই অবস্থায় ওই স্থানে হাসপাতাল তৈরির প্রেক্ষাপটে কোনো ধরণের পরিবেশগত ক্ষতি হলে তা হবে সংবিধানের লঙ্ঘন।
স্থানীয় চট্টগ্রামবাসী ওই এলাকায় মুক্ত বাতাসে হাটাহাটি কিংবা ঘুরতে আসে, এছাড়া আশেপাশের পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রাণির আবাস। গত কয়েক বছর ধরে ডিসি হিলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় পহেলা বৈশাখসহ নানা আয়োজন হয় সিআরবি শিরীষ তলায়।
ওই এলাকায় ৬ একরের কমবেশি জমিতে হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) সভায় গত ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট নীতিগত সিদ্ধান্ত পাশ হয়। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি পিপিপি প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয় সিসিইএ সভায়। এরপর গত বছরের ১৮ মার্চ ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের সাথে সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তারপর চলতি বছরের শুরুতে নির্ধারিত জমির সামনে প্রকল্পের একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়। বিষয়টি জনগণের চোখে পড়ার পরেই শুরু হয় ক্ষোভ বিক্ষোভ। আমরাও এই উদ্যোগে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় বড় উন্নয়ন ও অবকাঠামো বিষয়ক কাজে পরিবেশের নজিরবিহীন ক্ষতি হতে দেখা যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে। এছাড়া লাগামহীন বায়ুদূষণ, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও কারখানার বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে উঠছে পরিবেশ। চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকার সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপ আরেকটি বড় নেতিবাচক উদাহরণ হতে যাচ্ছে। আমাদের আশাবাদ, পরিবেশ ও জনগণের দাবিকে মাথায় রেখে ওই এলাকার বাইরে ওই ধরণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় কিনা, তা দেখবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ পরিবেশ অধিদপ্তর। আমাদের আরও আশাবাদ, সিআরবির শতবর্ষী গাছগুলো বেঁচে থাকুক ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে।