দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা আর একঘেয়েমি মানুষকে প্রায়ই অস্থির করে তোলে। তখন সহজে আর কাজে মন বসে না। কিছুই করতে ইচ্ছা করে না। কোনো এক পর্যায়ে আমরা বলেই বসি, ‘কোথাও থেকে ঘুরে আসলে ভালো লাগতো।’
তবে বেড়ানো মানে তো আর শুধু গেলাম আর এলাম নয়। কীভাবে গেলাম-এলাম, কোথায় কীভাবে থাকলাম, কী খেলাম, আনন্দময় ভ্রমণের জন্য এ সবই খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে তা যদি হয় কোনো সৌখিন মানুষের বিলাসবহুল আনন্দ ভ্রমণ।
আপনি যদি এমন কেউ হয়ে থাকেন, যিনি খোঁজ করছেন সবচেয়ে বিলাসবহুল থাকার জায়গা, তাহলে ঘুরে আসুন আয়ারল্যান্ডের অ্যাশফোর্ড হোটেলে। ট্রাভেল এজেন্টরা যাকে বলেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ হোটেল!
অ্যাশফোর্ড ক্যাসল ১৩ শতকের একটি আইরিশ প্রাসাদ, যাকে পরে বিলাসবহুল পাঁচ তারা হোটেলে রূপান্তরিত করা হয়। পশ্চিম আয়ারল্যান্ডে ৩৫০ একর জমির উপর স্থাপিত এই হোটেলকে ট্রাভেল এজেন্টদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ভারতুসো বিশ্বের শ্রেষ্ঠ হোটেলের পুরস্কার দিয়েছে।
আয়ারল্যান্ডের প্রাচীনতম প্রাসাদগুলোর একটি অ্যাশফোর্ড। সম্প্রতি ৫ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে সংস্কার করার পর প্রাসাদটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম লেক লাফ করিব’র তীরে অবস্থিত মধ্যযুগীয় প্রাসাদটিতে রয়েছে ৮২ টি বিশালাকার গেস্ট রুম। যার মধ্যে সাধারণ গেস্ট রুমের এক রাতের ভাড়া ৩৫০ পাউন্ড। আর প্রেসিডেন্সিয়াল সুইটের ক্ষেত্রে তা ২ হাজার পাউন্ড। অর্থাৎ সেখানে ঘুমটাও দামি!
অ্যাশফোর্ডের জুনিয়র সুইটের বাথরুমেও আছে অসাধারণ মানের বাথটাবসহ অন্যান্য টয়লেট্রিজ সামগ্রী। বিখ্যাত সব সুগন্ধি প্রস্তুতকারী কোম্পানির কাছ থেকে বিশেষভাবে তৈরি সাবান থাকে বাথরুমগুলোতে।
অতিথিদের বিনোদনের জন্য অ্যাশফোর্ড ক্যাসলে সম্প্রতি যোগ হয়েছে ৩২ আসনের সিনেমা হল এবং বিলাসী বিলিয়ার্ড রুম।
পাশাপাশি রয়েছে লেকে মাছ ধরা, টার্গেট প্যাকটিস, তীরন্দাজীর সুযোগ।
অ্যাশফোর্ডে অতিথিদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সাজানো রয়েছে বিলাসবহুল বার। ১৮ শতকে বারটি বানানো হয় তৎকালীন প্রিন্স অব ওয়েলস’র সম্মানে। পরে তিনিই হন রাজা পঞ্চম জর্জ।
প্রাসাদের সবচেয়ে পুরনো অংশটিতে রয়েছে প্রাচীন আমলের বিশাল ফায়ারপ্লেস, রয়েছে উঁচু ছাদ। মেঝে থেকে ছাদ পর্য ন্ত জানালা দিয়ে দেখা যায় লাফ করিব। এছাড়াও সেখানকার ঘরগুলো দামি পোর্ট্রেট, রাজকীয় খাট আর ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানো।
১২২৮ সালে প্রাসাদটির আসল মালিক ছিলো অ্যাংলো-নরম্যান দ্যু বারগো পরিবার। এরপর বেশ কয়েকবার এর মালিকানা পাল্টেছে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত বহু বিখ্যাত ব্যক্তি ও পরিবার অ্যাশফোর্ড ক্যাসলে বেড়াতে এসেছেন। তাদের মধ্যে রাজা পঞ্চম জর্জের আগমনের সম্মানে ১৯০৬ সালে প্রাসাদে একটি আলাদা ডাইনিং রুম বানানো হয়, যার নামকরণ করা হয় রাজার নামে।
পরবর্তীতে এসেছেন জন ওয়েন, মৌরিন ও’হারা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট রনাল্ড রিগ্যান (প্রেসিডেন্সিয়াল সুইটের নাম তার নামে রাখা হয়), ব্রিটিশ ব্যান্ড বিটলসের স্টার জন লেনন এবং ব্র্যাড পিটের মতো ব্যক্তিরা।
অ্যাশফোর্ডে এসে প্রিয় মানুষটিকে জীবনসঙ্গী হওয়ার প্রস্তাব দিতে চাইলেও তার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। প্রাসাদের পোষা পেঁচা ডিঙ্গল উড়তে উড়তে ঠিক প্রোপোজ করার সময়ে নিয়ে আসবে বিয়ের আংটি।
এছাড়াও এতে রয়েছে দেশটির প্রথম বাজপাখি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে অতিথিরা চাইলে পোষা বাজপাখিগুলোকে ওড়ানোর প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।
অ্যাশফোর্ড ক্যাসলের মহাব্যবস্থাপক নাইয়াল রোচফোর্ড বলেন, অ্যাশফোর্ড তার অতিথিদের শ্রেষ্ঠ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। পাশাপাশি এখানে হোটেল কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নেরও সুযোগ রয়েছে, যেনো অ্যাশফোর্ড অতিথিদের ভ্রমণ আরো আনন্দময় হয়।