যখন শ্রীলঙ্কা সফরের কথা চলছিল, প্রশ্ন উঠেছিল সাদা পোশাকে প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে। শেষপর্যন্ত সফরটি পিছিয়ে যাওয়ায় রক্ষা! সেই সফর না হওয়ার হতাশা কাটাতে ঘরোয়া ক্রিকেটে ধুম ধাড়াক্কা আয়োজনে করা হল ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্ট। আড়ালেই থেকে গেল লাল বলের ক্রিকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের খরা কাটাতে বাংলাদেশে এলো দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল! স্বাগতিক ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসের মাত্রায় লাগল দোলা।
স্কিল-ফিটনেসকে যে আত্মবিশ্বাস দিয়ে লাগামবন্দি করা সম্ভব নয়, চট্টগ্রাম টেস্টের পর অন্তত এতটুকু বোধগম্য হবে মুমিনুল হকের দলের। দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের জন্য যথার্থ প্রস্তুতি ছাড়া ‘অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী’ প্রবাদের মতো পাঁচদিনের টেস্ট ক্রিকেট খেলতে নামা যে ঝুঁকিপূর্ণ, সেটা হয়ত আরও বেশি করে টের পাচ্ছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা।
অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস নাকি ভুল সিদ্ধান্ত? এক বছরের কাছাকাছি সময় পর কোনরকম চারদিনের ম্যাচ খেলা ছাড়াই টেস্টে নেমে যাওয়া, সবকিছুর পরিণামই কি ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারি দলের কাছে এমন হার আনল?
চট্টগ্রাম টেস্টের শেষদিনে সাকিব আল হাসানকে খুব মিস করেছেন সতীর্থরা। ৩৯৫ রান লক্ষ্য দেয়ার পরও ৩ উইকেটে হেরে যাওয়া, সাকিব বল হাতে নামতে পারলে হয়ত অন্যরকম হলেও হতে পারত! তিনি বল হাতে নামতে পারেননি ম্যাচের মধ্যে পাওয়া চোটে।
করোনায় আন্তর্জাতিক সূচি বিপর্যয়ের ফাঁকটাতে জাতীয় ক্রিকেট লিগ কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগও আয়োজন করা সম্ভব হয়নি মহামারীর কারণেই। এমনকি উইন্ডিজের বিপক্ষেও একটা চারদিনের ম্যাচের ব্যবস্থা ছিল না বিসিবির সূচিতে। একটা তিনদিনের ম্যাচ অবশ্য ছিল টেস্ট সিরিজের আগে, তাতে একাদশের কজনই বা ঝালিয়ে নিতে পেরেছেন নিজেকে। তাতে একপ্রকার সরাসরি টেস্ট খেলতে নেমে যাওয়ার আগে ক্রিকেটাররা জানতে পারেননি কোথায় ঘাটতি রয়ে গেছে দীর্ঘ করোনা বিরতির সময়টাতে। দীর্ঘ পরিসরের জন্য ফিটনেসের অবস্থাই বা কি?
ফিটনেস অবস্থা যে যাচ্ছেতাই, শেষদিনে ফিল্ডিংয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর চোট-বিকৃত মুখ দেখে কিছুটা বোঝা গেল। সাকিব তো আগেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েছেন প্রথম ইনিংসে ব্যাট আর মাত্র ৬ ওভার বল করে। মুমিনুল আঙুল নিয়ে ভুগলেন। লিটন কখনও আঙুল পরিচর্যা, কখনও খোঁড়ালেন। দল যখন হারছিল, ম্যাচের শেষদিকে তামিমকেও দেখা গেল মাঠের বাইরে বসে থাকতে। পরামর্শের জন্য সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম পর্যন্ত ছোটাছুটি করতে হল অধিনায়ক মুমিনুলকে।
‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’ পরিস্থিতির মতো মুমিনুলও বুঝতে পেরেছেন, তার দলের বড় ভুল ছিল একটিও চারদিনের ম্যাচ না খেলা। ম্যাচ শেষে খানিকটা আক্ষেপ নিয়েই বললেন, ‘এক বছরের বেশি সময় ধরে চারদিনের ম্যাচ না খেলে টেস্ট খেলতে নামা, বেশ কঠিন!’
ম্যাচের চারদিন লাগামটা স্বাগতিকদের হাতেই ছিল, শেষদিনে কেবল ছড়ি ঘুরিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই একদিনের অল্প চাপেই নড়বড়ে হয়ে গেছে টাইগারদের আত্মবিশ্বাস। হয়েছে ভুলের পর ভুল। ফিল্ডিংয়ে ভুল, ক্যাচিংয়ে ভুল, রিভিউয়ে ভুল! এক বছর সাঁতারের প্রস্তুতি না থাকলে সাগরে ফেলে দিলে যা হয়, বস্তুত সেটাই হয়েছে সাগরিকায়। জেতার জন্য সবকিছুই ঠিকঠাক করতে থাকা এক টেস্টে শেষপর্যন্ত কুপোকাত!