প্রচণ্ড রোদ, অসহ্য গরম আর অবিরাম ঘাম নিয়েই কাটাতে হয় গ্রীষ্মকালটা।এই সময়ে শরীর হয়ে পড়ে পানিশূন্য। সকলের এই রোদ, হঠাৎ বৃষ্টি, আর ঘেমে ঘেমেই কাজকর্ম সারতে হয় মানুষকে। অনেক সময় ঘরের বাইরে থাকাকালীন মেলে না খাবার পানি, টয়লেট ব্যবস্থা। এই সময়টাতে শরীরে নানা ধরণের সমস্যা দেখা যায়।এই সমস্যাগুলোর মধ্যে ভয়াবহতম একটি হচ্ছে কিডনিতে পাথর।
ডাক্তাররা বলেন এই সময়টাতে তাপদাহ এবং শুষ্কতার জন্য শরীরে ডিহাইড্রেশন দেখা যায়। এর ফলে শরীরের মিনারেলস গুলো জমে কিডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে। আর একবার যার কিডনিতে পাথর হয় তার শরীরে নতুন করে আরো পাথর তৈরির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ফলে একটু সচেতনতার মাধ্যমেই এই সমস্যা থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায়। এর জন্য প্রয়োজন কিছু নিয়মিত খ্যাদ্যাভ্যাস।
ডাক্তাররা বলেন, কিডনি সুস্থ রাখতে দিনে অন্ততপক্ষে ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এবং এবং উচ্চমাত্রার চিনি সমৃদ্ধ সকল ধরণের কোলা, সোডা বা এ জাতিয় পানীয় থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। বেশি মিষ্টি জাতীয় খাবারও কিডনিতে পাথর জমতে সাহায্য করে।
উচ্চমাত্রার প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন গরু, খাসি, মুরগির মাংস এমনকি মাছ খাবার পরিমানও কমিয়ে আনতে হবে। ডাক্তারদের মতে দিনে গ্রহণযোগ্য প্রোটিনের মাত্রা হচ্ছে ১২ আউন্স।
গবেষণায় দেখা গেছে অধিকাংশ বা বলতে গেলে ৮০ শতাংশ কিডনির পাথর হচ্ছে ক্যালসিয়াম অক্সালেটের গঠণ। যাদের এই ধরণের পাথর আগেও কিডনিতে দেখা গিয়েছিলো তাদেরকে বিশেষজ্ঞরা পরিমিত পরিমানে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।এছাড়াও স্বল্প সোডিয়াম যুক্ত খাবার এবং বেশি বেশি ফল এবং সবজি খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
যাদের আগে অক্সালেট গঠিত কিডনি পাথর হয়েছিলো তাদের কি পরিমাণে অক্সালেটযুক্ত সবজি খেতে হবে তা নিয়ে ডাক্তারদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। এ নিয়ে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের চিকিৎসক গ্যারি কারহান বলেন, আলু, রেডচিনি, শাক এবং নির্দিষ্ট কিছু ধরণের বাদাম জাতীয় খাবার যেগুলোতে অক্সালেটের পরিমান বেশি থাকে সেগুলো তাদের পরিহার করাই উচিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য কিডনিতে দুই ধরণের পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেশি।একটি হচ্ছে ক্যালসিয়ম ফসফেট স্টোন এবং ইউরিক এসিড স্টোন। আরো এক ধরণের বিরল প্রজাতির পাথর রয়েছে যা স্ট্রাভাইট স্টোন নামে পরিচিত। এটি প্রসাব নালীতে সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।
ডায়াবেটিকজনিত সমস্যা নিয়ে বেশ কমই জানা গেছে। ডাক্তার কারহান যাদের মনে করেন, যাদের ক্যালসিয়াম ফসফেট স্টোন এবং ইউরিক এসিড স্টোন এর আগে হয়েছিলো তাদের স্বল্প মাত্রার সোডিয়াম এবং ফসফরাসসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
পটাশিয়াম সাইট্রেট জাতীয় ওষুধ সেবনের মাধ্যমে ইউরিনের অম্লতা কমিয়ে ইউরিক এসিড স্টোনের জন্মানো রোধ করা যায়।
ডাক্তারেরা বলেন, যাদের বংশে এর আগে কিডনি পাথর সমস্যা দেখা গেছে তাদের এই সমস্যায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি। তার পরও এই গরমে ধরণের সমস্যা তৈরির ঝুঁকি বেশি। ফলে দরকার একটু বাড়তি সচেতনতা এবং একটু নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস। তাহলেই নিজেকে সুস্থ রাখাটা অনেকটাই সম্ভব।