‘বই পড়ি স্বদেশ গড়ি’ এমন প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রথমবারের মতো নানা আয়োজনে সোমবার সারাদেশে পালিত হলো জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। জাতীয় গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য, দেশের সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যেসব গ্রন্থাগার রয়েছে, সেগুলোর কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করা। গত বছর মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে প্রতিবছরের ৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গ্রন্থাগারের অপরিসীম গুরুত্বের কথা আমরা প্রত্যেকেই জানি। এ জন্য গ্রন্থাগারকে বলা হয়, অতীত এবং বর্তমানের মধ্যে জ্ঞান, শিক্ষা ও সংস্কৃতির সেতুবন্ধন। মানব সভ্যতায় যুগ যুগ ধরে গ্রন্থাগার সেই সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করে গেছে বা এখনো যাচ্ছে। তবে যুগের কালানুক্রমিক পরিবর্তনের সাথে গ্রন্থাগারের ওই ভূমিকাতেও এসেছে নানা রকম পরিবর্তন। বিশেষ করে ইন্টারনেটের যুগে গ্রন্থাগারের পরিধি আর চার দেয়ালের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। একটি মাত্র ক্লিকেই বিশ্বের বহু দেশের জাতীয় গ্রন্থাগারের সংগ্রহশালায় রাখা লাখ লাখ বই, পুস্তক, গবেষণাপত্র চলে এসেছে হাতে মুঠোয়। আমাদের দেশেও কোনো কোনো গ্রন্থাগার ডিজিটালাইজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে তা অনেকটাই সীমিত আকারে। সে যাইহোক, এটা কম বা বেশি হতেই পারে। কিন্তু এটা নিশ্চিত করে বলাই যায়, দেশে এক সময় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল; তাতে এখন ভাটা পড়েছে। এমনকি অনেকের নিজের বাসা বা বাড়িতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে যে গ্রন্থাগারগুলো গড়ে তোলা হতো সেখানেও আর সুখবর নেই। আর সরকারি গ্রন্থাগারগুলোর বেহাল দশার কথা আমরা নাই বা বললাম। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না দিয়েও বলা যায়, মানুষের বইপড়ার অভ্যাস দিন দিন কমছে। আর এর পেছনে সবচেয়ে বড় দায় পর্যাপ্ত গ্রন্থাগার না থাকা। কারণ ছোট বেলা থেকে পাঠের অভ্যাস গড়ে না উঠলে বড় বেলায় মানুষকে গ্রন্থাগারমুখি করা কঠিনতম বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আরেকটা কারণও এর পেছনে কম ভূমিকা রাখছে না। তা হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ভিত্তিক পড়াশুনা। এসব প্রতিষ্ঠান যে সিলেবাস তৈরি করে, শিক্ষার্থীদেরকে বাধ্য করা হয় তার প্রতিটি পাতা অনুসরণ করে চলতে। এই অবস্থায় আমরা মনে করি, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার স্থাপনের পাশাপাশি সামাজিকভাবে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই বই পড়ার মাধ্যমে স্বদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণ হবে। জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস যেনো আনুষ্ঠানিকতার ভেতন সীমাবদ্ধ না থেকে সারাদেশে এর কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয় এই প্রত্যাশাই করি আমরা।