থাইল্যান্ডে গুহায় দু’সপ্তাহ ধরে আটকে পড়ে থাকা ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের তরুণ কোচকে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় রোববার সকাল ১০টার দিকে উদ্ধারকর্মীদের একটি দল গুহায় প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে থাই কর্তৃপক্ষ।
উদ্ধার অভিযানের অপারেশন চিফ হিসেবে দায়িত্বরত চিয়াং রাইয়ের গভর্নর নারংসাক ওসোতানাকর্ন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, অভিযান শুরুর আগে গুহার প্রবেশপথ ও তার আশপাশ থেকে জরুরি নয়, এমন সবাইকে সরিয়ে দেয়া হয়। শুধু রয়ে যায় নৌবাহিনীর অভিজ্ঞ ডুবুরি দল, মেডিক ও নিরাপত্তা বাহিনী।
উদ্ধার অভিযানে ১৩ জন বিদেশি এবং ৫ জন তাই নেভি সিলের ডুবুরি রয়েছেন। এছাড়া উদ্ধার প্রক্রিয়ায় দেশ-বিদেশের এক হাজারেরও বেশি মানুষ কাজ করছেন।
উদ্ধারের সম্ভাব্য সময়
একেবারেই কোনো সমস্যা না হলেও আটকে পড়াদেরকে উদ্ধার করে প্রথমজনকে বের করে আনতে আনতে অন্তত স্থানীয় সময় রাত ৯টা বাজবে (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা)।
উদ্ধার চেষ্টায় কোনো রকম ঝুঁকি নেয়া যাবে না। তাই একজন একজন করে আটকদের বের করা হবে। এভাবে একে একে সবাইকে বের করার চেষ্টায় দু’তিন দিন লাগতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
ক্ষুদে ফুটবলার ও তাদের কোচ এক্কাপল চান্তাওয়াং এবং তাদের সবার পরিবারকে উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
উদ্ধার প্রক্রিয়া
ছেলেদেরকে ঠিক কীভাবে গুহার ভেতর থেকে বের করে আনা হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে মনে করা হচ্ছে কিছু অংশে তাদেরকে ডুবসাঁতার দিতে হবে এবং যেখানে পানির স্তর তুলনামূলক নিচে সেখান দিয়ে তারা হেঁটে পার হবে।
ফুটবল টিম ও তাদের কোচকে ভেতর থেকে বের করে আগে প্রবেশপথের প্রায় ৭শ’ মিটার ভেতরে একটি চওড়া অংশে তাদের বিশ্রাম করতে দেয়া হবে। এটাকেই গত দু’সপ্তাহ ধরে রেসকিউ বেস হিসেবে ব্যবহার করে আসছে ডুবুরি দল।
সেখান থেকে বাকি রাস্তা তুলনামূলক সহজ। রেসকিউ বেস থেকে হেঁটে বের করে ১৩ জনকে সোজাসুজি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আপাতত।
উদ্ধার অভিযানে ঝুঁকি
উদ্ধার অভিযানের প্রথম অংশটি সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ গিরিপথের ভেতরের দিকের বেশিরভাগ অংশই পানির নিচে পুরোপুরি ডুবে আছে।
কখনোই ডাইভিং সরঞ্জাম ব্যবহারের অভিজ্ঞতা না থাকা ছোট ছোট ছেলেদের ভেতর থেকে বের হওয়ার চেষ্টায় টানা অনেকটা সময় পানির নিচে কাটাতে হবে। অভিজ্ঞ ডুবুরিরা সঙ্গে থাকলেও বিশাল ঝুঁকির ব্যাপারটা কিছুতেই এড়ানো যাচ্ছে না।
এর আগে আটকে পড়াদের অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় থাই নেভি সিলের সাবেক ডুবুরি সামার্ন কুনানের মৃত্যু হয়। এর ফলে কিশোরদের বের করে আনার প্রক্রিয়াটা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা আরও গুরুতরভাবে সবার সামনে উঠে এসেছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে এখনই উদ্ধারের ‘আদর্শ সময়’
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুসারে, গত ক’দিন বৃষ্টি খুব কম হলেও রোববার থেকে আবারও ভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। এ পর্যন্ত গুহার ভেতর থেকে সেচ করে ১২ কোটি ৮০ লাখ লিটারেরও বেশি পানি বের করা হয়েছে। বর্তমানে গুহার ভেতরে পানির যে স্তর তাতে এখনই আটকে পড়া ছেলেদের ‘আদর্শ সময়’ বলে মন্তব্য করেছেন গভর্নর নারংসাক।
তাই আবার বৃষ্টি শুরু হয়ে পানি বেড়ে যাওয়ার আগেই উদ্ধারকাজ শুরু করা হয়েছে।
যেভাবে নাটকীয় বিপর্যয়ের শুরু
গত ২৩ জুন দুপুরে থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে ফুটবল প্র্যাকটিস শেষে ১২ কিশোরের দলটিকে নিয়ে ঘুরে দেখার জন্য চিয়াং রাই শহরের ন্যাশনাল পার্ক লাগোয়া জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ি এলাকার লুয়াং নাং নন গুহায় ঢুকেছিলেন কোচ এক্কাপল চান্তাওয়াং।
তারপর থেকে আর তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
প্রচুর বৃষ্টির কারণে গুহার ভেতর পানি জমে বন্যা হয়ে গেলে গুহায় আটকে পড়েছিল দলটি। দফায় দফায় উদ্ধার চেষ্টার পরও তাদের কোনো চিহ্ন না পেয়ে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে পড়ছিল।
এর মাঝে চারপাশ থেকে পানি কমিয়ে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে উদ্ধারকারী দল। টানা ৯ দিন ধরে পাগলের মতো উদ্ধার অভিযান চালিয়ে অবশেষে তাদের খুঁজে পান থাই নেভি সিলের বিশেষ প্রশিক্ষণ পাওয়া ডুবুরিরা।