সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশানের ডিসিসি মার্কেটে লাগা ভয়াবহ আগুনে পুরো মার্কেটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাতে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রাতভর চেষ্টা করেও আগুন নেভাতে পারেনি। বরং তা আরো ছড়িয়েছে। গুলশান ও আশেপাশের অভিজাত এলাকার ক্রেতাদের প্রয়োজন অনুসারে ডিসিসি মার্কেটের বেশিরভাগ দোকান মূলত দামী ও অভিজাত পণ্যসামগ্রী সাজানো। ওই মার্কেটের ছোট-বড়-মাঝারি ব্যবসায়ীদের প্রায় সবকিছু হারিয়ে আহাজারি করতে দেখা গেছে। আগুন লাগার একপর্যায়ে মার্কেটের কাঁচাবাজার অংশের ভবন ধসে পড়ে এবং পরে আরো একাধিকবার ধসের ঘটনা ঘটে। পানির স্বল্পতা, রাস্তায় যানজট ও স্থানীয় জনতার ভিড়ের কারণে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়েছে, যা রাজধানীর যেকোনো অগ্নিকাণ্ডের সময়ের একটি সাধারণ-নিয়মিত সমস্যা হিসেবে দেখা যায়। এছাড়া আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো, বিভিন্ন সময়ের অগ্নিকাণ্ড নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাশকতা তা নিয়ে বিভিন্ন মহলের বিভিন্ন আশঙ্কা থাকে। কড়াইল বস্তির আগুন থেকে সুন্দরবনে লাগা আগুন নিয়ে জনসাধারণের মনের ওইসব আশঙ্কা বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। তবে ডিসিসি মার্কেটের আগুন যে নাশকতা নয়, তা ঘটনাস্থলে এসে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তরের সিটি মেয়র আনিসুল হক। রাজধানী হিসেবে একটি নগরে যে পরিকল্পিত উন্নয়ন অবকাঠামো থাকা দরকার, তার সুস্পষ্ট অভাব আছে। যেখানে সেখানে মার্কেট-দোকান, রাস্তা-পার্কিংয়ের অভাবসহ ট্রাফিক আইনের বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে মেগাসিটি ঢাকা একটি দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাস্থল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যার প্রতিফলন ঘটেছে সংবাদমাধ্যম ইকোনমিস্টের ‘ইন্টেলিজেন্স ইউনিট’-এর বিশ্বের ১৪০ শহরের তালিকায়, সেখানে ২০১৬ সালে রাজধানী ঢাকা বাস অযোগ্য শহর হিসেবে চতুর্থস্থানে আছে। একদিন দুদিনে অবশ্য এই সমস্যার সমাধান হবে না, এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। নগর পরিকল্পক থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সবাইকে রাজধানীর অবকাঠানো উন্নয়নের চিন্তায় কিছুটা রাশ টেনে রাজধানীর উপর থেকে বাড়তি চাপ কমানোর বিষয়ে ভাবা উচিত। নগরীর অবকাঠামো পরিকল্পনা ও ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনসহ ফায়ার সার্ভিসের দক্ষতা ও মান উন্নয়নের পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ড নিয়ে জনমনে নাশকতার সন্দেহ দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।