চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বাঁদর চড়ে বসে আছে রামছাগলের ঘাড়ে

গুজব বন্ধে শ্রমিক-মালিক-সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে

গাজীপুরের একটি তৈরি পোশাক কারখানার খাবার পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া কয়েকজন শ্রমিকের ‘মৃত্যু’র গুজবে বিক্ষোভের মুখে ওই এলাকার অর্ধশতাধিক কারাখানা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাদের আশঙ্কা, এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সুযোগসন্ধানী কোনো পক্ষ পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটাতে পারে।

এই ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে, শনিবার খাবার পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে গাজীপুরের ডেকেরচালা এলাকার একটি কারাখানার বেশ কয়েকজন শ্রমিক। রোববার সকালে ওই কারখানার শ্রমিকরা প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করে। এর এক পর্যায়ে কে বা কারা তাদেরকে জানায়, অসুস্থ শ্রমিকদের কয়েকজন মারা গেছে। এ গুজবে ওই শ্রমিকরা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। আশেপাশের কারাখানাগুলো থেকেও আরো শ্রমিক এসে যোগ দেয় বিক্ষোভে। এরপর শুরু হয় সড়ক অবরোধ, ভাঙচুর।

গণমাধ্যমগুলো আরেকটি বিষয় উল্লেখ করেছে, তা হলো ওই কারাখানার শ্রমিকদের বেতন বকেয়া ছিল। ঈদের আগে তাদেরকে অর্ধেক বেতন দিয়ে বলা হয়েছিল, সেপ্টেম্বরে বাকিটা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু কারাখানার মালিকপক্ষ তা শোধ করেনি। এ কারণে আগে থেকেই শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ ছিল।

তার মানে এই ঘটনায় গুজবের পাশাপাশি আগের ক্ষোভও শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। অথচ সরকারের সাথে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং শ্রমিক নেতৃবৃন্দের বৈঠকে দেশের প্রতিটি কারাখানার মালিকরা ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতনসহ অন্যান্য বকেয়া পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

শুধু তাই নয়, গত ঈদের দুইদিন আগে ঘটা করে সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ দাবি করেছিল, শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু আজকে গাজীপুরের ঘটনাই প্রমাণ দিচ্ছে, বিজেএমইএ’র নেতারা সেদিন সঠিক বলেননি। অথবা তারা সব কারখানার খবর রাখেননি। আমাদের ধারণা, বেতন-বোনাস পরিশোধ না করা আরো কারখানা আছে।

আমরা জানি, একক খাত হিসেবে দেশের সবচেয়ে বড় তৈরি পোশাক খাত। সেখানে ৫০ লাখেরও বেশি শ্রমিক সরাসরি কাজ করেন। পরোক্ষভাবে আরো কয়েক কোটি মানুষ তার সাথে জড়িত। তাই গত কয়েক বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সরকার সতর্কভাবে এই খাতের শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজ করছে। কোনো মহল গুজব বা উসকানি দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে; তা নিয়ে সজাগ দৃষ্টি রেখে চলেছে।

কিন্তু আমাদের প্রশ্ন এত সতর্কতা আর সাবধানতার পরেও কেন ঈদের মাসের বেতন বকেয়া থাকলো? কেন এভাবে মালিকপক্ষ উসকানির সুযোগ দিলেন? আর কারাই বা বাইরে থেকে এসে গুজব রটিয়ে গেল? এসব প্রশ্নের উত্তর দ্রুত খুঁজে বের করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

এমনিতেই নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরাও একাধিকবার এ নিয়ে প্রশাসনকে সতর্ক থাকতেও বলেছেন। আমরা মনে করি, নানা কারণে অস্থির এই সময়ে পোশাক শিল্পে যেন কোনো রকম বিশৃঙ্খলা না ঘটে; সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে এ ধরনের গুজব বন্ধে শ্রমিক-মালিক-সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।