মনের অজান্তেই হয়তো স্মার্টফোনটা বের করে গুগলে গিয়ে দেখে নিচ্ছেন আজকের খেলার স্কোর অথবা চলতি বিশ্বের সর্বশেষ খবরাখবর। সেই সঙ্গে সন্ধ্যার কোন অনুষ্ঠানে আগে থেকেই ‘গোয়িং’ অপশনটা দিয়ে রেখেছিলেন। শুধু কী তাই! হয়ত কাজে যাওয়ার সময় নিজের মুঠোফোনে সংরক্ষণ করেছেন আজকের প্রেজেন্টেশনের তথ্য, র্যাগিং বা অফিসের বার্থডে সেলিব্রেশনের ছবি। হয়তো নিজের প্রিয় জনের সাথে তোলা ছবিও দেখছেন নিজের হাতের মুঠোয় থাকা ছোট্ট দুনিয়ায়।
অনেকসময় একঘেয়েমি কাটাতে ইউটিউবে পছন্দের গানটাও শুনছেন অনেকেই। একেরপর এক অ্যাপস ডাউনলোড করে ভরিয়ে ফেলছেন আপনার স্মার্ট ফোনের স্ক্রিন! এমনকি কোথায় যাচ্ছেন, কী খাচ্ছেন, কী করছেন, সবই যে জানাতে হবে পুরো বিশ্বকে তাই ফেসবুকে অথবা মোবাইলে থাকা লোকেশন সিলেক্ট করে রেখেছেন।
ভাবছেন সাইবার নিরাপত্তা (ডিভাইসকে – হ্যাকিং ও বিভিন্ন ধরণের আক্রমন থেকে নিরাপদ রাখতে পারে) তো আছেই। ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক বেষ্টিত পরিবেশে না থাকলে তো স্মার্ট- ই হওয়া যাবে না। কিন্তু এত সব কর্মব্যস্ততা এবং ইন্টারনেট বিশ্বের মাঝে আপনার মহামূল্যবান তথ্য কিন্তু জেনে যাচ্ছে গুগল। সেগুলো প্রত্যেকটি আবার সংরক্ষণ করেও রাখছে। দ্যা গার্ডিয়ানের সমীক্ষায় দেখা যায়, কোন বিষয়ে ব্যাক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার্থে আপনি গুগল ও ফেসবুকের কাছে বন্দী।
গুগল জানে আপনি এখন ‘কোথায়’?
গুগল ম্যাপে লোকেশন অন করে রাখলেই নিমিষেই জানা যায় আপনি এখন কোথায় আছেন।
আপনি কী ‘সার্চ’ করছেন অথবা গোপনীয়তা রক্ষার্থে কী ‘ডিলেট’ করছেন
গুগলের সার্চ হিস্ট্রিতে থাকে আপনি কখন কী কী খুঁজেছেন, কী বিষয় মুছে ফেলছেন।
বিভিন্ন দিবস অথবা ইভেন্টে সামনে রেখে আপনার ‘ফেসবুক প্রোফাইল’ পাল্টানোর নির্দেশনা
অনেকসময় নতুন প্রোফাইল ছবিটি পাল্টানোর নির্দেশনা আসে ফেসবুকে আপনার টাইমলাইনে।
যেখানে আপনার স্থান, লিঙ্গ, বয়স, শখ, ক্যারিয়ার, পছন্দ এমনকি সম্পর্কের অবস্থানও থাকে। সেখেন এক ক্লিকেই ব্যক্তিগত সব তথ্যই চলে যাচ্ছে গুগলের দখলে।
Click on this link to see your own data: google.com/settings/ads/
মুঠোফোন ভর্তি ‘অ্যাপসের’ খবরও জানে গুগল
আপনার মুঠোফোনে সমস্ত অ্যাপসের খবর চলে যায় গুগলের কাছে। এমনকি আপনি কতক্ষণ কোন অ্যাপটি কোথায় বসে কোন দেশ থেকে ব্যবহার করছেন, কে আপনার সাথে কানেক্ট রয়েছে অ্যাপের মধ্য দিয়ে অথবা ফেসবুকে আপনার সাথে কে কথা বলছে, আপনি কখন ঘুমাতে যাচ্ছেন সবই জানে গুগল।
Click on this link to see your own data: google.com/settings/ads/
‘ইউটিউবে’ ভিডিও দেখায় গুগলের খবরদারি
আপনি কবে মা হচ্ছেন, আপনি কি চুপচাপ স্বভাবের, না আত্নবিশ্বাসী হতে চান, আপনি কোন ধর্মের , ওজন কমাতে চান। আপনার সমস্ত ইউটিউবের কাছে জিজ্ঞাসা চলে যাচ্ছে গুগলের কাছে।
ব্যক্তিগত কাজে যে ইনফো আপনি ডাউনলোড করছেন সব তথ্য
অনেকসময় প্রায়ই লেখা থাকে ‘ডাউনলোড অল ডেটা’ যা তুমি খুঁজ। আপনি যখনই ব্যক্তিগত ইনফো ডাউনলোড করবেন সব গুগল ড্রাইভে থেকে যাবে।
ফেসবুক আপনার পছন্দের স্টিকার এবং লগ ইন লোকেশন দ্বারা সব তথ্য সংরক্ষণ করে
ফেসবুকের স্টিকার দিয়ে অনেক সময় ধারণা করা হয় আপনার আগ্রহের বিষয় কী হতে পারে। লগ ইন হওয়ার সাথে সাথে আপনি ফেসবুক বা গুগলের হাতের মুঠোতে।
ওয়েবক্যাম, মাইক্রোফোনও নিরাপদ না
গুগল ট্র্যাকিং করতে পারে আপনি কী ইনষ্টল করছেন, কখন ব্যবহার করছেন, কার সাথে কথা ও ভিডিও কল করছেন, আপনার মেইল, আপনার কেলেন্ডার, আপনার হিস্ট্রি, আপনি কী এসএমএস পাচ্ছেন অথবা দিচ্ছেন। কী ডাউনলোড করছেন, গান, ভিডিও, কী খুঁজছেন সবই থাকে গুগলের হাতে। এমন কি ফেসবুকে কী ধরণের তথ্য-কনটেন্ট আপনি পছন্দ করছেন, ফেসবুক তাও জানছে।
আরও ভিন্ন পন্থায় গুগল নিয়ে নিচ্ছে আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য
নিজের সকল দলিল নিরাপদে রাখার জন্য ‘গুগল টেক আউট অপশনটি’ সিলেক্ট করে রাখলেই। ব্যস ! নিমিষেই গুগল পেয়ে যাচ্ছে তথ্য।
আপনি কোন ইভেন্টগুলোতে যাচ্ছেন এবং কোথায় যাচ্ছেন
ইভেন্টের ভিন্ন ভিন্ন অপশন থাকে গোয়িং, ইন্টাররেস্টিং, শেয়ার এবং নিচে জায়গাটির নামও থাকে। যা ফেসবুক-গুগল জেনে নিচ্ছে।
ডিলেট করা তথ্য গুলোও সংরক্ষণ থাকে গুগলের কাছে
ভাবছেন ভাইরাস ধরে ডিলেট হয়ে গেছে আপনার সকল তথ্য অথবা নিজেই ডিলেট করছেন নিজের তথ্য। কিন্তু তা একেবারেই মুছে যাচ্ছে না। এছাড়া আপনার রোজকার কাজের রুটিন, অবসরের রুটিও নথিবদ্ধ থাকে গুগলের হাতে।
গুগল আর ফেসবুক অনেকটা আধুনিক যুগের জেলখানা। যেখানে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বলতে কিছু নেই। বিষয়টা সমসাময়িক ফেসবুকের কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির কথাই মনে করে দিচ্ছে। যে কারো ব্যাক্তিগত তথ্য জানা উচিৎ নয় ওয়েবসাইটগুলোর। বা ওয়েবসাইটগুলো সেগুলোকে কোন গবেষণার কাজেও ব্যবহার করতে পারে না।