গাড়িবোমা বিস্ফোরণে নিহত মালটার সাংবাদিক ড্যাফনি কারুয়ানা গালিজিয়ার হত্যাকারীদের রক্ষা করতে এক মিলিয়ন ইউরো বা প্রায় ১০ কোটি টাকার ‘প্রস্তাব’ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার তিন ছেলে।
ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে মানুষের মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী জোসেফ মুসকাতের পদত্যাগ চেয়েছেন তারা।
বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করা দুর্নীতির ফাঁস হওয়া নথি পানামা পেপারস নিয়ে রিপোর্ট করেছিলেন মালটার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ড্যাফনি কারুয়ানা গালিজিয়া। গত সোমবার দুপুর তিনটার দিকে বাসা থেকে নিজের গাড়িতে করে বের হন। কিছুক্ষণ পরে গাড়িটি বিদনিজা এলাকায় আসলে হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়।
বিস্ফোরণ এতটাই শক্তিশালী ছিলো যে পিউগেট ১০৮ মডেলের গাড়িটির বিভিন্ন খন্ডিত অংশ ২২ মিটার দূর পর্যন্ত চলে যায়।
ম্যাথিউ কারুয়ানা গালিজিয়া তার অন্য দুই ভাই এন্ড্রু এবং পলের সই করা এক বার্তা ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেখানে তিনি বলেন, আমার মায়ের খুনীদের বাঁচাতে মালটার নেতারা আমাদের উপরে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করেছে। প্রমাণ ও দলিলের বিনিময়ে এক মিলিয়ন ইউরো বা নয় কোটি ৭০ লাখ টাকা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।তিনি বলেন, আমাদের মা জীবিত থাকতে যে সরকার ও পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে, আমার মায়ের মৃত্যুর পরও তারা ব্যর্থ হবে। যারা আমার মায়ের মুখ বন্ধ রাখতে চেয়েছিলেন তাদের কাছ থেকে এখন আমরা ন্যায় বিচার আশা করি না।
তারা মালটার প্রধানমন্ত্রী জোসেফকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মানুষের মৌলিক স্বাধীনতার অধিকার রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ার দায় স্বীকার করে রাজনৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে হলেও পদত্যাগ করুন।
পুলিশ জেনারেল এবং অ্যাটর্নি জেনারেল পদে এমন ব্যক্তিদের বসানোর দাবি জানান, যারা তার ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে কাজ করতে ভয় পাবেন না।
গালিজিয়ার মৃত্যুর পর ওই বিস্ফোরণের ঘটনাকে ‘হত্যাকাণ্ড’ অভিহিত করে একে মালটার স্বাধীন মত প্রকাশে উপর আঘাত হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী জোসেফ। তিনি সাংবাদিকদের কাছে গালিজিয়াকে তার তীব্র সমালোচক এবং এই হত্যাকাণ্ডকে খুবই ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে বলেছিলেন।৫৩ বছর বয়সী ড্যাফনি কারুয়ানা গালিজিয়া সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে হওয়া দুর্নীতি নিয়ে লিখে খ্যাতি পেয়েছিলেন। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস –এর দেয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ড্যাফনিসহ ২৭ জন সাংবাদিক তাদের কাজের খেসারত হিসেবে খুন হয়েছেন।
সরকারপক্ষের দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অনিয়মের কাহিনী অনুসন্ধানের মাধ্যমে ফাঁস করে জনগণের কাছে সম্মান ও খ্যাতি পাওয়া ড্যাফনির মৃত্যুর ঘটনায় পানামা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনসহ ইউরোপ ও মালটার বিভিন্ন এনজিও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।