রাজধানীর গার্হস্থ অর্থনীতি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট করার দাবিতে চলমান আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদেরা।
কয়েকজন শিক্ষাবিদ কলেজটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট করার পক্ষে মত দিলেও ওই দাবির কোন যৌক্তিকতা নেই মন্তব্য করে তা নাকচ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।আর বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য বলছেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।সরকার যদি সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় তা ভেবে দেখবে।
বিষয়টি নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ রহমতউল্লাহ।এই ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘ছাত্রীরা যে আন্দোলন করছে তার পেছনে কিছু যুক্তি আছে বলে আমার মনে হয়। কলেজটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ঘোষণা করা হলে তাদের শিক্ষার মান বাড়বে। যা গার্হস্থ্য অর্থনীতি শিক্ষাকে আরও এগিয়ে নেবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর সঙ্গে ওই কলেজে পড়ানো কিছু বিষয় এক থাকলেও তা কোন সমস্যা তৈরি করবে না বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের এখানে ইংরেজি আছে আবার মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজও আছে। তাই বলেতো কোন সমস্যা তৈরি হচ্ছে না। তাই কিছু বিষয় এক থাকলেও তা একই সাথে পরিচালনা বা আলাদা আলাদাভাবে পড়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না। বরং এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তৈরিতে সহায়ক হবে।’
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
কলেজটিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট হিসেবে ঘোষণা করার ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ করা উচিত হবে না মন্তব্য করে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ছাত্রীদের দাবি খুবই যৌক্তিক।
দাবি কেন যৌক্তিক তার ব্যাখ্যায় তিনি দুটি কারণ উল্লেখ করে বলেন, প্রথমত আমাদের সমাজের প্রচলিত যে ধারণা, মেয়েরা গৃহস্থালির কাজ করবে, সন্তান প্রতিপালন করবে। আর পুরুষরা বাইরে কাজ করবে।কিন্তু কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট হলে সেখানে সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু হবে। তাতে ছেলে-মেয়ে উভয়ই গার্হস্থ্য শিক্ষায় পারদর্শী হয়ে উঠবে।সন্তান প্রতিপালন বা গৃহস্থালি কাজ শুধু মেয়েদের নয় ছেলেদেরও।এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত হলে মেয়েদের সম্পর্কে ‘সেক্সিস্ট’ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন তিনি।
দ্বিতীয়ত শিক্ষার্থীরা উন্নত শিক্ষার পরিবেশ পেলে তা পুরো শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রেই তা ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে মনে করেন এ অধ্যাপক।
‘পুকুরে বেড়ে ওঠা কোন প্রাণিকে যদি আপনি নদীতে নিয়ে আসতে পারেন তাহলে অবশ্যই তার জীবনধারণে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে বাধ্য’ দৃষ্টান্ত দেন অধ্যাপক মনজুরুল।
দাবি নাকচ করল ঢাবি শিক্ষক সমিতি
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবিকে সম্পুর্ণ অযৌক্তিক উল্লেখ করে তা সরাসরি নাকচ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোঃ রহমতউল্লাহ।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘তাদের এ দাবির কোন যৌক্তিকতা নেই।সুতরাং এ দাবি মানার কোন কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের দ্রুত ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদেরকেই ঠিকমত পড়াশোনা করাতে পারছিনা, আবাসন দিতে পারছি না। উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ মান অর্জনে যা যা করা দরকার তা আমাদের নিজেদেরই সঙ্কট রয়েছে। অন্যের দায়িত্ব কীভাবে নেব? তাছাড়া অধিভুক্ত কলেজের আইন যেমন রয়েছে তাদেরকে সেভাবেই তদারকি করবে বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট করারতো প্রয়োজন নেই।’
ঢাবি প্রশাসনের অবস্থান
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজটি যেহেতু সরকারি তাই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কেবল সরকারেরই আছে। সরকার যদি কোন সিদ্ধান্ত নেয় তবে বিশ্ববিদ্যালয় তা ভেবে দেখবে।
চতুর্থ দিনে গার্হস্থ্য অর্থনীতির শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, প্রতিবাদ ঢাবিতে
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট করার দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো রাজধানীর নীলক্ষেত-নিউমার্কেট মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করেছে কলেজটির কয়েক’শ শিক্ষার্থী। দাবি আদায় না হলে ক্লাসে ফিরবেন না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ‘সম্পুর্ণ অযৌক্তি দাবি’ এবং তাদের কারণে জনদুর্ভোগের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকাল সোয়া এগারটা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এ বিক্ষোভে অংশ নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ’ শিক্ষার্থী। এসময় বিভিন্ন স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে ক্যাম্পাসে খণ্ড খণ্ড মিছিলও বের করে তারা।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এএম আমজাদ এসে তাদের দাবির পক্ষে সংহতি জানান। উপাচার্যর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলার আশ্বাস দিয়ে দাবিগুলো লিখিত আকারে উপাচার্যর কাছে তুলে ধরার জন্য শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিলে তারা অবস্থান তুলে নেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট করার দাবিতে গত বছর সেপ্টেম্বরে আন্দোলন শুরু করেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ছাত্রীরা। ওই বছর ২১ সেপ্টেম্বর কলেজের অধ্যক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন তারা। ৪ অক্টোবর নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করলে শিক্ষামন্ত্রী দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। ওই সময় শিক্ষাসচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেন তিনি।
কিন্তু ছয় মাসেও সেই প্রতিবেদন না আসায় গত শনিবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন শুরু করে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নীলক্ষেত-নিউমার্কেট এলাকার রাস্তা অবরোধ করছেন তারা। আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত ছাত্রীরা।