শুক্রবার ছুটির দিনে রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে নেমেছিল গানপ্রেমী মানুষের ঢল। আর ঢল নামার পেছনে কারণ হিসেবে রয়েছে জনপ্রিয় পাঁচ ব্যান্ড। রবি ইয়ন্ডার আয়োজনে মঞ্চ মাতিয়েছে আর্বো ভাইরাস, শূন্য, নেমেসিস, ওয়ারফেজ ও নগর বাউল। তাই তপ্ত ভরদুপুরে কোন কিছুই যেন থামাতে পারেনি এসব গানপ্রেমীদের ।
সময়ের অনেক পরে মূল আয়োজন শুরু হলেও নবরাত্রি হল কানায় কানায় পূর্ণ ছিল দর্শকে। আজরা মাহমুদের উপস্থাপনায় প্রথমেই মঞ্চে ডাকা হয় ব্যান্ড দল আর্বো ভাইরাসকে। তাতেই যেন উল্লাসে মেতে উঠে গানপ্রেমীরা। করতালি আর চিৎকারে তারা স্বাগত জানায় প্রথম ব্যান্ড দলকে। দর্শকের আহবানে সাড়া দিয়ে মঞ্চ মাতিয়ে তোলে ব্যান্ড দল আর্বো ভাইরাস। একে একে তারা গায় সাতটি গান।
বাইরের তপ্ত রোদের আবহ যেন ফুটে উঠে হলের দর্শকের মাঝে। তবে এই আবহ আনন্দ ও উল্লাসের। এক ব্যান্ডের গানের রেশ কাটতে না কাটতে মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয় ব্যান্ড দল শূন্যকে। তাদের আমন্ত্রণে দর্শকদের আনন্দ আর দেখে কে? মঞ্চে এসেই তারা ‘শত আশা’, ‘গোধুলি’, ‘স্বপ্ন নিয়ে বাঁচি’ গান গায়। এতেই থেমে থাকেনি তারা। ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘তুই সে আমার মন’, ‘রাজাহীন রাজ্যে’, ‘আমার বিচার তুমি কর’ গান যখন শূন্য ব্যান্ড গাইছে তখন হলের গানপ্রেমীরা মেতে উঠেছে উল্লাসে।
তবে আনন্দ আর উল্লাসের মাঝে চলে আসে একটি বিরতি। বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। আধা ঘণ্টা বিরতি রেখে সন্ধ্যাকে স্বাগত জানানো হয়। এরপর আবারও শুরু হয় মূল আয়োজন। পরপর দুটি ব্যান্ডের গানের তালে মেতেও যেন ক্লান্ত নন কেউই। আর তা বোঝা গেল নেমেসিস ব্যান্ডের গানের সময়। নেমেসিস ব্যান্ডের প্রতিটা গানেই যেন সেই সাড়াই দিল হল ভর্তি দর্শকরা। আর নেমেসিসও একে একে তাদের জনপ্রিয় সব গান গেয়ে শোনাল।
সবকিছুর পরও কেন যেন দর্শকের আগ্রহের শেষ নেই। গানের তালে মেতে উঠছে তারা। সময় যাচ্ছে আর তাদের চাহিদাও বেড়ে যাচ্ছে। অবশ্য তার একটি কারণও রয়েছে। আর সেটি হলো আয়োজনে মূল চমক গুরুর গান। কখন আসবে প্রিয় ব্যান্ড দল নগর বাউল? এমনটাই ভাবনা ছিল সবার মনে। তবে এই ভাবনার অবসানের আগে মঞ্চ মাতাতে আসে ওয়ারফেজ। তাদের জনপ্রিয় সব গান একে একে গেয়ে শোনান তার ভক্তদের। তাতে উল্লাসে ফেটে পরে দর্শক ভর্তি পুরো হল।
একে একে চার ব্যান্ড তাদের গান দিয়ে মাতিয়ে রাখেন সবাইকে। এবার যার জন্য এতো অপেক্ষা সেই শেষ ব্যান্ডের আসার পালা মঞ্চে। উপস্থাপিকার মুখে প্রিয় দলের নাম শোনার সাথে সাথে পুরো হল যেন পরিণত হয় এক অন্য রকম পরিবেশে। যা ছিল না কিছুক্ষণ আগেও।
অবশেষে সবকিছুর অবসান ঘটিয়ে মঞ্চে হাজির হন জেমস। মঞ্চে উঠেই ‘কবিতা’ শিরোনামের গান গেয়ে উঠেন তিনি। গান শুরুর সাথে সাথেই হল ভর্তি দর্শক তার সঙ্গে গুনগুন করে গাইতে থাকে। জেমস যতটা না গাইছেন তার চেয়ে পুরো হলের দর্শকই গেয়ে উঠছে। এরপর ‘লেইসফিতা’, ‘দুষ্টু ছেলের দল’, ‘রাতের তারা’, ‘ঝাকা নাকা দেহ দোলা না’, ‘তারায় তারায় রটিয়ে দিব’ গানগুলো জেমসের কণ্ঠে শোনার সাথে সাথে আয়োজনের শেষ মুহূর্তে যেন আরও শক্তি যুগিয়ে তুলেছিল দর্শকদের।
শুধু কী তাই, জেমসের কণ্ঠে ‘গুরু ঘর বানাইলা’, ‘সুলতানা বিবিয়ানা’, ‘পাগলা হাওয়ার’ গান এক অন্য রকম মোহ তৈরি করে। এক মুহূর্তের জন্য থেমে ছল না গানপ্রেমীরা। তবে ঘড়ির কাঁটায় যখন বিদায়ের ঘণ্টা তখন ‘ভিগি ভিগি’ গান দিয়েই শেষ করেন জেমস। আয়োজন শেষ হলেও তার আনন্দের রেশ নিয়ে বাড়ি ফিরে যান গানপ্রেমীরা।
ছবি: ওবায়দুল হক তুহিন