গাজীর পট গান আর গাজীর পালার মনোমুগ্ধকর পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হলো আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার জন্ম শতবার্ষিকীর ২ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান।
সোমবার সন্ধ্যায় চারুকলার বকুলতলায় লোকনাট্য আয়োজন করে কালজয়ী এই প্রত্নতত্ত্ববিদ, নৃবিজ্ঞানী, গবেষক, ইতিহাসবিদ, লেখক ও অনুবাদকের পুঁথি সাহিত্যের অনন্য এই দুই অবদান নিয়ে মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা।
প্রথম দিন রোববার বৃষ্টিবিঘ্নিত বিকেলে ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটির আয়োজনে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন সমাপনী অধিবেশনে প্রথমে শুরু হয় বিক্রমপুর থেকে আসা মঙ্গল মিয়া গায়েন ও তাঁর দলের গাজীর পট গান পরিবেশনা। বেদে সমাজে বেড়ে উঠা গাজীর পটের সুপরিচিত শিল্পী মঙ্গল মিয়া গায়েন গান করেন শিল্পী শম্ভু আচার্য্যর আঁকা পট নিয়ে। তার সঙ্গে খমক বাজান জমির আলী বেপারী এবং বাওয়া বাজান ওয়াজ আলী বেপারী।
এই পরিবেশনার প্রাক্কালে গাজীর পট গানের প্রেক্ষাপট ও পরিচিতি তুলে ধরে শম্ভু আচায্য বলেন, ঐতিহ্য জানা ও ধরে রাখার জন্য আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দু’দিন ব্যাপী আয়োজনের সমাপনী পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে ওঠেন মানিকগঞ্জ থেকে আসা চাঁন মিয়া গায়েন ও তার দল। বাংলার বাউল ফকির ঐতিহ্যে উজ্জ্বল চরিত্র গাজী যে হিন্দু-মুসলিম সকল ধর্মের লোকের কাছে মান্য তা নানাভাবে ফুটে ওঠে তাদের পরিবেশনায়।
মঞ্চে রাখা হয় সোয়া কেজি চাল, দুই প্যাকেট আগরবাতি, এক পোয়া কাঁচা দুধ, এক পোয়া বাতাসা, পাঁচটি কলা এবং একটি লাল গামছা রেখে গাজীর আসন তৈরি করা হয়। চাঁন মিয়ার দলে পরিবেশনায় আরো অংশ নেন লাভলু মিয়া, হারুজ মিয়া, রুহুল আমিন, শহিদ মিয়া।
পরিবেশনা শুরুর আগে বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, আমাদের অতীত সম্পদ রক্ষা করতে হবে এবং অবশ্যই সেটা জাদুঘরে নয়। যেটা করতে পারে আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার ‘বাংলা সাহিত্যে গাযী কালু চম্পাবতী উপাখ্যান’ ও ‘গুপিচন্দ্রের সন্ন্যাস’। এই দুই ঐতিহ্য প্রশ্ন করতে শেখায়।
‘গাযী কালু চম্পাবতী উপাখ্যান’ ও ‘গুপিচন্দ্রের সন্ন্যাস’ কেনো ও কিভাবে বর্তমান সময়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, এই দুই ঐতিহ্যের মূল সুর হলো জীবন ও মুক্তি লাভের চেষ্টা। মুক্তির পথে যাওয়া। আ কা মো যাকারিয়ার কাজ বাঙ্গালি জাতিকে নির্মাণ করে।
প্রসঙ্গত, গাজীর বন্দনামূলক আখ্যান পরিবেশনারীতি গাজীর পালা, গাজীর কিসসা, গাজীর গান, গাজীর যাত্রাসহ বিভিন্ন নামে সারাদেশে প্রচলিত রয়েছে। অঞ্চলভেদে পরিবেশনরীতিও ভিন্ন ভিন্ন। আর পট গানের মধ্যে গাজীর পট গান বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয়। মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায়, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর ইত্যাদি অঞ্চলে বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে গাজীর পট গান পরিবেশনের ঐতিহ্য রয়েছে। পটচিত্র নিয়ে বেদেরা হিন্দু-মুসলিমদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গাজীর গান পরিবেশন করে থাকেন। সোমবার আ কা মো যাকারিয়ার জন্ম শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনের এ দুই পরিবেশনা সবাই্কে মুগ্ধ করে।
চারুকলার বকুলতলায় আসা দর্শকরা আরো উপভোগ করেন আ কা মো যাকারিয়ার কর্ম ও জীবন নিয়ে বর্ণিল এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এতে তাঁর বহুমাত্রিক জীবনের অনেক দুর্লভ আলোকচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
এর আগে চারুকলার বকুলতলায় দু’দিনব্যাপী জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান আ আ ম স আরেফিন সি