কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক প্রসূতির সিজারের সময় গর্ভের শিশুকে দ্বিখণ্ডিত করে জরায়ু কেটে ফেলার ঘটনা তদন্তে ২ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
কমিটির দুই সদস্য হচ্ছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনী বিভাগের প্রধান এবং জাতীয় অধ্যাপক শায়লা খাতুন।
আগামী ১১ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে এই কমিটিকে।
সেই সাথে কুমিল্লার সিভিল সার্জন এবং মেডিকেল কলেজের পরিচালককে হাইকোর্টে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে অপারেশনে সম্পৃক্ত ৫ ডাক্তারকে আবার ১১ এপ্রিল হাইকোর্টে হাজির হতে বলে ওই দিন এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
আদালতের আদেশ অনুযায়ী, বুধবার সকালে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, সিভিল সার্জন ও ওই অপারেশনের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক করুণা রানী কর্মকার, নাসরিন আক্তার, আয়েশা আফরোজ, জানেবুল হক ও দিলরুবা শারমিন হাইকোর্টের তলবে হাজির হন। এরপর ঘটনার বিষয়ে শুনানি শুরু হয়।
ভুক্তভোগী নারীর পক্ষে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী শেগুফতা তাবাসসুম শুনানি করেন। অন্যদিকে ডাক্তারদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুল মতিন খোসরু। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।
শুনানিতে আইনজীবী আবদুল মতিন খোসরু বলেন, ওই ঘটনা তদন্ত করে কুমিল্লা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ একটি রিপোর্ট দিয়েছেন। যেখানে বলা হয়েছে, গর্ভের শিশুর মাথা আটকে যাওয়ায় এবং প্রসূতির জীবন রক্ষার বিবেচনায় ডাক্তাররা ওই পদক্ষেপ নেন। তবে এরপর আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী শেগুফতা তাবাসসুম আদালতকে বলেন, ঘটনার আগে করা এক আল্ট্রাসনোগ্রাফে দেখা যায় গর্ভের শিশুর স্বাভাবিক মুভমেন্ট ও অবস্থা ছিল।
এ সময় আদালত বলেন, ‘যেহেতু ওই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনটি ওই মেডিকেলেরই তিনজন ডাক্তার করেছেন। সেহেতু আমরা চাচ্ছি বাইরে কাউকে দিয়ে করা একটি তদন্ত প্রতিবেদন আসুক। আমরা সেটা দেখি।’
এরপর বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ কমিটি গঠন করে আদেশ দেন।
‘জরায়ুসহ শিশুর মাথা বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ’ এবং ‘সিজার কালে ডাক্তার দুই খণ্ড করলেন নবজাতককে’ শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদন গত ২৫ মার্চ হাইকোর্টের নজরে আনেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান।
এরপর হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, সিভিল সার্জন ও পাঁচ চিকিৎসককে তলব করে রুল জারি করেন। ৪ এপ্রিল এই জনকে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়। এবং ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না রুলে তা জানতে চাওয়া হয়।
ঘটনার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ১৭ মার্চ রাতে প্রসব বেদনা নিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের সফিক কাজীর স্ত্রী জুলেখা বেগম।
পরদিন দুপুরে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. করুণা রানী কর্মকারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের চিকিৎসক দল জুলেখার অপারেশন করে তার গর্ভের শিশুকে দ্বিখণ্ডিত করে জরায়ু কেটে ফেলেন।