‘উদ্ভাবন ও উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ৯৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে জাতীয় সকল আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার আলো ছড়ানোর ক্ষেত্রে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৬ বছর পার করা নিশ্চয়ই অনেক গৌরবের। এক্ষেত্রে একটি দেশের স্বাধীনতা এনে দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবের জায়গা স্বাভাবিকভাবে বিশ্বের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম কিংবা জাতীয় দুর্যোগে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানের গৌরবময় অতীত থাকলেও সারাবিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে ঢাবি এখনও অনেক পিছিয়ে। বিভিন্ন র্যাংকিং বলছে, গবেষণার ক্ষেত্রেও ঢাবির মান বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ধারেকাছে নেই। কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে? কেন এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না? এর উত্তর খুঁজতে গেলে প্রথমেই যেটা সামনে আসবে তা হলো: ছাত্র-শিক্ষকদের দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি। এটা স্বীকার করতে হবে যে, স্বাধীনতার আগে এখানে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা এবং আন্দোলন-সংগ্রাম হতো। তখন রাজনীতি থাকলেও লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি ছিল না। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের বশে আনতে বৃটিশ থেকে শুরু করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যে একেবারে চেষ্টা করেনি তা নয়। এরপরও নিজস্ব স্বকীয়তা ও বিদ্রোহী মনোভাবের ফলে তখনকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তা রুখে দিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার পর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানে ব্যাপক ধস নামে। শুরু হয় প্রশাসনের রাজনীতিকরণ। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার বদলে দলীয় বিবেচনায় শুরু হয় সব নিয়োগ। এই অরাজকতার ফলে ব্যাহত হয় শিক্ষা ও গবেষণার মান। স্বভাবতই শিক্ষার মানে ধস নামে। এছাড়া কয়েক যুগ ধরে এখানে শিক্ষার্থীদের সুস্থ রাজনীতি চর্চা এবং গঠনমূলক ফোরাম ডাকসু সক্রিয় নেই। এ কারণেও শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে আমরা মনে করি। এই প্রতিষ্ঠানের জন্য মোট বাজেট ও গবেষণা খাতে বরাদ্দের অপ্রতুলতা নিয়েও রয়েছে অনেক সমালোচনা। যেমন, আগামী অর্থ বছরের জন্য গবেষণা খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে মোট বাজেটের মাত্র দুই শতাংশ। এমন অপ্রতুল বরাদ্দ নিয়ে কোন বিশ্ববিদ্যালয় বৈশ্বিক কোন প্রতিযোগিতায় নামতে পারে না বলে আমরা মনে করি। তাই ৯৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এসব বিষয়গুলোতে নজর দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে আমরা উদাত্ত আহ্বান করছি।