চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘গবেষণার মাধ্যমে দেশ ও মানুষের ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে হবে’

‘তরুণদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে প্রথমবারের মতো স্নাতক শিক্ষার্থীদের রিসার্চ ফেলোশিপ প্রদান’

গবেষণার মাধ্যমে দেশ ও মানুষের ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এবং সেন্টার ফর জেনোসাইট স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি অডিটোরিয়ামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের নবীনবরণ ও ফার্স্ট   আন্ডারগ্রাজুয়েট রিসার্চ ফেলোশিপ প্রদান-২০১৮, অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

‘বাংলাদেশে গবেষণার বর্তমান ও ভবিষ্যত’ বিষয়ের উপর তিনি বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে প্রায় চার শতাধিক নবীন গবেষক উপস্থিত ছিলেন, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের নতুন সদস্য।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, দেশের গবেষণার বর্তমান অবস্থা বলতে চাই না। তবে অতীত থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। আমাদের গবেষণার মূল বিষয় হতে হবে এই যে, আমরা ভবিষ্যত কিভাবে পরিবর্তন করবো সে বিষয়ে কাজ করা। গবেষণার মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যতকে পরিবর্তন করতে হবে। এই ক্ষেত্রে তরুণদের এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ দারুণ ভূমিকা রাখবে।

নবীন গবেষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গবেষণাকে বৃহত্তর ধারণা থেকে দেখতে হবে। গবেষণা করতে গেলে একজন গবেষককে চিন্তা করতে হবে গ্লোবাল অবস্থান থেকে।

ড. ইমতিয়াজ ভবিষ্যত বাংলাদেশের গবেষণার দুটি বিশেষ সম্ভাবনার কথা বলেন। আর তা হলো পানি সম্পদ এবং মানসম্পদ।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে পানি এবং মানবসম্পদের গবেষণা নিয়ে জোর দিতে হবে। বাংলাদেশে নদ-নদী অনেক। যা প্রচুর পানি সম্পদ। আমাদের এখানে বৃষ্টিপাতও হয় অনেক, যার ৮০ শতাংশ বৃষ্টিপাত আমরা ব্যবহার করতে জানি না। এই পানি কিভাবে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে গবেষণা করতে হবে।

অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলেন, আমাদের শ্রমের মজুরি কম। এরপরও তাদের হাত ধরে রেমিট্যান্স আসছে, যা প্রশংসনীয়। আমাদের জনগণকে মানসম্পদে পরিণত করতে হবে।  এই মানবসম্পদকে আরো কর্মঠ ও দক্ষ করে তুলতে হবে, কাজে লাগাতে হবে। যার জন্য নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রচুর গবেষণা প্রয়োজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় শিক্ষক বলেন, আমরা সবসময় স্বল্পতা নিয়ে কথা বলি। এটা উচিত নয়। আমরা স্বল্পতার দিকে তাকাতে চাই না। আমাদের সম্ভাবনার দিকে তাকাতে হবে। আমাদের অনেক সম্ভাবনা, সম্পদ। অতীত থেকে আমরা সমৃদ্ধশালী। মূলত আমাদের যা আছে তা কাজে লাগানোর জন্য গবেষণা করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রথম গবেষণামূলক সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের গবেষণা উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে কাজ করে যাচ্ছে তরুণদের এই সংগঠন। তারই ধারাবাহিকতায় এই আয়োজন।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ।

প্রধান অতিথি বলেন, শিক্ষার্থীদের গবেষণা সংসদ একটি ব্যতিক্রমী উদ্যােগ। এই উদ্যােগ তরুণদের গবেষণায় আসতে সাহায্য করছে। গবেষণায় তরুণদের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের গবেষণার পট পরিবর্তন করবে বলে বিশ্বাস করি। এই ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তরুণদের গবেষণা আগমন উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের মডারেটর ড. মো: মনজুরুল করিম, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি ড. উত্তম কুমার দাস, বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের মডারেটর ড. ফাজরিন হুদা, টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আয়মান সাদিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আব্দুস সামাদ, কারাসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কাজী সামিও শীশ, ওপেন একসেস বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা কনক মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাইফুল্লাহ সাদেক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গ্লোবাল সেন্টার ফর ইনোভেশন এন্ড লার্নিং, যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ প্রতিনিধি সাঈদুল নাকিব। স্নাতক শিক্ষার্থীদের ফেলোশিপ প্রদান করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এই সংগঠনটি।

প্রথমবারের মতো স্নাতক শিক্ষার্থীদের রিসার্চ ফেলোশিপ প্রদান করা হয়, বাংলাদেশে যেটি প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে। মূলত স্নাতক শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানালেন আয়োজকরা।

প্রথম আন্ডারগ্রাজুয়েট রিসার্চ ফেলোশিপ-২০১৮ পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের ২০টি গবেষণা থেকে তিনটি গবেষণা টিম।

টিম গুলো হলো- পলিটিকস, ল এন্ড লিগ্যাল সিস্টেম (তানজিন আহসান, তানবিরুল ইসলাম, শবনুর-ই-জান্নাত এবং অন্যরা), সোসাল সায়েন্স টিম (নাসরিন জেবিন, আব্দুল্লাহ আল নোমান, সায়মা তিথি এবং অন্যরা) এবং আর্ট এন্ড কালচার রিসার্চ টিম (সাঈদ শাহজাদা আল কারিম, পরমা সোমা ও টিমের স্নাতক শিক্ষার্থীরা)। মূলত এই টিমগুলোর স্নাতক শিক্ষার্থীদেরকে ফেলোশিপ প্রদান করা হয়।