দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনের আগে সরকার ও মূলধারার গণমাধ্যমকে ‘একসঙ্গে, এক নৌকায় বসে’ গুজব মোকাবেলা করতে চান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
আজ রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তথ্যমন্ত্রী বলেন,‘নির্বাচনকে-সংবিধানকে সন্দেহের ভেতর ফেলে দিয়ে, গণমাধ্যমের উপর সন্দেহ আরোপ করে বিএনপি-জামাত-জঙ্গি চক্রের তরফ থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুজব-বিভ্রান্তির জাল বিছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
সব গুজব সম্পর্কে সরকারকে তথ্য দিতে এবং গণমাধ্যম কর্মীদের অতীতে ছড়ানো গুজব ও এসব গুজবের ফলাফল আবারও জনগণকে মনে করিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী।
‘গুজব: গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মফিজুর রহমান। প্রবন্ধে গুজব সম্পর্কে আদ্যোপান্ত ও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে গুজব প্রবণতা তুলে ধরেন তিনি।
নির্বাচনের আগে স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-শিবির ও লন্ডন থেকে গুজব রটানোর অর্থায়ন চলছে। কোন গুজব ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আগেই কোনটি মিথ্যা তথ্য আর কোনটি সত্যি, তা তুলে ধরতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের আলাদা সেল গঠনের প্রয়োজন বলে জানান তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
তথ্য অধিদফতর আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তারানা হালিম বলেন,‘সাম্প্রতিক ঘটনায় আমরা তথ্যমন্ত্রণালয় থেকে গুজবকে ডালপালা মেলতে দেখলাম। কিন্তু অনেক গণমাধ্যম এসব যে গুজব সেই খবর প্রচার করেনি। আমি বিটিভিকে ব্যক্তিগতভাবে ডেকে বলেছি, ফেক নিউজ (বানোয়াট খবর) কোনটা তা দেখান, আসল নিউজ কোনটা তাও দেখান। প্রায় তিন মাস আগে বলেছি আমাদের একটা সেল থাকা উচিৎ। যেখানে এসব জরুরি মুহুর্তে যেকোন সাংবাদিক ফোন করলে প্রকৃত তথ্যটি পাবে। ঘটনা সম্পর্কে সরকারের বক্তব্য-পদক্ষেপ সবিস্তারে জানানো হবে।’
গুজব ছড়ানো ঠেকাতে তথ্যমন্ত্রণালয়ের ইমিডিয়েট রেসপন্স টিম রাখায় জোর দিয়ে তিনি আরও বলেন,‘সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচারের খেলা শুরুতেই শেষ করতে হবে। ইতোমধ্যে অনলাইন নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। আমাদের ইমিডিয়েট রেসপন্স ওর্য়াকিং টিম গঠন করা প্রয়োজন, এটি গঠনের নির্দেশনা আগেই দেয়া হয়েছিলো। আমি তথ্য অধিদফতরকে অনুরোধ করবো আগামী ১৫ দিনের মধ্যে একটা কাগজ অন্তত টেবিলে দেখতে চাই। এই টিম ২৪ ঘণ্টায় ৩ টি ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করবে এবং সব সামাজিক মাধ্যমে তারা নজর রাখবে, সত্য-মিথ্যা যাচাই করবে। যেন কেউ আমাদের মাধ্যমে জানতে পারে কোনটি সত্য কোনটি গুজব।’
সামাজিক মাধ্যমের এই সময়ে গুজব মোকাবেলায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপের সময় এসেছে জানিয়ে তারানা হালিম বলেন,‘আমার বার বার মনে হয়, ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগ, আইসিটি ও তথ্যমন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি সুষ্ঠু সমন্বয় প্রয়োজন। একই সঙ্গে সাইবার জগতের নিরাপত্তায় আমাদের সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে তথ্যমন্ত্রণালয়ের নিবিড় যোগাযোগ প্রয়োজন।’
সংবাদ প্রচার ও তথ্য প্রবাহে বাধা দেয়া হলে গুজব ছড়ানোর ক্ষেত্র তৈরি হয় বলে মনে করেন মতবিনিময় সভায় আসা প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
তিনি বলেন,‘গুজব কেন হয় তা প্রথমে সনাক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। সনাক্ত করা গেলেই তার প্রতিষেধ দেয়া সম্ভব হবে। গুজব ছড়ানো হচ্ছে উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে। তাই উদ্দেশ্যটা কী সেটা খুঁজে বের করতে হবে। গুজব বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে গুজব সত্য নয়, গুজবে কান দেবেন না। এখানে মিডিয়ার দায়িত্ব আছে। গুজবকে সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য পরিবেশন করে ঠেকাতে হবে।’
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন তথ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কামরুন নাহার। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকসহ অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন তথ্যসচিব আবদুল মালেক, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র শীল, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইসতাক হোসেন, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জাকির হোসেন প্রমুখ।