চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

গণপিটুনিতে হত্যা: আড়ালে কী ঘটছে, তদন্ত করতে হবে

শুক্রবার দিবাগত রাতে প্রায় কাছাকাছি সময়ে ঝালকাঠি এবং নোয়াখালীতে গরু চুরির অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ দুটি ঘটনা আলাদা হলেও এর ধরণ এবং ফলাফল একই। শুধু তাই নয়, ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অন্তত দুটি বিষয়ে কাকতালীয়ভাবে মিল পাওয়া গেছে। নিহত দু’জনেরই পরিচয় অজ্ঞাত এবং তারা বয়সেও প্রায় সমান, চল্লিশোর্ধ্ব।

এই গণপিটুনির প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে ঝালকাঠির সদর উপজেলার দিয়াকুল গ্রামে। দ্বিতীয় ঘটনাটি নোয়াখালীর সুধারাম থানার পশ্চিম চর উরিয়া গ্রামের। গ্রামবাসীর অভিযোগ তারা দু’জনই গরু চুরি করতে এসেছিল। তাদের দাবি, গ্রামের অনেকের বাড়ি থেকে প্রায়ই গরু চুরির ঘটনা ঘটছে।

এই ধরনের ঘটনা যে শুধু শুক্রবার দিবাগত রাতেই ঘটেছে – তা নয়, গত ১১ দিনের মধ্যে আরও দুটি ঘটনায় অন্তত চারজনকে একইভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই দুটি ঘটনাই ঘটে গাজীপুরে। এর একটি ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতের। গরু চোর সন্দেহে কালিয়াকৈরের নাওলা এলাকায় দুইজনকে হত্যা করা হয়। এর ঠিক একদিন আগে ৩০ তারিখ রাতে কালীগঞ্জ উপজেলায় এক বাড়িতে ডাকাতির পর সন্দেহভাজন দুইজন ধরে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয়রা।

অদ্ভুতভাবে এই চারজনের পরিচয়ও জানতে পারেনি পুলিশ বা স্থানীয়রা। তার মানে গণপিটুনির এই চারটি ঘটনাতে নিহত ছয়জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি বলে দাবি করা হয়েছে।কিন্তু কেন? এটা ‍কি শুধুই কাকতালীয়? নাকি পরিকল্পিত হত্যার বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি? বছরের পর বছর আমরা এই ধরনের ঘটনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে দেখেছি। শেষ পর্যন্ত এর সাথে জড়িত ‘কাউকে চিহ্নত করতে না পেরে’ পুলিশ তার তদন্তের ইতি ঘটনায়। অনেক সত্যই এমন গণপিটুনির আড়ালে হারিয়ে যায়। এবং একই রকম ঘটনা আবার ঘটে।

প্রায় ৮ বছর আগে ঘটা আমিনবাজারের সেই ঘটনার কথা আমাদের মনে আছে? ২০১১ সালে ১৭ জুলাই শবে বরাতের রাতে ডাকাত সন্দেহে বড়দেশী গ্রামে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা দেখেছিলাম, অপরাধীদের বাঁচাতে নিরপরাধ নিহত ছাত্রদের নামেই উল্টো মামলা দেওয়া হয়েছিল। যদিও পরে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন নিশ্চিত করেছিল, নিহতরা নির্দোষ।

তার মানে, আইন হাতে তুলে নেওয়ার এমন প্রবণতা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কেউ যদি সত্যি সত্যি অপরাধী হয়েও থাকে, তার জন্য তো দেশের আইন আছে; বিচার আছে। তারপরও কেন এমন ঘটনাই বারবার ঘটছে? এটাই এখন বড় প্রশ্ন।

আমরা মনে করি, কেউ যত বড় অপরাধই করুক না কেন – দেশের প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখে তাকে আইনের হাতে সমর্পণ করা উচিৎ। তা না হলে অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি এর শিকার হতে পারেন। তাতে সেই ব্যক্তি শুধু নিজের প্রাণই হারাবেন না; সারাজীবন তার পরিবারকেও মিথ্যা অভিযোগের যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। যা কারো জন্যই কাম্য নয়।