সমস্যার ভারে জর্জরিত রাজধানী ঢাকা শহরের অন্যতম একটি বড় সমস্যা হচ্ছে গণপরিবহনে অব্যবস্থাপনা। পরিকল্পনার অভাব, পরিবেশ উপযোগিতাহীন বাস-টেম্পু আর প্রায় ‘জিরো মনিটরিং’ এর কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ খাত রাজধানীবাসীর নিত্যদিনের সমস্যায় রূপ নিয়েছে। পাবলিক পরিবহনের জন্য অপেক্ষা, ভিড়-ধাক্কা আর পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতার প্রকট সমস্যার মধ্য দিয়ে দিয়ে দিন শুরু হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে বিভিন্ন রুটের পরিবহন মালিক এবং পরিবহন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভার পর সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ঘোষণা দেন, ঢাকা শহরে সিটিং-গেইটলক কিংবা স্পেশাল সার্ভিস নামে কোন সার্ভিস চলতে পারবে না। প্রতিটি বাসকে রুট পারমিট অনুযায়ী চলতে হবে। এ সিদ্ধান্ত ১৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবার কথা থাকলেও তা ১৬ এপ্রিল কার্যকর হতে দেখা যাচ্ছে। সিটিং সার্ভিসগুলোর ভাড়া না কমিয়ে ওই একই ভাড়াতেই ঠাসাঠাসি করে যাত্রী উঠিয়ে ‘সিটিং রেইটে’ ভাড়া আদায় চলছে। প্রতিটি বাসে পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের ঝগড়া আর হুমকির যে মহড়া চলছে তাতে মনে হয়, বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে চলা সমস্যাকে একটি প্রাণঘাতি ক্যান্সারে পরিণত করেছে। এতবড় রাজধানীতে মাত্র ৫টি মনিটরিং পয়েন্ট করা হয়েছে, যা হয়তো কয়েকদিন পর উঠেও যাবে। এরপর থেকে চলতেই থাকবে অব্যবস্থার স্থায়ীরূপ, এই প্রেক্ষাপটে নারী যাত্রীদের অবস্থা হবে সবচেয়ে করুণ। দেশের বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পরিবহন শ্রমিক-মালিকরা এক অদৃশ্য ক্ষমতার কারণে মাঝে মাঝে স্বেচ্ছাচারিতার চরম রূপ প্রদর্শন করে থাকে। কিছুদিন আগেও আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত এক চালকের সাজা মওকুফের দাবিতে তাদের দেশজুড়ে ধর্মঘট পালন করতে দেখা গেছে। বিষয়টিতে আদালতে রিট পর্যন্ত হয়েছে এবং দেশের সর্ব্বোচ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে বিষয়টি থেকে তাদের নিবৃত্ত করতে হয়েছে। সেসঙ্গে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ‘বিআরটিসি’ বিভিন্ন রুটে তাদের বাস প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে, রাজধানীর ঐতিহ্যের অংশ বিআরটিসির দোতলা বাসগুলো শুধুমাত্র সকালবেলা লিজ নেওয়া বিভিন্ন অফিসের যাত্রী বহন করে থাকে। ‘বিআরটিসি’ শুধুমাত্র অফিশিয়াল বাস ভাড়া/লিজ দেওয়ার একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ায় সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। একটি দেশের রাজধানীতে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধার বিভিন্ন গবেষণা তথ্য ও সূচকের উপরে দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন নির্ণয়কগুলো নির্ধারিত হয়, কাজেই বহুদিন ধরে এই সেক্টরে চলে আসা অব্যবস্থা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে সমাধান জরুরি। দরকার হলে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কীভাবে কেমন করে গণপরিবহন ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে তা দেখে, দীর্ঘমেয়াদি একটি ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্ধারণ হওয়া জরুরি বলেও আমরা মনে করি।