নিরাপত্তা দুর্বলতার অজুহাতে ২০১৬ সালের ৮ মার্চ ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি মালবাহী (কার্গো) উড়োজাহাজ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করার ঘোষণা দেয় যুক্তরাজ্য। নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি না হলে সরাসরি যাত্রীবাহী ফ্লাইটও বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হয় দেশটির পক্ষ থেকে।
এরপরে ২০১৬ সালের নভেম্বরে বিমানবন্দরের বহির্গমন টার্মিনালে ঢোকার মুখে এক যুবকের ছুরিকাঘাতে নিহত হন এক আনসার সদস্য। পরে পুলিশ জানিয়েছিল, ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল।
আরেকটি বড় ঘটনা ঘটে ওই নভেম্বর মাসেই। ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ হাঙ্গেরি যাওয়ার পথে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমিনিস্তানের রাজধানী আশখাবাদে জরুরি অবতরণ করে। বিষয়টি নিয়ে সারাদেশসহ বিশ্বের এভিয়েশন সেক্টরে তোলপাড় হয়েছিল। তদন্ত কমিটি গঠন, তদন্ত পরিচালনা, অভিযোগ গঠন, অভিযোগ থেকে মুক্তি শেষে ৩ জনের নামে মামলা হয়েছে ওই ঘটনায়।
এছাড়া গতবছর অস্ত্র হাতে একজন রানওয়েতে ঢুকে পড়ার ঘটনাও আলোড়ন তৈরি করেছিল।
বিভিন্ন ঘটনা মোকাবেলা ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় বিমানবাহিনী, পুলিশ, গোয়েন্দা ও আনসার সদস্যেদের নিয়ে এভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্স (এভসেক) গঠিত হয়। সেইসঙ্গে বিদেশী পরামর্শক নিয়োগ করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে শুল্ক গোয়েন্দাদের নিরলস পরিশ্রমে বিমানবন্দরগুলোতে চোরাচালানের ঘটনা কমে এসেছে উল্লেখযোগ্য হারে। এইসব ঘটনার পরে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মালবাহী (কার্গো) উড়োজাহাজ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় যুক্তরাজ্য।
এতকিছুর পরে ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম থেকে দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ খেলনা পিস্তল আর ভুয়া বোমা দিয়ে ছিনতাই চেষ্টা ও ছিনতাই চেষ্টাকারী তরুণ নিহতের ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তৈরি করেছে। ঘটনার দিনই চট্টগ্রামে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি চট্টগ্রাম ত্যাগ করার পরপরই ওই অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার একদিন আগে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের হুমকিতে সেদেশের সব এয়ারপোর্টে অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর সফরের দিনে ও প্রতিবেশী দেশে কোনো হুমকি বা অ্যালার্ট থাকলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশের বিমানবন্দরগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতা থাকাটা কাম্য ছিল। এছাড়া খেলনা পিস্তল ও বোমা সদৃশ ভুয়া বস্তু নিয়ে একজন কীভাবে উড়োজাহাজে চড়ে বসলো, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এক্ষেত্রে স্ব স্ব কর্তৃপক্ষ তাদের পেশাদারি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে বললে ভুল হবে না। বিষয়টি আমাদের ভাবাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এবং মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা নানা ঘটনার পরে আশ্বাস আর পদক্ষেপের পরেও বিভিন্ন ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, সেইসঙ্গে হুমকিতে এই সেক্টরের ব্যবসায়ীক ভাবমূর্তি। বিষয়টির গুরুত্ব দ্রুত অনুধাবন করে এসব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।