সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে নিজেদের তদন্তে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ)।
এর আগে তুরস্কের পক্ষ থেকেও বারবার এই হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ করে আসছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডে যুবরাজের সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে সিআইএ।
সৌদি আরবে যুবরাজ সালমানের প্রভাব বিশ্লেষণ করে ওই সিআইএ বলছে, এই ধরনের একটি হত্যাকাণ্ড তার অনুমতি ছাড়া হতে পারে না।
এক্ষেত্রে দুটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগের ভিত্তিতে প্রভাবশালী এ গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, প্রথমত এই হত্যার আগের কয়েকদিনে যুবরাজের ফোনকল। দ্বিতীয়ত ওই হত্যাকাণ্ডের পরে যুবরাজের এক কর্মকর্তার কাছে হত্যাকারীদের একজনের ফোনকল।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সিআইএ যুবরাজের প্রতি তাদের সন্দেহের কথা বলে আসছিলে। কিন্তু তিনি যে সরাসরি হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন সেই সমাধান টানতে দ্বিধায় ছিল। এরই মধ্যে সিআইএ তাদের তাদের বিশ্লেষণ আইনজীবী এবং ট্রাম্পের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছে।
সম্প্রতি পাওয়া একটি নতুন তথ্যই সিআইএ’র চিন্তা-ভাবনায় পরিবর্তন আসে বলে জানায় সংস্থাটি। সেই তথ্য থেকে তারা জানতে পারে, হত্যাকারী দলের এক সদস্য যুবরাজের বড় এক কর্মকর্তাকে ফোন করে বলেন, তোমার বসকে জানিও, মিশন সম্পন্ন হয়েছে।
যদিও এই তথ্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুবরাজের সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ করে না।
সৌদি যুবরাজ খাশোগিকে সৌদি আরবে ফিরিয়ে আনার টোপ দিচ্ছিলেন। কিন্তু তার ফোনকলে তিনি তাকে হত্যার কথা সরাসরি বলেননি।
সিআইএ জানায়, সৌদি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা খাশোগি এবং যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিম বিন সালমানের যোগাযোগ নিয়েও কথা বলেন। তিনিও যুবরাজের ভাই।
তার সঙ্গে খাশোগির শেষ কথা হয় ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর। তিনি জানান, খাশোগিকে কখনোই তুরস্ক যাওয়ার কথা বলেননি তিনি।
গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে গিয়ে নিখোঁজ হন সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি।
প্রথম দিকে হত্যার দায় স্বীকার না করলেও পরে সৌদি সরকার স্বীকার করে, কনস্যুলেটের ভেতরে ‘ধস্তাধস্তিতে’ খাশোগি নিহত হন। এর দায়ে ১৮ জন অফিসারকে গ্রেপ্তার করে সৌদি সরকার।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত হিসেবে সৌদি আরবের ১৫ জন কর্মকর্তার তালিকা প্রকাশ করে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম। ঘটনার পর থেকেই দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সৌদি যুবরাজের নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে দাবি করে।
কয়েকদিন আগে খাশোগি হত্যার প্রমাণ (রেকর্ডিং) সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশের কাছে হস্তান্তর করে তুরস্ক।
দেশটির একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সৌদি রাজতন্ত্রবিরোধী সাংবাদিক জামাল খাশোগি নিহত হওয়ার আগে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান তাকে টেলিফোন করে রিয়াদে ফিরে যেতে রাজি করানোর চেষ্টা করেন। তবে গ্রেপ্তার ও হত্যার ভয়ে খাশোগি যুবরাজের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এর কিছুক্ষণ পরেই তাকে হত্যা করা হয়।