বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে পৌঁছেছে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে প্রতিবেদনটি বুধবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে আসে। এরপর রেজিস্ট্রার জেনারেল প্রতিবেদনটি আদেশ প্রদানকারী হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন।
এর আগে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা চেয়ে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। সে জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদার চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিবেদন চেয়ে আদেশ দেন। আদালত তার আদেশে, খালেদা জিয়া ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ নেয়ার সম্মতি দিয়েছেন কি না, তিনি সম্মতি দিয়ে থাকলে তার সে ধরনের চিকিৎসা শুরু হয়েছে কি না, আর সেই চিকিৎসা শুরু হয়ে থাকলে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত সর্বশেষ অবস্থা কী, তার প্রতিবেদন বিএসএমএমইউ এর উপাচার্যকে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫ টার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে হাইকোর্টে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। এবং এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার করা এই জামিন আবেদনের শুনানির জন্য রোববার দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।
তার আগে গত মঙ্গলবার বিকেলে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই জামিন আবেদনটি দাখিল করা হয়। দাখিলকৃত সে আবেদনে খালেদা জিয়ার ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ প্রয়োজন উল্লেখ করে তাকে দ্রুত বিদেশে তথা যুক্তরাজ্যের মতো দেশে চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগে বেগম খালেদা জিয়াসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এই মামলায় ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে এই মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। মামলার বাকি সব আসামিকেও একই সাজা দেয়া হয় এবং ট্রাস্টের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ঘোষণা করেন আদালত।
খালেদা জিয়া ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন: বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর সাবেক এপিএস জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার এপিএস মনিরুল ইসলাম।
এই মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করলে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এরপর সে খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে জামিন চান খালেদা জিয়া। তবে গত ১২ ডিসেম্বর দেশের সর্বোচ্চ আদালত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন। তবে খালদা জিয়া চাইলে তার সম্মতিতে ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ দিতে বলা হয়।
এই জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে আপিল বিভাগে ২১০ মিনিটের ‘নজিরবিহীন’ হট্টগোল হয়। ওই হট্টগোলের প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতির আদালত কক্ষে পরবর্তীতে ৮টি সিসি (ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা বসানো হয়।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজার রায় ঘোষণার পর বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউ হাসপাতালে রয়েছেন।