খাদ্যের দাম ও জ্বালানীর দাম এই বছর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে উল্লেখে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, সমাজের দরিদ্রতম সদস্যদের খাদ্য ও জ্বালানী শক্তির খরচে ভর্তুকি সহায়তা দিতে হবে বিভিন্ন দেশের সরকারকে।
বিশ্বের মানুষ তাদের জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সাথে লড়াই করছে মন্তব্য করে তিনি বিবিসিকে জানান, সরাসরি মানুষকে ভর্তুকি প্রদান করে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। যদিও সরকার অনেক সাহায্য দিচ্ছে কিন্তু সমালোচকরা যুক্তি দিচ্ছেন সেটি পর্যাপ্ত নয়।
যখন জীবনযাত্রার সংকটের কথা আসে তখন দুই ধরণের অগ্রাধিকারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, একটি হল অত্যন্ত দরিদ্র মানুষ। যারা সমাজেরই অংশ এবং এখন তারা খাদ্য এবং জ্বালানীর উচ্চমূল্যের সাথে লড়াই করছে। তাদের জন্য পাশে যথাযথ সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়াতে হবে। দ্বিতীয়টি হলো ইউক্রেনের যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসাগুলিকে সহায়তা করা।
বিশ্ব ব্যাংকের ভূমিকার বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে এবং সমৃদ্ধি বাড়াতে সরকারের সাথে কাজ করে বিশ্ব ব্যাংক।
খাদ্যের দাম এই বছর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, সেই সাথে তেল এবং গ্যাসের দামও তীব্রভাবে বেড়েছে। এটিকে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তিনি।
এর কারণ হিসেবে তিনি ২টি বিষয়কে উল্লেখ করেছেন। একটি করোনাভাইরাস মহামারী এবং অন্যটি ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাব। যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত রাশিয়া ও ইউক্রেন শস্য ও হাইড্রোকার্বনের প্রধান রপ্তানিকারক দেশ।
মন্দা উদ্বেগ
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এই পণ্যগুলির গুরুত্ব বহু দেশে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হারকে কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। যুক্তরাজ্যে ৯ শতাংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ইউরোজোনে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে।
দাম বৃদ্ধির গতি রোধ করতে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কগুলি সুদের হার বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। যার ফলে বিশেষজ্ঞগণ মন্দার ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন৷
মিসেস জর্জিয়েভা বলেন, মহামারীকালে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে উচ্চ ঋণ নিয়েছে অনেক দেশ। এরপর বিশাল ঋণ শোধ করতে হয়েছে যা তাদের উপর বিশাল প্রভাব ফেলবে। সে বিষয়ে আইএমএফ সতর্ক রয়েছে বলেন উল্লেখ করেন তিনি।
এটি মাথায় রেখে তিনি বলেন, সরকারগ তারা কত টাকা ব্যয় করেছে এবং তারা কী ব্যয় করেছে সে সম্পর্কে খুব সতর্ক হওয়া দরকার।
বিশ্বকে খাবার যোগান দেয়া
আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক সহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলির একটি গ্রুপ এই সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মোকাবেলায় একটি বড় পরিকল্পনা চালু করেছে।
এটির নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন।
মিসেস জর্জিভা বলেন, প্রচুর খাবার থাকলেও তা সমানভাবে বিতরণ করা হয় না।
বাণিজ্যকে উন্মুক্ত রাখতে হবে মন্তব্য করে তিনি জানান, আমাদের এমন পরিস্থিতি থাকা উচিত নয় যেখানে দেশগুলি তাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাদ্য মজুদ রাখে এবং সেগুলো অন্য দেশে রপ্তানিতে যেকোন বাধা তৈরি করে।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম উৎপাদক কিন্তু রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। নরেন্দ্র মোদির সরকার বলছে যে কোনো এক সময়ে নিষেধাজ্ঞা সংশোধন করা যেতে পারে।
“আমি সত্যিই তাদের পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করব, কারণ এটি বিশ্বের জন্য একটি কঠিন মুহূর্ত।”