আজিমপুর কবরস্থান জামে মসজিদের খাদেম হানিফ শেখ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো।
পিবিআই বলছে, ওই মসজিদের প্রধান খাদেম হিসেবে কর্মরত ছিলেন সাইফুল ইসলাম (৩৮)। তবে তার কাজে অসন্তুষ্ট মসজিদ কর্তৃপক্ষ গত মে মাসে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। এরপর প্রধান খাদেম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় হানিফ শেখকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই খুন হন হানিফ।
মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডি পিবিআই প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, পদ হারিয়ে সাইফুলকে ক্ষুব্ধ হন। সহকারী খাদেম হয়েও সে প্রধান খাদেমকে বিভিন্ন কাজের নির্দেশনা দিতে থাকেন। এ নিয়ে সাইফুলের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগও করেন হানিফ। এসব বিষয়ের পাশাপাশি হারানো পদ ফিরে পেতে হানিফকে খুন করেন সাইফুল।
সোমবার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রো। প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডের দায়ও স্বীকার করেছেন তিনি।
বনজ কুমার বলেন, ‘আজিমপুর গোরস্থান মেয়র হানিফ জামে মসজিদটি গত বছরের ৪ নভেম্বর উদ্বোধনের পর সাইফুল খাদেম হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু তিনি সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন না করায় কর্তৃপক্ষ গত রমজানের আগে হানিফকে খাদেম হিসেবে নিয়োগ দেয়।’
‘‘হানিফ তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাইফুলকে বিভিন্ন কাজের জন্য নির্দেশ দিতেন এবং সাইফুলের দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে বলতেন। এই বিষয় নিয়ে সাইফুলের সঙ্গে হানিফের মনোমালিন্য দেখা দেয়। এর জের ধরে এবং নিজের পদ ফিরে পেতে হানিফকে খুনের পরিকল্পনা করেন সাইফুল।’’
পিবিআই প্রধান বলেন, ‘গত ২ জুলাই কাজ করতে বলায় সাইফুল তাতে অস্বীকৃতি জানায় এবং এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটিও হয়। বিকেল চারটার দিকে হানিফ খাবার শেষ করে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পড়েন। ওই সময়ে রুমে কেউ ছিলেন না। এই সুযোগে সাইফুল রান্নঘর থেকে একটি চাকু এনে ঘুমন্ত হানিফের পেটে আঘাত করে।’
‘‘হানিফের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সাইফুল বাইরে থেকে প্লাটিকের বস্তা ও পলিথিন নিয়ে আসেন এবং মৃতদেহ বস্তায় ঢুকিয়ে ব্যালকনিতে একটি বাঁশের ঝুড়িতে রেখে দেন। এ অবস্থায় রাত ৯টার দিকে সুস্থ মস্তিষ্কে সে বাইরে খাওয়া-দাওয়া করে রুমে ফেরত আসে। রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে হানিফের মরদেহ বাইরে একটি ভাঙ্গা কবরস্থানে রেখে আসবে বলে পরিকল্পনা করে। কিন্তু অন্যরা জেগে থাকায় রাত সাড়ে ১১ টার দিকে সিদ্ধান্ত বদল করেন খুনি সাইফুল। তার বাবা মারা গেছে বলে মসজিদ থেকে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে বেরিয়ে যান।’’
ঘটনার পরদিন রাতে মসজিদ পরিচ্ছনতার কাজে নিয়োজিত বাহাউদ্দিন ও নতুন খাদেম ফরিদ নিহত খাদেম হানিফের কক্ষে ঘুমাতে যায়। কিন্তু দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে তারা বস্তা খুলে খাদেম হানিফের লাশ দেখতে পান।
পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।