চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কয়লার অভাবে বন্ধ বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র

দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রোববার রাত ১২টার পর বন্ধ হয়ে গেছে। কয়লার অভাবে তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কর্তৃপক্ষ।

কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে কয়েকদিন থেকে দু’টি ইউনিট বন্ধ ছিল। চালু ছিলো মাত্র ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন। কিন্তু কয়লার অভাবে তাও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কর্তৃপক্ষ।

এর সত্যতা স্বীকার করেছেন পিডিবির সদস্য (বিতরণ) সাঈদ আহমেদ। তিনি বলেন, কয়লা সংকটে ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবদ্যিুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এতে বিদ্যুৎ সংকটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চল বলে তিনি জানিয়েছেন।

‘বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলনকৃত ১ লাখ ৩০ হাজার টন কয়লা গায়েব হয়ে যাওয়ায় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী কয়লা সরবরাহ পাচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। বর্তমান বাজার দরের ২২৪ কোটি টাকার কয়লা ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা গয়েব হয়ে গেছে।’

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও একজন মহাব্যবস্থাপককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেই সাথে আরও একজন মহাব্যবস্থাপক ও উপ-মহাব্যবস্থাপককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে কয়লা খনি কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বেশ তোলাপাড় চলছে।

ঘটনাটি তদন্তে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন এন্ড মাইনস) মো. কামরুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু ক্যামরার সামনে মুখ খুলছেনা কেউ।

জানা যায়, বড়পুকুরিয়া খনিতে কয়লা মজুদের পরিমাণ কাগজে-কলমে রয়েছে একলাখ ৪০ হাজার টন। এর আগে ২০০৫ সালের কয়লা মজুদ এবং বিক্রির হিসাব পর্যালোচনা করে এই হিসাব দাঁড় করিয়েছে খনি কর্তৃপক্ষ। এই হিসাবই পিডিবিকে মৌখিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল। কিন্তু খনি থেকে উত্তোলনের পর মজুদাগারের সব কয়লা জড়ো করে দেখা গেছে, সেখানে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টনের মতো কয়লা রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০৫ সাল থেকে উত্তোলন, বিক্রি ও মজুদ হিসাব করে কাগজে কলমে এক লাখ ৪০ হাজার টন কয়লা দেখানো হয়েছে। অথচ এখন এই মজুদের পরিমাণ ১০ হাজার টন। বাকি একলাখ ৩০ হাজার টন কয়লা কোথায় গেল, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বড়পুকুরিয়া খনি সংশ্লিষ্টরা জানান, এই খনি থেকে খোলা বাজারে কয়লা বিক্রি করা হয়। এই বিক্রিতে একটি মহল বেশি পরিমাণ কয়লা বিক্রি করে খাতায় কম হিসাব দেখাতে পারে। আবার কয়লা না তুলেও চীনা কোম্পানি অতিরিক্ত উত্তোলন দেখিয়ে বেশি অর্থ নিয়ে যেতে পারে। তবে, সবকিছুই তদন্ত শেষে জানা যাবে।

গত সপ্তাহে খনির শিফট পরিবর্তনের সময় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কয়লা সংকটে পড়ায় বিষয়টি সবার নজরে আসে। পিডিবির সদস্য সাঈদ আহমেদই কয়লা খনি পরিদর্শনের গিয়ে মাত্র ১০ হাজার টন কয়লা মজুদ পান। ওই সময় তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যেই কয়লার অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাবে। ওই সময় কয়লা গায়েবের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।’

তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হাকিম জানিয়েছেন, ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিট চালু রাখতে দৈনিক ৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন। কিন্তু বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দিনে ৬০০ থেকে ৭০০ টন কয়লা সরবরাহ করেছে। এতে প্রথম, দ্বিতীয় ইউনিটটি বন্ধ হওয়ার করা হয়।

কয়লার অভাবে রোববার রাত ১২টার পর থেকে তৃতীয় ইউনিটটিও বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। তবে এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে মুখ খুলছেনা কেউ।

ব্যবস্থাপনা পরচিালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দনি আহমদ বলেন, ২০০৫ সাল থেকে এ র্পযন্ত এক কোটি ২০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা হয়। খোলা আকাশের নিচে কয়লা রাখা হয়। রোদে শুকিয়ে, পানিতে ধুয়ে, বাতাসে উড়ে গেছে কয়লা। মাটিতে মিশে অনেক কয়লা নষ্ট হয়েছে। এটা বোর্ডকে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে কাজ করছে র্বোড। যে অভিযোগ উঠেছে তা কোনো ভাবইে প্রমাণ করা যাবে না। তদন্তে সিস্টেম লসের বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।

বড়পুকুরয়িা কোল মাইনিং কোম্পানরি মহাব্যবস্থাপক এবএিম কামরুজ্জামান জানান, আগামী সেপ্টম্বর মাস থেকে নতুন ফেইজ থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হবে। কয়লা উত্তোলন শুরু হলেই কয়লার এ সংকট কেটে যাবে।