মুক্ত করো ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধরো নিজেরে করো জয়’.. নারী তার সাহসিকতা দিয়ে জয় করছে সব বাধা।দূর্গম এভারেস্ট থেকে শুরু করে অতল সমুদ্র সর্বত্র নারীর জয়জয়কার। কিন্তু অাসলেই কি নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে? হয়েছে সমতায়ন? কেন নারীরা আজ পা বাড়াচ্ছে জঙ্গিবাদের মতো কর্মকাণ্ডে?
প্রশ্নগুলো নিয়ে সম্প্রতি ‘অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা’ জয়ী কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা বলেছে চ্যানেল আই অনলাইন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নারীর মেধা ও শ্রমের মর্যাদাই নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতায়নের হাতিয়ার।নারীর কাজের সমর্থন তাদের অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। আবার অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অভাবই নারীকে জঙ্গিবাদের পথে নিয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন তারা।
নারীর ক্ষমতায়নে শিক্ষা জরুরি, শিক্ষিত নারীরাই হয়ে ওঠে আত্মবিশ্বাসী। সেক্ষেত্রে নারীরা নিজেদের নারী মনে না করে মানুষ ভাবাটা অনেক বেশি জরুরি বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।
তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতায়নে পুরুষের ইতিবাচক আচরণ প্রয়োজন। নারীর ক্ষমতায়নে নারীরাও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়, এই অবস্থা থেকে নারীদের সরে আসতে হবে। বাড়িয়ে দিতে হবে পারস্পরিক সহযোগিতার হাত।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অভাব নারীদের জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।এ বিষয়ে তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারীরা কখনো জঙ্গিবাদের পথে পা বাড়ায় না। শিক্ষার অভাবে যেসব নারীরা স্বাবলম্বী হতে পারেনা, তারা স্বামীর উপর নির্ভরশীল।এই নির্ভরশীল নারীদের নেই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। সেক্ষেত্রে তারা স্বামীর কথা শুনতে বাধ্য হচ্ছে এবং জড়িয়ে পড়ছে জঙ্গিবাদি কর্মকাণ্ডে।
এ বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জেবা ইসলাম সেরাজ অবশ্য কিছুটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেখছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক মনে করেন, নারীদের রয়েছে বিস্তর ক্ষমতা। একটা পুরুষ যে কাজ করতে পারে তার চারগুণ কাজ করতে পারে একজন নারী। নারীরা সংসার করছে। চাকুরি করছে । বাচ্চা সামলাচ্ছে। সব দিকেই খেয়াল রাখছে একজন নারী। নারীরা পরিবারের প্রতি যেমন দায়িত্বশীল ঠিক তেমনিভাবে সমাজের প্রতিও দায়িত্বশীল।
পুরুষরা নারীদের কাজগুলোকে সমর্থন করলেই নারী-পুরুষের মধ্যে সমতায়ন সম্ভব বলে মনে করেন এই অধ্যাপক।
নারীদের মেধা ও শ্রমের মর্যাদা দেয়া হলেই সম্ভব নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতায়ন উল্লেখ করে করে তিনি বলেন, নারীরা তাদের পরিবারে ও কর্মক্ষেত্রে যদি সমান সমর্থন পায় তাহলেই তারা এগিয়ে যাবে। মেয়েদের কাজ ছেলেদের থেকে অনেক বেশি। এ থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায় মেয়েদের সহনশীলতা, ধৈর্য্য, কর্মক্ষমতা ছেলেদের থেকে অনেক বেশি।
নারীদের জঙ্গিবাদ থেকে দুরে রাখতে করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, মেয়েদের জঙ্গিবাদে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। একটা মেয়ের পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব না তার সন্তানদের জীবন অনিরাপত্তার দিকে ঠেলে দেয়া।
এক্ষেত্রে তাদের জঙ্গিবাদে আসার পেছনের কাহিনীটা তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যদি সঠিক অনুসন্ধান করে এর প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা যায়, তাহলেই বোঝা যাবে মেয়েরা কেন এ পথে আসছে।
তিনি আরও বলেন, জঙ্গিবাদ থেকে সন্তানদের দুরে রাখতে সমাজের সঙ্গে সঙ্গে পিতা-মাতার ভূমিকা প্রয়োজন । বাবা-মায়েদের তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে সন্তানদেরকে বড় করে তুলতে হবে। বুঝতে হবে সন্তানরা কোন বয়সে কোন ধরণের সমস্যার মধ্য দিয়ে যায়। নিজেদেরকে সন্তানের পর্যায়ে নিয়ে যেয়ে তাদের বোঝাতে হবে। সন্তানরা যদি বাবা-মায়ের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে পারে তাহলেই যথেষ্ট।
প্রতিবন্ধী নারী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতায়নে যা দরকার তা হল নারীর জন্য উপযুক্ত কর্মপরিবেশ। নারী ঘরে বাহিরে যেখানেই কাজ করুক না কেন তাকে যদি উপযুক্ত পরিবেশ দেয়া হয় তাহলেই সে তার মেধা ও শ্রমের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারবে। উপযুক্ত কর্মপরিবেশই ক্ষমতায়নের প্রথম ধাপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারীকে পুরুষের সমপর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে তাদের সুযোগ করে দিতে হবে।
নারীরা অবচেতন মনে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ তরে তিনি বলেন, নারীরা পুরুষের সহকর্মী হিসেবে জঙ্গিবাদে আসছে। স্বামী ও সন্তানের নিরাপত্তা বিধান মেয়েদের অন্যতম দায়িত্ব। আর এই স্বামী যখন জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে তখন স্বাভাবিকভাবেই নারীরাও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। তবে সুশিক্ষা, চিন্তার স্বাধীনতা, ও নারী ক্ষমতায়নই মেয়েদের জঙ্গিবাদ থেকে দুরে রাখতে পারে বলে মনে করেন তিনি।