নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে হামলার ঘটনায় ১৪ বছরের এক কিশোরের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার বাবা।
জন মিলনে নামের ওই ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, তার ছেলে সাইয়াদ মিলনে ক্যাশমিয়ার হাই স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ত। প্রতি শুক্রবার মা এবং বন্ধুদের সঙ্গে ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে যেত সে। গত শুক্রবার হামলার সময়ও সে মসজিদেই ছিল।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি নিউজিল্যান্ডের গণমাধ্যম এনজেডএমই’কে বলেন, ‘আমি আমার ছোট্ট সাহসী ছেলেটাকে হারিয়ে ফেললাম, ও সবেই ১৪’তে পা দিয়েছিল।’
প্রথমে নিউজিল্যান্ড কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত না করলেও ছেলের মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন বাবা। কারণ সাইয়াদকে মসজিদের ভেতর দেখা গিয়েছিল।
জন জানান, ঘটনাস্থলে পরিচিত বেশ কয়েকজন সাইয়াদকে মসজিদের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেছে। তার শরীরের নিচের অংশ রক্তে ভেসে যাচ্ছিল।
‘আমি জানি ও কোথায় আছে। আমি জানি ও এখন শান্তিতে আছে।’
পরে অবশ্য প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকায় সাইয়াদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
জন জানান, চমৎকার ফুটবল খেলত সাইয়াদ। কিন্তু জন্মের সময়ই অসুস্থতার কারণে তাকে হারাতে বসেছিল তার পরিবার। ছোট্ট জীবনের পুরোটা সময়ই তাকে যুদ্ধ করতে হয়েছে।
‘কতবার যে তার সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে…কিন্তু প্রতিবারই সে নিজের চেষ্টায় সবকিছু ছাপিয়ে ওপরে উঠেছে। ও খুবই সাহসী ছিল। আমার ছোট্ট সাহসী যোদ্ধা। এটা মেনে নেয়া যে কতটা কষ্টের….এমন একজন তাকে গুলি করে মেরে ফেলল যার কারও কিছুতেই কিছু আসে যায় না,’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন জন।
জন মিলনের আরও একটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে। বড় ছেলেটিও সাধারণত মা ও ভাইয়ের সঙ্গে মসজিদে যায়। কিন্তু গত শুক্রবার একটি স্কুল ট্রিপে থাকায় তার আর সেদিন মসজিদে যাওয়া হয়নি। তার জমজ বোনও ঘটনার সময় স্কুলে থাকায় বেঁচে গিয়েছিল।
স্বঘোষিত শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ২৮ বছর বয়সী ট্যারান্ট শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের আল নূর এবং লিনউড মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর অতর্কিতে বন্দুক হামলা চালান। হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫০-এ দাঁড়িয়েছে বলে স্থানীয় সময় রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ। আর আহত ৪৭ জনের মধ্যে দু’ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেলেও একটু দেরিতে যাওয়ায় বেঁচে যান ওই সময় নিউজিল্যান্ডে সফররত বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।
শনিবার আটাশ বছর বয়সী ট্যারান্টকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে জামিন অযোগ্য পুলিশি হেফাজতে রিমান্ডের আদেশ দেন। ৫ এপ্রিল ট্যারান্টকে আবারও আদালতে হাজিরার তারিখ দেয়া হয়েছে। ততদিন তিনি পুলিশের হেফাজতেই থাকবেন।
ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলায় নিহতদের পরিচয় শনাক্তের পর আজ থেকে মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করছে কর্তৃপক্ষ।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে হামলায় নিহতদের পরিচয় শনাক্ত শেষে মরদেহ গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছেন স্বজনরা। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জ্যাসিন্ডা আরডার্ন জানিয়েছেন, সব ধরনের প্রক্রিয়া শেষে আজ থেকে মরদেহ হস্তান্তর শুরু হয়ে চলবে বুধবার পর্যন্ত।