চট্টগ্রাম থেকে: নাগালে থাকা লক্ষ্যটাও কঠিন হয়ে উঠেছিল হঠাৎই ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে। লিটন-শান্ত-রিয়াদ-সাব্বির-আফিফদের ব্যর্থতার দিনে সাকিব আল হাসান লড়লেন বুক চিতিয়ে। অধিনায়কের অসাধারণ এক ফিফটিতে ১৩৯ রান ডিঙিয়ে আফগান ‘জুজু’ কাটাল বাংলাদেশ।
শনিবার ফাইনালের মহড়ায় টাইগারদের জয় এল ৪ উইকেটে, ৬ বল হাতে রেখেই। মঙ্গলবার শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ত্রিদেশীয় টি-টুয়েন্টি সিরিজের ট্রফির লড়াইয়ে নামবে স্বাগতিক ও সফরকারী এই দুদল।
স্কোর: আফগানিস্তান-১৩৮/৭, বাংলাদেশ-১৩৯/৬
শেষ তিন ওভারে দরকার ছিল ২৭ রান। বিশ্বসেরা লেগস্পিনার রশিদ খানের তখনও ২ ওভার বাকি। এমন ম্যাচটাই বাংলাদেশ জিতে গেল এক ওভার হাতে রেখেই। ৪৫ বলে সাকিবের অপরাজিত ৭০ রানের ইনিংসটা হয়ে থাকল স্মরণীয়। কেননা ৫ বছর অপেক্ষার পর আফগানদের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টিতে জয় এল। প্রথম জয়টি এসেছিল ঘরের মাটিতেই। ২০১৪ সালের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে, মুখোমুখি প্রথম দেখায়। পরে টানা চার হার।
বাংলাদেশের জয়ে সাকিবের সঙ্গে শেষদিকে দারুণ অবদান রেখেছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এ ডানহাতি ১২ বলে ১৯ রান করে থেকেছেন অপরাজিত। টপঅর্ডারে দুই অঙ্ক ছুঁতে পেরেছেন আর কেবল মুশফিকুর রহিম। ১২ রানের মধ্যে দুই ওপেনার লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত সাজঘরে ফেরার পর সাকিবের সঙ্গে মুশফিকের ৫৮ রানের জুটিতেই ম্যাচে থাকে বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানকে অল্প রানে আটকে রাখতেই টস জিতে আগে বোলিং নেয়া। পরিকল্পনা মতোই আগায় বাংলাদেশ। দারুণ শুরুর পরও তাই আফগানরা তুলতে পারল মাত্র ১৩৮। সহজ লক্ষ্যটাই কঠিন হয়ে যায় বাজে শটে লিটন-শান্ত শুরুতেই আউট হওয়ায়।
শুরু থেকেই দায়িত্ব নিয়ে খেলতে থাকেন সাকিব। বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যানের লড়াকু ফিফটি অপরাজিত ৭০ রানের, ইনিংসটি সাজানো ৮টি চার ও এক ছয়ে। এটি সাকিবের নবম টি-টুয়েন্টি ফিফটি।
খেলার মাঝে ১০ মিনিটের একটা বিরতি পড়েছিল ফ্লাড লাইটের আলো কমে আসায়। তাতে অবশ্য ব্যাটিংয়ের ছন্দে ধাক্কা লাগেনি। বিরতির পরও প্রথম বল থেকেই সাবলীল ছিলেন সাকিব।
শুরুতে টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নেমে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন বাংলাদেশি বোলাররা। দ্বিতীয় ওভারে রহমতউল্লাহর দেয়া একটি সহজ ক্যাচ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ। সেই সুযোগ পেয়ে ৭৫ রানের বিশাল জুটি গড়েন দুই আফগান ওপেনার।
দশম ওভারে বল করতে এসেই ৩৫ বলে ৪৭ রান করা হযরতুল্লাহ জাজাইকে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙেন আফিফ হোসেন। এক বল পরেই এই তরুণ অফস্পিনে ফিরিয়ে দেন আসগর আফগানকে (০)। কোনো রান না দিয়ে প্রথম ওভারে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচের লাগামটা টেনে ধরেন আফিফ।
অথচ এই বোলারকেই আগের ম্যাচগুলোতে একবারও ব্যবহার করেননি অধিনায়ক সাকিব। যা নিয়ে নানা মাধ্যমে বেশ আলোচনাও হয়েছে।
ব্যাটের সঙ্গে বোলিংয়েও যে সিদ্ধহস্ত, সেটা বিপিএলের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেই ভালো প্রমাণ করেছিলেন আফিফ। বিসিবি একাদশের বিপক্ষে ফতুল্লার ওই ম্যাচে জিম্বাবুয়ের আউট হওয়া তিন উইকেটের সব কটিই নিয়েছিলেন তিনি। এমন বোলিং ফিগারের পরও টানা তিন ম্যাচে তার বল ভাগে না পাওয়া একরকম আফসোসই ছিল! অবশেষে সেই আফসোস অনেকটাই ঘুচল দারুণ বোলিংয়েই।
আফিফের পর বাংলাদেশের হয়ে তিননম্বর সফলতা আনেন মোস্তাফিজুর রহমান। নিজের বলে দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে রহমতউল্লাহকে (২৭ বলে ২৯) ফেরান ফিজ। এদিন থিতু হতে পারেননি আফগানদের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নবি (৪)। সাকিবের ঘূর্ণিতে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন আফগানদের সাবেক অধিনায়ক।
পরে গুলবাদিন নায়েবের (১) রানআউটে ব্যাপক চাপে পড়ে আফগানিস্তান। করিম জানাতকে (৩) ফিরিয়ে সেই চাপের ভর আরও বাড়ান শফিউল ইসলাম। শেষদিকে শফিকউল্লাহর ১৭ বলে ২৩ ও অধিনায়ক রশিদ খানের ১১ রানের জোরে ১৪০ ছুঁইছুঁই স্কোর পায় আফগানিস্তান।
অল্প রান নিয়েও লড়াই জমিয়ে রেখেছিল রশিদ খানের দল। প্রতিপক্ষ অধিনায়কের করা ১৮তম ওভারে সাকিব-মোসাদ্দেক মিলে ১৮ রান নিলে ম্যাচটাও নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ।