পৌষের সকালে মিষ্টি রোদ বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের দর্শকদের কাছে। টেস্ট ম্যাচের শুরুতে হাজারো দর্শকের নজিরবিহীন উপস্থিতি ইতিহাসের সাক্ষী হতে। সকালে সব কিছুই হচ্ছিল নিজেদের চাওয়া মতো। দ্রুত তিন উইকেট তুলে নিয়ে বড় আশাই জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে ক্যাচ মিসের পর একটু একটু করে ম্যাচ হেলে যায় ভারতের দিকে। ৭৪ রানে ৭ উইকেট হারানো দল পরের ৭১ রান তুলেছে কোনো উইকেট না হারিয়ে।
তিন উইকেটের জয় নিয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করল ভারত। সফরকারীদের অষ্টম উইকেট জুটি ভাঙার সুযোগ স্বাগতিকরা পেয়েছিল অনেক আগেই। ১ রানে জীবন পাওয়া রভিচন্দ্রন অশ্বিন ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন। ৪৭তম ওভারে মিরাজকে দুটি চার ও এক ছয়ে ১৬ রান তুলে চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনেই তুলে নেন জয়।
বাংলাদেশ: ২২৭ ও ২৩১, ভারত: ৩১৪ ও ১৪৫/৭
শ্রেয়াস আয়ার ২৯ রানে অপরাজিত থাকে। ৫ উইকেট পাওয়া মিরাজের বলে শর্ট লেগে অশ্বিনের ক্যাচ ছাড়েন মুমিনুল হক।
২০২২ সালের শুরুতে এসেছিল অভাবনীয় এক সাফল্য। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানায় বাংলাদেশ। জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ইতিহাস গড়ার পর পুরো বছরে লাল বলে আর জয় পায়নি সাকিব-মুশফিকরা। মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে বছর শেষের টেস্টে জয়ের দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়ে বাংলাদেশ মাঠ ছেড়েছে আক্ষেপ নিয়ে।
ভারতের লক্ষ্য খুব বড় ছিল না। ১৪৫ রানের। তবে তৃতীয় দিন বিকেলে সফরকারীদের ৪৫ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে আশায় জাগায় বাংলাদেশ। চতুর্থ সকালে দ্রুত তিন উইকেট তুললে আশা আরও বড় হয়। টেস্টে শক্তিশালী দলটির বিপক্ষে প্রথম জয়ের সুযোগ বাস্তবতায় রূপ দিতে পারেনি শ্রেয়াস ও অশ্বিন দেয়াল হয়ে দাঁড়ানোয়।
সকালে আম্পায়ার্স কলে এলবিডব্লিউ থেকে বাঁচলেও পরের ওভারে রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি জয়দেব উনাদকাট। সাকিব আল হাসানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন সাজঘরে। পরে মিরাজ দুই উইকেট তুলে নেন।
আগের দিন অসাধারণ বোলিংয়ে মিরপুর টেস্টে প্রাণ ফেরান মিরাজ। এ অফস্পিনারের তৃতীয় শিকার হন বিরাট কোহলি (১)। আউট হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে রাগ ঝাড়েন বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ওপর। বেশ উত্তপ্ত দেখা যায় তাকে।
তার আগে মিরাজ ফেরান চেতেশ্বর পূজারা (৬) ও শুভমন গিলকে (৭)। প্রথম উইকেটটি নেন সাকিব আল হাসান। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই ভারত অধিনায়ক লোকেশ রাহুলকে (২) আউট করেন।
জাকির হাসান ও লিটন দাসের ফিফটিতে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ২৩১ রান তুলে অলআউট হয়। প্রথম ইনিংসে ৮৭ রানের লিড পাওয়া সফরকারীদের লক্ষ্য দেড়শর মধ্যেই থাকে।
বাংলাদেশের লিটন ৭৩ ও জাকির করেন ৫১ রান। নুরুল হাসান সোহান ও তাসকিন আহমেদ, উভয়ের ব্যাট থেকেই আসে ৩১ রান।
আক্সার প্যাটেল তিনটি, রভিচন্দ্রন অশ্বিন ও মোহাম্মদ সিরাজ নেন দুটি করে উইকেট।
৮৭ রান পিছিয়ে থেকে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭ রান তুলে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ। তৃতীয় দিনের সকালের সেশনে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা।
মিডলঅর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় বেশি দূর যেতে পারেনি বাংলাদেশ। অষ্টম উইকেট জুটিতে লিটন-তাসকিন ৬০ রান যোগ না করলে দুইশর আগেই গুটিয়ে যেতো স্বাগতিকরা।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ২২৭ রানে জবাবে ভারত ৩১৪ রানে অলআউট হয়। ৯৪ রানে ভারতের ৪ উইকেট তুলে লিডের আশাও জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে একাধিক ক্যাচ মিস ও স্টাম্পিংয়ের সহজ সুযোগ হারানোয় সেটি সম্ভব হয়নি।
রিশাব পান্ত ও শ্রেয়াস আয়ারের ১৫৯ রানের পঞ্চম উইকেট জুটিতেই লিড নেয় ভারত। তারপর অবশ্য খুব বেশি দূর যেতে পারেনি সফরকারীরা। তাইজুল ও সাকিব আল হাসান চারটি করে উইকেট নিলে তিনশ পেরিয়ে থামে দলটি।