চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কোন সিপাহী, কোন জনতা, কিসের বিপ্লব

সেই ১৯৭৫ সাল থেকে শুনে আসছি ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের দিন। বছরের পর বছর এই দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবে পালন হতে দেখেছি, পালিত হতে দেখেছি সংহতি দিবস হিসেবে। বলা হতো এই সংহতি সিপাহী আর জনতার।

১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত রক্তাক্ত সময় নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে। তবে সবই সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের লেখা। একমাত্র ব্যতিক্রম ‘সৈনিকের হাতে কলম’। নায়েক সুবেদার মাহবুবর রহমানের লেখা। সুবেদার মাহবুব বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সভাপতি ছিলেন। এই সেই বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা, যাদের হাত ধরে সমাজ বিপ্লব করতে চেয়েছিলেন কর্নেল তাহের।

পুরো বইটি পড়ে আমি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছি। এই যদি হয় বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার প্রধান ব্যক্তির চিন্তা ভাবনা, তাহলে সেই বিপ্লব নিয়ে আতঙ্কিত হওয়াই স্বাভাবিক। সন্দেহ নেই সুবেদার মাহবুব অত্যন্ত সাহসী। কিন্তু বিপ্লবী কোনোভাবেই বলা যায় না। খানিকটা বিপথগামী বলা যায়। আর বড় ধরণের ভারত বিদ্বেষী।

সুবেদার মাহবুব, মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। পাকিস্তান থেকে ছুটি নিয়ে দেশে এসে যুদ্ধে যোগ দেন। যুদ্ধ করেছেন কাদের সিদ্দিকীর সাথে। সেই যুদ্ধের যে বর্ণনা তিনি দিয়েছেন তা ভয়াবহ, বিপজ্জনক এবং বিপর্যকর।

একটা উদাহরণ দেই
যুদ্ধ শেষ। সেই সময়ে কথা- ‘টাঙ্গাইলে ফেরার পর কাদের সিদ্দিকী সবাইকে নির্দেশ দিলেন সরকারের কাছে অস্ত্র জমা দিতে। হঠাৎ করে কাদেরের এই নির্দেশ শুনে ছেলেদের মধ্যে একটা বিদ্রোহের সূচনা হল। সবাই স্থির করল, কেহই অস্ত্র জমা দিবে না। প্রয়োজনে আমরা কাদের সিদ্দিকীকে শেষ করে দিব।’

সেই অস্ত্র গোপনে দিয়ে দেওয়া হল ভাসানী ন্যাপের মুসাকে। রাতের বেলা ৩০/৪০টা গরুর গাড়ি ভর্তি করে অস্ত্র সরিয়ে ফেলা হল। ‘দেখে দেখে ভাল ভাল অস্ত্র সরায়ে ফেলা হল। আর বাকি ছেলেদের বললাম তোমরা ইচ্ছা করলে যার যার মত অস্ত্র নিয়ে যেতে পার। ভবিষ্যতে কাজের জন্য। অস্ত্রাগারের দরজা খুলে দেওয় হল। সারারাত্রি যে যা পারল অস্ত্র নিয়ে গোপন করল।’

এরপর সুবেদার মাহবুব চলে যান রক্ষী বাহিনীতে। সেখানেও আছে নানা কীর্তি। পরে আবার সামরিক বাহিনীতে ফিরে আসেন। আরেক জায়গায় লিখেছেন, ‘টাঙ্গাইলে কাদের ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যার যার কাছে গোপন অস্ত্র ছিল তা দিয়ে ২ জন যুবক একটা ডাকাত বাহিনী সংগঠিত করলো। এই সংবাদ পেয়ে আমি ঢাকা ক্যান্টনমন্টে থেকে টাঙ্গাইলে ডাকাত বাহিনীর সাথে দেখা করি। দেখতে পাই ঐ বাহিনীর অধিকাংশ ছেলে আমার নিজের।……….আমি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম, ভাই সাহেবরা আপনারা যে উদ্দেশ্যে আজ টাঙ্গাইলে ২০০ জন লোক নিয়ে ডাকাত বাহিনী গঠন করেছেন, যদি কিছু মনে না করেন আর আমাকে আপনাদের ভাই হিসেবে গ্রহণ করেন তা হলে আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।’

এই সুবেদার মাহবুবই তাহেরের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সভাপতি এবং মাহবুবই রাত ১২টার পরে প্রথম গুলি ছুড়ে সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা করেছিল। বলে রাখা ভাল এই মহান বিপ্লবী সুবেদার মাহবুব তাহেরের বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হয়ে পুরস্কার হিসেবে মস্কোতে বাংলাদেশ মিশনে চাকরি পেয়েছিলেন। এখন তিনি সপরিবার জার্মানিতে আছেন।

বিপ্লব হবে, রক্ত ঝড়বে না-তা কী করে হয়। বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংসতা দেখে যারা আতকে উঠেছিলেন তাদের বলি যে, বাংলাদেশে এটিও অনেক পুরানো ঘটনা। সিপাহী বিপ্লব ছিল হত্যা উৎসব। অ্যান্থনি মাসকারেনহাস বলেছেন, এই সময়ে সেনাবাহিনীতে অফিসারের সংখ্যা ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছিল।

ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত লিখেছেন, ‘এদের মধ্যে হামিদা নামে এক লেডি ডক্টর আর একজন ডেন্টাল সার্জন করিমকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আক্রোশে হত্যা করা হয়। আর দুজন অফিসার ক্যাপ্টেন আনোয়ার আর লে. মোস্তাফিজ যারা বাংলাদেশ হকি ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন তাদেরকে টিভি স্টেশনের কাছে তাড়া দিয়ে নিয়ে হত্যা করা হয়।’

এবার খালেদ হত্যা প্রসঙ্গ। লে. কর্ণেল হামিদ লিখেছেন,
‘৭৫ সালের ৭ নভেম্বর রাত ১২টায় বঙ্গভবনে সিপাহী বিপ্লবের খবর পেয়ে জেনারেল খালেদ কর্নেল হুদা ও হায়দারকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামানের বাসায় যান। সেখান থেকে শেরে বাংলা নগরে অবস্থিত ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে যেতে সিদ্ধান্ত নেন। উল্লেখ্য, ১০ম বেঙ্গলকে বগুড়া থেকে খালেদই আনিয়েছিলেন তার নিরাপত্তার জন্য। পথে ফাতেমা নার্সিং হোমের কাছে তার গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে তিনি হুদা ও হায়দারসহ পায়ে হেঁটেই ১০ম বেঙ্গলে গিয়ে পৌছেন।

উক্ত ইউনিটের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন কর্নেল নওয়াজিস। খালেদের আগমনের খবর পেয়ে তৎক্ষণাত তিনি টেলিফোনে টু ফিল্ডে সদ্যমুক্ত জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তার ইউনিটে খালেদের উপস্থিতির কথা জানান । তখন ভোর প্রায় চারটা। জিয়ার সাথে ফোনে তার কিছু কথা হয়। এরপর তিনি মেজর জলিলকে ফোন দিতে বলেন। জিয়ার সাথে মেজর জলিলের কথা হয়।

ভোরবেলা দেখতে দেখতে সিপাহী বিদ্রোহের প্রবল ঢেউ ১০ম বেঙ্গলে এসে পড়ে। পরিস্থিতি কর্নেল নওয়াজিসের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আফিসার মেসে বসে খালেদ-হায়দার-হুদা সকালের নাস্তা করছিলেন। হুদা ভীত হয়ে পড়লেও খালেদ ছিলেন ধীর, স্থির, শান্ত। হায়দার নির্ভীক নির্বিকারভাবে পরাটা মাংস খাচ্ছিলেন। এমন সময় মেজর জলিল কয়েকজন উত্তেজিত সৈনিক নিয়ে মেসের ভিতর প্রবেশ করেন। তার সাথে একজন বিপ্লবী হাবিলদারও ছিল।

সে চিৎকার দিয়ে জেনারেল খালেদকে বলল- “আমরা তোমার বিচার চাই”! খালেদ শান্তকণ্ঠে জবাব দিলেন,” ঠিক আছে , তোমরা আমার বিচার করো। আমাকে জিয়ার কাছে নিয়ে চলো।”

স্বয়ংক্রিয় রাইফেল বাগিয়ে হাবিলদার চিৎকার করে বললো- “আমরা এখানেই তোমার বিচার করবো।”
খালেদ ধীর স্থির। বললেন, “ঠিক আছে, তোমরা আমার বিচার করো।” খালেদ দু’হাত দিয়ে তার মুখ ঢাকলেন।

ট্যারর-র-র-র! একটি ব্রাস ফায়ার। মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসার জেনারেল খালেদ মোশাররফ যার ললাটে ছিল বীরযোদ্ধার জয়টিকা, মাথায় ছিল মুক্তিযুদ্ধের বীর উত্তমের শিরোপা আর মাথার বাম পাশে ছিলো পাকিস্তানী গোলন্দাজ বাহিনীর কামানের গোলার গভীর ক্ষতচিহ্ন।

কামরার ভেতরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণত্যাগ করলেন আগরতলা ষড়যন্ত্রমামলার অন্যতম আসামী, মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডার বীর বিক্রম কর্নেল নাজমুল হুদা।

কর্নেল হায়দার ছুটে বেরিয়ে যান, কিন্তু সৈনিকদের হাতে বারান্দায় ধরা পড়েন। উত্তেজিত সৈনিকদের হাতে তিনি নির্দয়ভাবে লাঞ্চিত হন। তাকে সিপাহীরা কিল ঘুষি লাথি মারতে মারতে দোতলা থেকে নিচে নামিয়ে এনে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে।’

প্রশ্ন হচ্ছে জিয়া মেজর জলিলকে কি বলেছিলেন?
মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী লিখেছেন, ‘আজও ভাবলে গা শিউরে ওঠে যে, ঢাকা সেনানিবাসের সৈনিকদের যদি সেদিন নিয়ন্ত্রণে আনা না যেত, তাহলে সারা দেশে সামরিক-বেসামরিক পর্যায়ে একটা নেতৃত্বহীন ভয়াবহ উচ্ছৃঙ্খল শ্রেণী সংগ্রাম শুরু হয়ে যেত। সৈনিকদের সেদিনের শ্লোগানই ছিল সিপাহি সিপাহি ভাই ভাই, অফিসারদের রক্ত চাই।’

প্রশ্ন হল, সিপাহীদের মধ্যে আর কারা ছিল। হাবিলদার মেজর আবদুল হাই মজুমদার ছিলেন বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সদস্য। তার এক বছর জেল হয়েছিল। তিনি দাবি করেন যে, ‘ঐ অফিসারদের হত্যা করেছে পাকিস্তান প্রত্যাগত সৈনিকেরা।’

সন্দেহ নেই, কেবল সিপাহী না, হত্যাযজ্ঞে অফিসাররাও ছিলেন। সিনিয়র অফিসারদের নির্দেশে এসব হত্যাকাণ্ড হয়েছিল। আর এই সুযোগ তৈরি হয়েছিল বিখ্যাত এই সিপাহী বিপ্লবের সময়। বিপ্লবী সৈনিকরা তালিকা তৈরি করে হত্যা উৎসবে মেতে উঠেছিল।

মনে রাখা প্রয়োজন, রশীদ-ফারুকরা অনুগত সৈন্যদের ফেলে রেখে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। এসব সৈন্য ৩ থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল অসহায়। এরাও সক্রিয় হয়ে উঠে ৭ নভেম্বর। পাকিস্তান ফেরতরাও যোগ দেয় বিপ্লবীদের সাথে।

শাহ মোয়াজ্জেমকে জেলে ভরেছিলেন খালেদ মোশারফ। সেই শাহ মোয়াজ্জেম জেল থেকে মুক্ত হন। না, বিচারে খালাস পাননি, সৈন্যরা জেলখানায় ঢুকে অনেক জাসদ নেতা, তাহের উদ্দিন ঠাকুর ও তাকে বের করে নিয়ে আসে।

তিনি লিখেছেন, ‘তারা (সৈনিকরা) তখন মহাউল্লাসে বলতে থাকল, স্যার বাড়ি যাবেন পরে, আগে রেডিওতে চলেন। গভর্নমেন্ট গঠন করবেন। মোশতাক সাহেব আবার প্রেসিডেন্ট হবেন। আপনারা বড় মন্ত্রী হবেন। তারপর বাড়ি যাবেন। আপনারা জেলে ছিলেন।

জানেন না বাইরে সিপাহী আর জনতা এক হয়ে বিপ্লব করেছি। ভারতের দালালদের খতম করে দেওয়া হয়েছে। তারা মোশতাক সাহেব ও জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতাচ্যূত করে বন্দী করেছিল। আমরা তাদের মুক্ত করে এনেছি। মোশতাক সাহেব রেডিও অফিসে রয়েছেন। এখুনি নতুন সরকারের ঘোষণা দেওয়া হবে।….. নাজিমউদ্দিন রোডের বাড়িগুলোর দোতলা থেকে, ছাদ থেকে আমাদের ট্রাক লক্ষ্য করে ফুল ছুঁড়ছে, মালা ছুঁড়ে মারছে। হাততালি দিচ্ছে।

চারদিকে সিপাহী-জনতা জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। ‘নারায়ে তকবির-আল্লাহ আকবর’ ধ্বনি আবার ফিরে এসেছে। জয় বাংলা ধ্বনি তিরোহিত।’

বলতে দ্বিধা নেই, তাহেরের বিপ্লবের একটা বড় উপজীব্য ছিল ভারত বিরোধিতা। কর্নেল তাহের তার জবানবন্দীতেও বলেছেন, ‘তেসরা নভেম্বরের পর কি ভয়ার্ত নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এ জাতির জীবন অতিবাহিত হচ্ছিল তা সবারই জানা।……এটা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, খালেদ মোশাররফের পেছনে ভারতীয়দের হাত রয়েছে।’

ইতিহাস সাক্ষী তাহেরের এই কথার কোনো ভিত্তি এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইতিহাস আরও সাক্ষী বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর খুনীদের সাথে রেডিও স্টেশনে তাহেরও ছিলেন। ইতিহাস আরও সাক্ষ্য দেবে যে, খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানে একটি লাশও পড়েনি।

কোন জনতা
সিপাহীদের সাথে তাহলে জনতাও ছিল। কিন্তু ওরা কারা? জাসদতো ছিলই। আরও অনেকে যুক্ত হয়েছিল। বামপন্থী অন্যান্য দল আগে কিছু না জানলেও খবর পেয়ে ৭ নভেম্বর মাঠে নেমেছিল।

হায়দার আকবর খান রনো লিখেছেন, ‘রাতের মধ্যে আমি কাজী জাফর ও মেননের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, এই অভ্যুত্থানে আমাদের অংশ নিতে হবে। কিন্তু কিভাবে? কারা করছে তাও জানি না। যাই হোক, আমরা ভোর থেকে রাস্তায় থাকবো।

সকাল থেকেই আমাদের সকল শক্তিকে সমবেত করে ঢাকার রাস্তায় থাকতে হবে। পরদিন সকাল ৯ টার মধ্যে টঙ্গী থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক মিলের ট্রাক দখল করে ঢাকায় উপস্থিত হল।’

আরও তো অনেকে নেমেছিল। এরা কারা। জনাব রনো আরও লিখেছেন, ‘পরদিন যখন অভ্যুত্থানকারী সৈনিকরা ও তরুণ ছাত্ররা নানা ধরণের বিপ্লবী শ্লোগান দিচ্ছে, তখন জুম্মার নামাজের পর একদল লোক খন্দকার মুশতাকের ছবি নিয়ে বের হয়েছিল।

এত দ্রুত মুশতাকের ছবি এলো কোথা থেকে? তাহলে আগের রাতেই মুশতাকের ছবি ছাপানোর বা জোগাড় করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল?’

জামায়াতসহ যেসব পাকিস্তানপন্থী দলগুলো নিষিদ্ধ ছিল তারা এই দিন কই ছিল? নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এরচেয়ে বড় সুযোগ তো ঐ সময় ছিল না। সুতরাং সিপাহী-জনতার সেই বিপ্লবে এরাও ছিল জনতা।

জাসদ নেতা শাহাজাহান সিরাজ ১৯৮০ সালে একটি রাজনৈতিক রিপোর্টে বলেছিলেন, ‘বস্তুত ৭ নভেম্বর আমরা কী করতে চেয়েছিলাম তা জনগণ জানতো না। ….সত্য বলতে কী অভ্যুত্থান সম্পর্কে আমাদেরও তেমন স্পষ্ট ধারণা ছিল না।’

জাসদ নেতা মাহবুবুর রব সাদী বলেছেন, ‘৭ নভেম্বরের ঘটনাবলী দ্বারা আমরা বুর্জোয়া রাষ্ট্রশক্তির অর্ন্তদেশে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছি এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ওই দুরূহ কাজটি সম্পন্ন করার জন্য আমরা অবশ্যই বিপ্লবী কৃতিত্বের দাবিদার হতে পারতাম।

কিন্তু ঘটনাটি যেভাবে ঘটেছে অবশ্যই বিপ্লবী কৃতিত্ব তো দূরের কথা, বিপ্লবী রাজনীতির ইতিহাসে আমাদেরকে নৈরাশ্যবাদী অপকীর্তির জন্য দায়ী থাকতে হবে।’

তিনি আরেক জায়গায় বলেছেন, ‘বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে আমাদের কার্যকলাপের মধ্যে ডানপন্থী সুবিধাবাদের ঝোঁকের অস্তিত্ব থাকলেও প্রায় সর্বত্র প্রাধান্য বিস্তার করে বিরাজিত ছিল যে ঝোঁকটি তা হচ্ছে বামপন্থী হঠকারিতা।’

সেইসব বিপ্লবীরা এখন কোথায়?
শাহাজাহান সিরাজ: বিএনপি নেতা, অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত বলে পরিচিত।
আসম আবদুর রব: এরশাদের সময় গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
এম এ জলিল: ইসলামী সৈনিক অবস্থায় মারা যান, শেষ দিকে মূল ব্যবসা ছিল আদম ব্যবসা।
আল মাহমুদ: জামায়াতপন্থী কবি।
হাসানুল হক ইনু: নৌকা প্রতীকে সাংসদ হয়ে মন্ত্রী।

সহায়ক গ্রন্থ:
১. শতাব্দী পেরিয়ে: হায়দার আকবর খান রনো। তরফদার প্রকাশনী।
২. বলেছি বলছি বলবো: শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। ঐতিহ্য।
৩. এক জেনারেলের নিরব সাক্ষ্য: স্বাধীনতার প্রথম দশক: মে.জে. মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব.)। মাওলা ব্রাদার্স।
৪. বাংলাদেশ রক্তের ঋণ: অ্যান্থনি মাসকারেনহাস। হাক্কানী পাবলিশার্স।
৫. সশস্ত্র বাহিনীতে গণহত্যা: ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১: আনোয়ার কবির। সাহিত্য প্রকাশ।
৬. বাংলাদেশের রাজনীতি: ১৯৭২-৭৫: হালিম দাদ খান। আগামী প্রকাশনী।
৭. একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ: রক্তাক্ত মধ্য-আগস্ট ও ষড়যন্ত্রময় নভেম্বর: কর্নেল শাফায়াত জামিল। সাহিত্য প্রকাশ।
৮. বাংলাদেশ: রক্তাক্ত অধ্যায় ১৯৭৫-৮১: ব্রি. জে. এম সাখাওয়াত হোসেন। পালক প্রকাশনী।
৯. তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা: লে. ক. এম এ হামিদ। শিখা প্রকাশনী।
১০. সৈনিকের হাতে কলম: নায়েক সুবেদার মাহবুবর রহমান। আলীগড় প্রকাশনী।
১১. অসমাপ্ত বিপ্লব: তাহেরে শেষ কথা: লরেন্স লিফসুলৎস। নওরোজ কিতাবিস্তান।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)