সমাজ পরিবর্তনশীল। পৃথিবীর কোন সমাজই কখনো এক রকম থাকেনি, আর থাকবেও না। তাহলে সমাজের পরিবর্তন হয় কিভাবে? এই নিয়ে সমাজ বিজ্ঞানীদের অনেক রকম তত্ত্ব আছে। এর মাঝে একটা তত্ত্ব বহুল প্রচলিত-সমাজ মূলত পরিবর্তিত হয় দ্বন্দ্বের মাধ্যমে। মোটা দাগে বলতে গেলে এই দ্বন্দ্ব মূলত দুটো শ্রেণীর মাঝে হয়। এই দুই শ্রেণীর দ্বন্দ্বের মাধ্যমেই একটা নতুন সমাজ বের হয়ে আসে।
এই যেমন ধরুন একটা সময় সমাজে দাস প্রথা চালু ছিলো। তখন মূলত দুটো শ্রেণী ছিলো-দাস মালিক ও দাস। কৃতদাসরা তাদের মালিকদের সব কথা শুনত। কোন প্রতিবাদ করতো না। কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে তারাও নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হলো। এতে করে দাস ও দাস মালিকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হলো। সেই দ্বন্দ্বের ফলেই কিন্তু এক পর্যায়ের দাস সমাজের বিলুপ্ত হয়ে সামন্ত প্রথা চালু হয়।
অর্থাৎ আরেকটা নতুন সমাজ। যেখানেও দুটো শ্রেণী তৈরি হলো। সামন্ত প্রভু এবং ভূমি দাস। একটা সময় এই দুই শ্রেণীর মাঝেও দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর ফলে আমরা পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা পেয়েছি। সমাজ পরিবর্তনের এই দিকটি তুলে ধরলাম এই কারণে যে আমাদের বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা আসলে বর্তমানে পরিবর্তনের সেই ধাপ অতিক্রম করছে। দেশে এখন পরিষ্কার দুটো শ্রেণী তৈরি হয়েছে।
এক শ্রেণী যে কোনো কিছুতে প্রশ্ন করতে চাইছে। যাদের বলা হচ্ছে প্রগতিশীল। আরেক শ্রেণী যে কোন কিছুতে প্রশ্ন করার বিপক্ষে। যাদের বলা হচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীল এই দুই শ্রেণীর মাঝে আসলে এই মুহূর্তে দ্বন্দ্ব চলছে। এই দ্বন্দ্বের ফলেই আসলে আমরা একটি নতুন সমাজ পাবো।
এখনেই মূল প্রশ্নটা। সেই নতুন সমাজ কেমন হবে! সেই সমাজ কি সুইডেন, নরওয়ের মতো সহিষ্ণু না হলেও সাধারণ গণতান্ত্রিক দেশ গুলোর মতো পরমত সহিষ্ণু হবে; নাকি পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো হবে! যেখানে ভিন্ন মতের কোন স্থান নেই।
এটি আসলে নির্ভর করছে কোন পক্ষ শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়। এদেশের মানুষকেই এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা নিজেদের দেশকে কেমন দেখতে চায়।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)