কুমিল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি পূজামণ্ডপে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনার জের ধরে ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর ও সর্বশেষ গতরাতে রংপুরে ঘটেছে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা। ওইসব ঘটনায় বিভিন্ন জেলায় একাধিক মামলা হয়েছে। আটকও হয়েছে শ’খানেক সন্দেহভাজন। বুধবার থেকে শুরু হওয়া এসব সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন কয়েকশত মানুষ।
এখন পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে সবমিলিয়ে বিষয়টি একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে বলে আমাদের মনে হয়েছে।
পূজা মণ্ডপে এবং মন্দিরে হামলার ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক এবং কারো ইন্ধনে হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য দেশের বাইরে কেউ কলকাঠি নাড়ছে বলে তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন। ক্ষমতাসীন অনেক নেতা-মন্ত্রী ইতিমধ্যে সরাসরি বিএনপি ও জামায়াতকে দায়ী করেছেন সরাসরি। ঘটনার শিকার স্থানীয় হিন্দুজনগোষ্ঠী স্থানীয়ভাবে নানা বিষয়কেও ইঙ্গিত করেছেন এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে সংখ্যার বিচারে ‘সংখ্যালঘু’ নামে চিহ্নিত করা হলেও তারাও কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নাগরিক। তাদের নিরাপত্তা পাবার অধিকার নিশ্চিত করা ও সবধরণের সুরক্ষার দায় রাষ্ট্রের। জনগণের ট্যাক্সের টাকার পরিচালিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসন সংবিধানিকভাবে তাদের দায়-দায়িত্বের বলয়ে সব নাগরিকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি করেন বা করবেন, এমনটাই স্বাভাবিকভাবে আশা করার কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে তাদের ভূমিকা ইতিমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বহুসময় ধরে হামলা-ভাঙচুর চললেও দ্রুততম সময়ে আক্রান্ত মানুষজন তাদের পাশে পায়নি বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।
শত শত বছর ধরে দেশে হিন্দু-মুসলিম একসাথে বসবাস করে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও পারস্পরিক উৎসবে অংশগ্রহণ বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য। সম্প্রীতির প্রশ্নে গত কয়েকদশক ধরে কিছু ঘটনা ছাড়া সবকিছু মোটামুটি স্বাভাবিক ও সুন্দর ছিল। ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনায় মামলা-তদন্ত-বিচার কার্যক্রম চলার বিষয়টি যেমন ইতিবাচক, আবার কিছু ঘটনায় অভিযুক্ত বা পক্ষ-বিপক্ষের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে নেতিবাচক পরিস্থিতিও হয়েছে। এবিষয়ে কড়া নজর ও সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।
সবধর্মের মতো ইসলাম ধর্মেও অন্যধর্মের প্রতি সম্মান ও অন্যধর্মাবলম্বিদের প্রতি আচরণের বিষয়টি উল্লেখ করা আছে। ইসলামসহ কোনো ধর্মই কোনো হিংসা-হানাহানি সমর্থন করে না। অন্যধর্মের কারো আচরণে বা কোনো ঘটনায় কারো ধর্মীয় অনুভূতি আঘাতপ্রাপ্ত হলে তা দেশের প্রচলিত আইনের দৃষ্টিতে আনার সুযোগ রয়েছে, তা না করে হামলা-ভাঙচুর করা আইনের দৃষ্টিতে পুরোপুরি অন্যায় ও ধর্মীয় রীতি বিরুদ্ধ।
স্বাধীনতার চেতনায় গড়ে ওঠা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যেকোনো সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে দেশের সবধরণের মানুষকে সোচ্চার হতে হবে, বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ মানুষকে। ধর্মের নামে উগ্র ও ভন্ডরা দেশে অশান্তি সৃষ্টির কোনো পায়তারা করলে তা রুখে দিতে হবে জোরালোভাবে।