কোনভাবেই নিজের দায় এড়াতে পারেন না মুশফিকুর রহিম। সবাই বলছে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার মুশফিকের নাই। সেটা বাইরে থেকে টিম ম্যানেজমেন্ট তথা হাথুরুসিংহে নিয়ে থাকেন। কিন্তু মাঠে টস কিন্তু কোচ করতে যায় না। আর ম্যাচের আগে কোচের মতো উইকেট পরীক্ষা নিরিক্ষা অধিনায়কও করেন। মুশফিকও টিম মিটিংয়ে উইকেটের চরিত্র বিশ্লেষণ করেছেন। যদি করে থাকেন তাহলে অবশ্যই তিনিও টস জিতে ফিল্ডিংয়ের নেয়ার পক্ষপাতিই ছিলেন। না হলে টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে টস জিতে ব্যাটিং নেয়ার গাটসটা দেখাতে পারতেন তিনি। অনেকেরই ধারণা, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা উইকেট কেমন হবে সেটা আসলে বোঝেন না। তাই কোচের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আর টেস্ট শুরুর আগেই ম্যাচ প্রতিপক্ষের হাতে তুলে দেন।
মুশফিক বরাবরই নেতিবাচক অধিনায়ক। দল সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও ১/২ ওভার বোলার মার খেলে বা একটু রান বেশি দিয়ে ফেললেই তিনি ফিল্ডিং ছড়িয়ে দেন। প্রতিপক্ষের ওপর যেখানে আরও চাপ বাড়ানোর কথা, সেখানে তিনি তাদের আরও সহজে টিকে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এটা অতীতে অনেকবারই দেখা গেছে।
আর মুশফিক তার পেসারদের ওপর ততটা ভরসা করেন না যতটা করেন স্পিনারদের ওপর। এটা পরীক্ষিত সত্য। দক্ষিণ আফ্রিকার বাউন্সি উইকেটে স্পিন আবার ততটা কার্যকর নয়। সাকিব না থাকায় বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। তার চাইতে বেশি ভয় পেয়েছেন মুশফিক। সাকিবের অভাব পূরণ করতে তাইজুলকে দলে নিয়েছেন। কিন্তু বাদ পড়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তাই এক স্পিনারের সাপোর্টটা খুব বেশি পাচ্ছেন না মুশফিক।
আর যাই হোক পেসারদের ওপর ভরসা করে মুশফিক আগে বোলিং নেননি। তাসকিন-শফিউলকে বাদ দিয়ে দলে নিয়ে আসা হয়েছে রুবেল হোসেন আর শুভাশিষকে। মুশফিক তার পেসারদের ওপর কতটা ভরসা করেন সেটা বোঝা গেছে ইনিংসের শুরুতেই। প্রথম ছয় ওভারেই চারজন বোলারকে ব্যবহার করেছেন অধিনায়ক। যাতে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনারই উপকৃত হয়েছেন। তারা উইকেটে সেট হতে পেরেছেন। আবার বাংলাদেশের বোলাররা নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার আগেই তাদের সরিয়ে দিয়েছেন ক্যাপ্টেন। সবকিছু দলীয় সিদ্ধান্ত হলেও এই একটা জায়গায় কিন্তু অধিনায়কই সর্বেসর্বা। মাঠের সিদ্ধান্ত পুরোপুরিই নিজের।
দ্বিতীয় টেস্টে কেন বোলিং নেয়া হলো? এর একটা অন্যরকম এবং (খুব সম্ভবত এটাই সত্যি) বাস্তব ব্যাখ্যা দেয়া যেতে পারে। এই টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ হার মেনে নিয়েই মাঠে নেমেছে। বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার যে চিত্র সেটা শুধু ওয়ানডেতে এবং দেশের মাটির টেস্ট সিরিজে। দক্ষিণ আফ্রিকার পেস সহায়ক উইকেটে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নেই। এর আগের দুটি সফরে সম্মানজনক পরাজয়টাও পায়নি বাংলাদেশ। তাই এবার আগে থেকেই সিদ্ধান্ত ছিলো, হারবো কিন্তু যে করেই হোক পাঁচ দিন ক্রিকেট খেলবো। বাংলাদেশ টস জিতে ব্যাটিং নিলে হয়তো সে সুযোগটা মিলতো না। উইকেটের আদ্রতা আর প্রোটিয়া পেসারদের বাউন্সের তোপে প্রথম ঘন্টাতেই ৪/৫ উইকেট হারিয়ে ফেলার আশঙ্কা ছিলো। প্রথম দিনেই যদি বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে গেলে আর স্বাগতিকরা প্রথম ইনিংসে বড় রানের লিড নিলে ৩/৪ দিনে ম্যাচ শেষ হওয়ার পাশাপাশি ইনিংস পরাজয়ের আশঙ্কা থাকে।উল্টোদিকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠালে এই মরা উইকেটে আর যাই হোক তাদের ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটবে না। প্রথম দিনেও ইনিংস ঘোষণা করবে না এটা জানা কথাই। দেড় বা পৌনে দুই দিন দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ে আটকে রাখার চেষ্টা থাকবে বাংলাদেশের। তাতে রান যতই উঠুক না কেন। এরপর নিজেদের দুই ইনিংস আর স্বাগতিকদের এক ইনিংস মিলিয়ে ম্যাচটা পাঁচ দিনে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে। দুই টেস্টেই হারলেও অন্তত দেশে ফিরে নিজেদের ধারাবাহিক উন্নতির গানটা গাওয়া যাবে ভালো মতোই।
অনেকেই বলতে পারেন কোচই সবকিছু ঠিক করে দিচ্ছেন। মুশফিক কী করবেন? হাথুরুই দল নির্বাচন করেন, টস জিতলে কী নেয়া হবে তার সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। অধিনায়কের কী দোষ। ম্যাচ জিতলে যেখানে কৃতিত্বের বেশির ভাগটা যায় ক্রিকেটার আর অধিনায়কের ওপর সেখানে দোষগুলোও তাদের ঘাড়েই বর্তায়। আর এখানেও যদি তিনি ড্রেসিংরুমের কথায় চলেন, তাহলে বলতে হবে তার অধিনায়ক হওয়ার যোগ্যতাই নেই। জোর করে অধিনায়কের পদ আকড়ে থাকার অধিকারও নেই। দায়িত্বগুলো মুশফিককেই নিতে হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)