বিসিএস পরীক্ষাসহ সকল প্রকার সরকারি-বেসরকারি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা সংস্কার ও শিথিল করার দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
দেশব্যাপী চাকরি ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে রোববার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে মানববন্ধনে বিভিন্ন বিভাগের প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, কোটা বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এই মুহূর্তে দরকার কোটা ব্যবস্থা সংস্কার’, ‘৫৬% কোটায় মেধাবীরা অসহায়’, ‘বৈষম্য রুখবো, সেনার বাংলা গড়বো’ ইত্যাদি নানা স্লোগান প্ল্যাকার্ড নিয়ে কোটা সংস্কারের জোরালো দাবি জানান।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের পক্ষে পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন। শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ হলো- কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে শতকরা ৫৬ ভাগ থেকে ১০ ভাগে নিয়ে আসতে হবে, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দিতে হবে, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া যাবে না এবং চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাট মার্কস ও বয়সসীমা করতে হবে।
সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দের পক্ষে মানববন্ধনের আহ্বায়ক সুলতান আজিজুল বলেন, ‘সমগ্র বাংলাদেশের কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের আন্দোলনের সাথে আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একাত্মতা পোষণ করছি। আমরা কোটা ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিপক্ষে না। দেশের মাত্র ২ শতাংশ লোকের জন্য ৫৬ শতাংশ কোটা বিদ্যমান রয়েছে। ৫৬ শতাংশ কোটার রাখার কারণে প্রকৃত মেধাবীরা যোগ্যতা থাকার পরও চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কোটা কমিয়ে ১০ শতাংশতে নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি। মূলত মেধাবীরা যাতে দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক জায়গায় যেতে পারে, এজন্য কোটা সংস্কারের দাবিতে আমাদের আন্দোলন’।
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে কোটা সংস্কার দাবিতে বক্তব্য রাখেন সালেক মুহিত। তিনি বলেন, ‘অসম ও অযৌক্তিক কোটা ব্যবস্থার ফলে বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রে এক কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারা কখনও চান না তাদের কোটা সুবিধা গ্রহণের কারণে দেশটা অযোগ্য ও দুর্বল নেতৃত্বের হাতে পরিচালিত হোক’।
চাকরির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সমতার দাবি জানিয়ে এই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলেন, ‘আজকে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান রয়েছে তাদের সকলেরই উচিৎ মেধাবীদের মূল্যায়ন ও দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এই মানববন্ধনের সাথে একাত্বতা পোষণ করা। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তার হিসেবে তখনই লজ্জিত হয়, যখন দেখি দেশের উন্নয়নের স্বার্থের কথা চিন্তা না করে নিজেদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে কোটার পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যায়’।
মানববন্ধনের আয়োজক এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়: তারা মূলত কোটা ব্যবস্থার বিরোধী নয়। তবে বর্তমানে নিয়োগের ক্ষেত্রে যেভাবে বিভিন্ন কোটা দেওয়া হচ্ছে, তাতে প্রকৃত মেধাবীরা অন্যায়ের শিকার হচ্ছেন বলে তারা মনে করেন। তাই তাদের দাবি, মেধার ভিত্তিতে অন্তত ৯০ শতাংশ নিয়োগ দেওয়া হোক। বাকি ১০ শতাংশ নিয়োগ কোটা ব্যবস্থার মাধ্যমে দেয়া যেতে পারে।
এছাড়াও মানববন্ধনে চাকরিপ্রার্থী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে আরও বক্তব্য রাখেন নাজমুল হোসেন, তরিকুল ইসলাম জয়, মোনা, বাঁধন, সুলতান মাহমুদ প্রমুখ।