প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। উপমহাদেশের কোনো দলকেও কোচিং করাননি আগে। সাউথ আফ্রিকার বাইরেও কোনো দলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই। এমন একজন কোচ রাসেল ডমিঙ্গোই আগামী দুই বছর সাকিব-তামিমদের কোচিং করাবেন। প্রশ্ন জাগছে, কেমন কোচ পেলেন টাইগাররা?
শনিবার সাউথ আফ্রিকা দলের সাবেক কোচ ডমিঙ্গোকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হেড কোচ নিয়োগ করেছে বিসিবি। বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন দুপুরে তাকে টাইগারদের কোচ নির্বাচনের কথা জানান। পোর্ট এলিজাবেথে জন্ম নেয়া ৪৪ বছর বয়সী এ প্রোটিয়া আগামী দুবছর মিরজা-সৌম্যদের কোচিং করাবেন। ২১ আগস্ট নতুন দায়িত্বে যোগ দেবেন তিনি।
ডমিঙ্গো ঢাকায় এসে গত ৭ আগস্ট বিসিবি কর্তাদের কাছে সাক্ষাতকার দিয়ে গেছেন। বিস্তর কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করে যান। বিসিবি সভাপতিসহ বোর্ডের কয়েকজন পরিচালক পরে তার ব্যাপারে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছিলেন। একই সময়ে নিউজিল্যান্ডের সাবেক কোচ মাইক হেসনের দিকেও নজর ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাকরিটা পেয়ে গেলেন সাউথ আফ্রিকানই।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলার অভিজ্ঞতা না থাকলেও কোচিংয়ে লম্বা সময়ের অভিজ্ঞতা আছে ডমিঙ্গোর। ২২ বছর বয়সেই পেয়ে যান কোচিংয়ের প্রথম ডিগ্রি। স্পোর্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং মার্কেটিংয়ের ওপরও ডিগ্রি আছে তার। পরে মাত্র ২৫ বছর বয়সেই প্রোটিয়াদের ইস্টার্ন প্রোভিন্স যুব দলের কোচ হন।
তারপর শুধুই এগিয়ে চলা। একযুগ ধরে নানা সময়ে সাউথ আফ্রিকার অনূর্ধ্ব-১৩, অনূর্ধ্ব-১৯, বি-দল ও এ-দল ও জাতীয় দলের দায়িত্ব সামলান। ২০০৫ সালে দেশটির ঘরোয়া দল ওয়ারিয়র্সের কোচের পদ পান।
২০১২ সালে গ্যারি কারস্টেনের সহকারী থেকে টি-টুয়েন্টি দলের হেড কোচে উন্নীত হয়েছিলেন। পরের বছরের আগস্ট পর্যন্ত সেই দায়িত্ব সামলান। ২০১৩ সালে কারস্টেনের বিদায়ের পর তিন সংস্করণেই প্রোটিয়াদের হেড কোচের পদ পান। তার কোচিংয়ে ১৩ টেস্ট সিরিজের ৮টিতে জেতে সাউথ আফ্রিকা। টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে সাত থেকে দেশটিকে টেবিলের দুইয়ে তুলেছিলেন।
ডমিঙ্গোর সময়ে ২২টি ওয়ানডে সিরিজ খেলে ১৪টিতে জিতেছিল প্রোটিয়ারা। আইসিসি ওয়ানডে টেবিলের শীর্ষ দল হওয়ার গৌরবও অর্জন করে। একই সময়ে টি-টুয়েন্টিতে ৪২ ম্যাচে ২৩ জয় এসেছে আফ্রিকানদের।
২০১৪ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে আমলা-ভিলিয়ার্সদের সেমিফাইনালে নিয়ে যান তিনি। বিশ্বকাপের নকআউটে প্রোটিয়াদের একমাত্র জয়টিও ডমিঙ্গোর আমলেই। পরে ২০১৭ সালে জাতীয় দল থেকে সরিয়ে আবারও এ-দলের কোচিংয়ে আনা হয় তাকে।
আগামী বছর টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ থাকায় এই সংস্করণে স্পেশালিস্ট কোচকেই কাজে লাগাতে আগ্রহী হল বিসিবি।
ডমিঙ্গোকে নিয়ে বিশ্বকাপের পর নতুন করে গোছানো বাংলাদেশ দলের কোটিংস্টাফ প্যানেলে বেশিরভাগই এখন আফ্রিকান। বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাউথ আফ্রিকার সাবেক পেসার চার্লস ল্যাঙ্গাভেল্ট। ব্যাটিং কোচে বহাল আছেন আগের কোচ স্টিভ রোডসের বহরের সাউথ আফ্রিকারই সাবেক নিল ম্যাকেঞ্জি। শুধু স্পিন কোচের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকে।
ইংল্যান্ড বিশ্ব আসরের পর থেকেই কোচহীন ছিল বাংলাদেশ দল। স্টিভ রোডসের সঙ্গে চুক্তি সমাপ্তিতে খালি হয় পদ। এরমধ্যে সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজনকে ‘আপদকালীন’ কোচ করে শ্রীলঙ্কা সফর করে টাইগাররা। লঙ্কা সফরে ফলাফল হয়েছে তিক্ত। স্বাগতিকদের কাছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।
লঙ্কান ক্ষত মোছার পথে আগামী মাসে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সঙ্গে জিম্বাবুয়েকে নিয়ে আছে ত্রিদেশীয় টি-টুয়েন্টি সিরিজও। তার আগেই জাতীয় দলের নতুন হেড কোচ পেলো দল। ডমিঙ্গোর মিশন তাই শুরু হতে দেরি নেই! চ্যালেঞ্জটাও থাকছে বড়ই!