আসামের এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস) তালিকা থেকে বাদ পড়া মানুষদের নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যেসব আলোচনা হচ্ছে, তাকে ভুল উল্লেখ করে এনআরসি কর্তৃপক্ষ বলছে, বাদ পড়ারা কেউই রাষ্ট্রহীন হবে না। এমনকি তাদের বিদেশি বলেও গণ্য করা হবে না।
শনিবার আসামের এনআরসি বিভাগের দেয়া এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।
এতে আরো বলা হয়, ১৯৮৫ সালে আসামের জনগণের স্বার্থ দেখভালের জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। আসামের সর্বদলীয় গণ সংগ্রাম পরিষদ এবং আসামের সর্ব ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে হওয়া ১৯৮৫ সালের সেই চুক্তি কার্যকর করাই এনআরসির মূল লক্ষ্য।
‘এ বিষয়ে ২০১৩ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দেশটির সরকারকে বাধ্যবাধকতা দিয়ে নির্দেশনা দেন। এরপরেই দেশটির সরকার ২০১৫ সাল থেকে আসামের এনআরসি তালিকা করার জন্য কাজ শুরু করে।’
যে তালিকা প্রকাশ করেছে তা সম্পূর্ণ সুপ্রিম কোর্টের বিধিবদ্ধ নিয়ম, স্বচ্ছভাবে বৈধতা মেনেই করা হচ্ছে উল্লেখ করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মেনে সরকার দায়িত্ব পালন করছে। এই তালিকা তৈরিতে সকল পদক্ষেপ শেষ করতে সময়ও নির্দিষ্ট করে দেয় দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। তবে সবকিছু দেশটির সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি পর্যবেক্ষণ করছে।
‘এনআরসি বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি মেনেই তৈরি করা হয়েছে। ওই তালিকা করার সময় প্রতি বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুমারি করা হয়েছে। তাই এখনে কেউ বাদ পড়ার সুযোগ নেই। তবে তাদের ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগেই এখানকার নাগরিক ছিলেন এমন প্রমাণ যারা দিতে পেরেছেন তাদের তালিকায় রাখা হয়েছে।’
এনআরসিকে একটি বৈষম্যহীন প্রক্রিয়া মন্তব্য করে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এখানে পক্ষপাত এবং অবিচারের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়াও এনআরসির ওই নাগরিক তালিকার আবেদন ফর্মে ধর্মের জন্য আলাদা কোনো জায়গা রাখা হয়নি।
‘নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিরা আপিলের জন্য ৬০ থেকে ১২০ দিন সময় পাবেন। আপিল আবেদনের শুনানির জন্য রাজ্যে কমপক্ষে ১ হাজার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। এরই মধ্যে অবশ্য ১০০ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। আরও ২০০টি ট্রাইব্যুনাল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মধ্যে গঠন করা হবে। সুতরাং বাদ পড়াদের জন্য এখন জুডিশিয়াল পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আবেদনকারীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। ট্রাইব্যুনালে হেরে গেলে যে কেউ উচ্চ আদালতে যেতে পারবেন।’
যারা চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়লেও তারা আগের মতোই সব অধিকার ভোগ করতে পারবেন জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাদ পড়ারা কেউ রাষ্ট্রহীন হবেন না। এমনকি তাদের বিদেশি বলেও গণ্য করা হবে না।
তালিকা থেকে বাদ দেয়া হলেও এনআরসি ভুক্ত নয় এমন ব্যক্তিদের কেন্দ্রীয় সরকার ও আসামের রাজ্য সরকার সকল ধরনের আইনি সহায়তা দিয়ে সাহায্য করবে। যে কোন ধরণের আইনি সহায়তা প্রয়োজন হলে তাদের ফ্রিতে দেয়া হবে।’
বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত সকলের সমঅধিকার, আইনের প্রতি সম্মান রেখেই সাংবিধানিকভাবে মানবাধিকার প্রতিরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। এনআরসির বাস্তবায়নের সময় যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ভারতের চলমান গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও আইন মেনে নেয়া হবে বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়।
গতকাল শনিবার ভারতের আসামে চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা বা এনআরসি প্রকাশিত হয়। সেই তালিকা থেকে ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষের নাম বাদ পড়ে। চূড়ান্ত তালিকায় ঠাঁই হয়েছে ৩ কোটি ১১ লাখ মানুষের নাম।