মার্কিন সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের এবারের সম্ভাব্য বাংলাদেশ সফরকে বিশ্লেষকরা দু’দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতার কাঠামোকে জোরদার করার উপলক্ষ হিসেবে বিবেচনা করছেন। তবে তাদের মতে, সহযোগিতার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার জন্য আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের উদ্বেগ এক জায়গায় মিলতে হবে।
আগামী বুধবার দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের দু’দিনের সফরে বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র এক হয়ে জঙ্গিবাদ ঠেকাতে আর কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে ঢাকা সফরে সে বিষয়ে তার আলোচনা করার কথা রয়েছে
কোন পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে তার সফরের তারিখ নিশ্চিত না করলেও কূটনৈতিক সূত্রগুলো আভাষ দিয়েছে, সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে নিশা দেশাইয়ের সম্ভাব্য বাংলাদেশ সফরকে বিশ্লেষকরা কীভাবে দেখছেন?
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক দেলোয়ার হোসেন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এর আগেও অনেকে এসেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের আরো নানা বিষয়ে চুক্তি রয়েছে তেমনই কিছু নিরাপত্তা ফ্রেমওয়ার্কও আছে। সেটারই অংশ নিশা দেশাইয়ের সফর।
তার মতে, বাংলাদেশে সম্প্রতি যে অস্থিরতা চলছে তাতে যুক্তরাষ্ট্রেরও উদ্বেগ আছে। আর যখন তাদেরই সাবেক কর্মী নিহত হয়েছেন তখন সেই মাত্রাটা আরো বেশি। ‘এখন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের উদ্বেগ মিললেই কেবল সহযোগিতার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হওয়া সম্ভব।’
দেশের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে যে আলোচনা চলছে নিশা দেশাইয়ের সফর তাতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলেই মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন।
তবে, বাংলাদেশ বিগত কয়েক বছরে নিজেদের যে ধারা তৈরি করেছে, নিজেদের যে অবস্থান তৈরি করেছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র আর বাংলাদেশের উপর চাপ তৈরির চিন্তা করবে না বলেও মনে করছেন তিনি।
‘বরং মনে হয় তারা এখন বাংলাদেশের অবস্থান বিবেচনা করে আরো বেশি সম্পর্ক উন্নয়নের দিকেই জোর দেবেন,’ বলে মন্তব্য করেন এ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।
একইরকম কথা বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক মো. আলী সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, নিশা দেশাইয়ের এই বাংলাদেশ সফর মূলতঃ একটি কূটনৈতিক ফ্রেমওয়ার্ক। এটা নিয়মিত কাজেরই একটা অংশ।
‘তবে ঠিক কী কী এজেন্ডা নিয়ে নিশা দেশাই বাংলাদেশে আসছেন সেটা তিনি না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। দেশে এখন যে কিছুটা অস্থির অবস্থা চলছে তাতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ারই কথা, সরকার নিচ্ছেও। আর সেখানে ভিন্ন রাষ্ট্রের উদ্বেগ থাকাও স্বাভাবিক।’
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের প্রটোকল কর্মকর্তা জুলহাজ হত্যাসহ অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে নিশার এবারের সফর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো আভাষ দিচ্ছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র মার্ক টোনার বলেছেন, বাংলাদেশ এখন খুব জটিল অবস্থায় রয়েছে আর বাংলাদেশ সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিচ্ছে এমনটা দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
জুলহাস হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোনও করেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।