কুমিল্লা বিভাগের নাম ময়নামতি করায় সেখানকার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। কারো দাবি কুমিল্লা নামেই বিভাগ হতে হবে, কারো কাছে নাম কোনো মুখ্য বিষয় না; যেকোন নামে বিভাগ হলেই চলে।
তবে, মাঠে কুমিল্লা নামপন্থীদের অবস্থান জোরালো। বিভাগের নাম কুমিল্লা রাখার দাবিতে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের দাবি জানিয়ে আসছে। বিষয়টি পুনঃবিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে তারা।
এ বিষয়ে চ্যানেল অাই অনলাইনকে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘কুমিল্লা শহর বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী শহর। যেহেতু একে বিভাগ ঘোষণার একটি সিদ্ধান্ত এসেছে, তাই হয়তো একটি নতুন নামের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন অনেকেই।কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা করা হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালীসহ আরো কিছু জেলা এর অন্তর্ভুক্ত হবে। সেক্ষেত্রে সেই সব জেলার বাসিন্দাদের সঙ্গে ঐক্যের ভিত্তিতে যদি এর নামকরণ ‘ময়নামতি’ করা হয়, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে কারো ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য ময়নামতি নামকরণ হলে ঘোরতর আপত্তি অাছে।’
ময়নামতি নামের বিষয়ে সরাসরি আপত্তি জানিয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগের নাম পরিবর্তন করে ময়নামতি রাখার যে প্রস্তাবনা করা হয়েছে, অামি এর তীব্র বিরোধিতা করছি।’
তিনি বলেন: বাস্তবতা হলো কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা করার জন্য কুমিল্লা নামই যথেষ্ট। কুমিল্লা তো কুমিল্লাই, এর আলাদা নাম লাগবে কেনো? ময়নামতির যেমন আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে কুমিল্লারও তেমন অালাদা ঐতিহ্য রয়েছে। কুমিল্লা এতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি শহর। এর ঐতিহ্যগত পরিচিতির জন্য আলাদাভাবে কোন নামের প্রয়োজন নেই। আমি চাই অচিরেই সরকার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুক।
২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে ময়মনসিংহকে বিভাগ ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এরপরই কুমিল্লাকে বিভাগ করার বিষয়টি আলোচিত হতে থাকে। ওই বছরের ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বিভাগকে ভেঙে কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে পৃথক বিভাগ করার বিষয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর দু’ বছর পর ১৪ ফেব্রুয়ারি একনেকের বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘কুমিল্লা বিভাগের নাম ময়নামতি রাখা হবে।ভবিষ্যতে কোনো জেলার নামে আর বিভাগ হবে না। নতুন নামকরণ করা হবে’।
এ সংবাদ গণমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশের পর পরই কুমিল্লা জেলার বাসিন্দাদের ভেতরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সভাপতি অ্যাডভোকেট রুস্তম আলী বলেন, ‘ময়নামতির হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে, এটা সত্য কথা কিন্তু কুমিল্লার সাধারণ জনগণ তা পুরোপুরি জানে না। তারা কুমিল্লাকে কুমিল্লা নামেই জানে চেনে। কৃষক-শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষ সবার মনের ভেতরেই লালন হয়ে আসছে কুমিল্লা নামটি। সেক্ষেত্রে এই নামটি পরিবর্তন করে ময়নামতি করা হলে, সবার ভেতরেই স্বাভাবিকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। অামি মনে করি যেহেতু অামাদের নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী জনগণের প্রকৃত চাহিদাসহ সবই বোঝেন, তাই আমার বিশ্বাস তিনি সাধারণ মানুষের মতামতকে মূল্যায়ন করবেন।’
অনেক জায়গায় বিরোধিতা থাকলেও কুমিল্লা বিভাগের নাম ময়নামতি করায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে ময়নামতি ইউনিয়ন এলাকার মানুষ।প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে তারা।
কিছুটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ময়নামতি নামেই সন্তোষ প্রকাশ করে কুমিল্লা গণদাবি পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘কুমিল্লা নামকরণ করা হয়েছে ১৯৬২ সালে। এর আগে কুমিল্লার নাম ছিল ত্রিপুরা। কুমিল্লার নামকরণ করেছেন অাইয়ুব খান। আর তাই নেত্রী যদি এই নামের পরিবর্তে ময়নামতি নামে বিভাগ করেন, অামার মনে হয় না এতে কারো আপত্তি থাকা উচিত। কারণ নামে কিবা অাসে যায়, অামরা চাই বিভাগ। সেটা কুমিল্লা বা ময়নামতি একটা হলেই হলো। নাম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে আমরা বিভাগ হারাতে চাই না।’
ময়নামতি অথবা কুমিল্লা নামে বিভাগের বাইরে বৃহত্তর নোয়াখালী (নোয়াখালী, লক্ষীপুর ও ফেনী) জেলার বাসিন্দারা নোয়াখালী বিভাগের দাবি জানিয়ে আসছে অনেকদিন ধরে। ময়নামতি বিভাগ ঘোষণার পরে নোয়াখালির বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদ-দাবি উঠতে শুরু করেছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষেদের নির্বাহী কমিটির (একনেকের) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ময়নামতি বিভাগ কার্যকর হলে সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলা অন্তর্ভুক্ত হবে।