সিরিয়ায় এক অভিযানে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগদাদি নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে সেই অভিযানের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শনিবার রাতে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর স্পেশাল অভিযানের সময় আত্মঘাতী হয়েছেন বলে তার দাবি।
রোববার হোয়াইট হাউজে দেয়া এক ভাষণে ওই অভিযানের বিস্তারিত বিবরণ দেন ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আল বাগদাদি যে বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন রাতের বেলায় মার্কিন স্পেশাল ফোর্স সেখানে অভিযান চালায়। প্রচণ্ড গোলাগুলির পর সৈন্যরা বাড়িটি ঘিরে ফেললে আইএস নেতা আল বাগদাদি তার তিন বাচ্চাকে নিয়ে একটি বদ্ধ সুড়ঙ্গে লুকানোর চেষ্টা করেন।
‘‘সেসময় মার্কিন সেনাদের সাথে থাকা কুকুর তাকে তাড়া করলে উপায় না দেখে আইএস নেতা শরীরে বাঁধা বিস্ফোরক ফাটিয়ে দেন। বিস্ফোরণে সুড়ঙ্গটি তার শরীরের ওপর ধসে পড়ে। বিস্ফোরণে আল বাগদাদির শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সাথে থাকা তিনটি শিশুও নিহত হন। এসময় আইএস নেতার বেশ কজন সহযোগীও নিহত হয়।’’
ট্রাম্প বলেন, ‘ছিন্নভিন্ন শরীরের ডিএনএ পরীক্ষা করে আল বাগদাদির পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। দু’ঘণ্টা ধরে চলা অভিযানের শুরুতে ১১টি শিশুকে সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। তারা অক্ষত রয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে উত্তর পশ্চিম সিরিয়ায় ইদলিব প্রদেশে বারিশা নামের একটি গ্রামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, শনিবার গভীর রাতে ৩০ মিনিট ধরে হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালানো হয়।
দুটি বাড়িকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়। অভিযানে একটা বাড়ি গুঁড়িয়ে যাওয়ার পরেই সেনাবাহিনী সেখানে ঢোকে।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার বক্তব্যে এই অভিযানে নানাভাবে সহায়তা করার জন্য সিরিয়া, তুরস্ক, রাশিয়া এবং কুর্দিদের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেছেন, অভিযানস্থল থেকে তারা স্পর্শকাতর নথিপত্র সংগ্রহ করেছেন যার মধ্যে আইএসের ভবিষ্যত পরিকল্পনাও ছিল।
এর আগেও বহুবার আইএসের এই শীর্ষ নেতার মৃত্যুর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশ হয়েছিল তার।
২০১১ সালে আইএস নেতাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পরে পুরস্কারের অঙ্ক বাড়িয়ে ২৫ মিলিয়ন ডলার করা হয়।
আইএস’র শীর্ষ নেতা আবু বকর আল বাগদাদি ২০১৪ সালে ‘খেলাফতের ডাক দিয়ে সিরিয়া ও ইরাকে আইএসের নতুন রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়।
বাগদাদির পরিচয়: আবু বকর আল-বাগদাদির আসল নাম ইব্রাহিম আওয়াদ আল-বদরি। ধারণা করা হয়, ১৯৭১ সালে ইরাকের সামারার কাছে একটি সুন্নি পরিবারে তার জন্ম।
অল্প বয়সে গভীরভাবে ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তিনি ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর কোরানিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০০৪ সালে মার্কিন আক্রমণের শিকার হয়ে ক্যাম্প বুকাতে বন্দী হন তিনি। সেখানে তিনি প্রাক্তন ইরাকী গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ অন্য বন্দীদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
২০০৩ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাকে সামরিক অভিযান চলে, তখন আল বাগদাদি বাগদাদের কোন একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন বলে দাবি করা হয়।
অনেকের ধারণা, যখন তাকে দক্ষিণ ইরাকে একটি মার্কিন সামরিক ক্যাম্পে চার বছর আটকে রাখা হয়েছিল তখনই আসলে আল বাগদাদি জঙ্গিবাদে দীক্ষা নেন। এই ক্যাম্পে অনেক আল কায়েদা কমান্ডারকে বন্দী রাখা হয়েছিল।
আল বাগদাদি পরে ইরাকে আল কায়েদার নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। পরে অবশ্য ইরাকের আল কায়েদা নিজেদেরকে ২০১০ সালে ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এন্ড লেভান্ট’ বলে ঘোষণা করে।আইএস রাষ্ট্র কায়েম করতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। জিহাদী আই এস গ্রুপ প্রায় ৮০ লাখ মানুষের নিয়ন্ত্রণসহ বিশ্বজুড়ে অনেকগুলো আক্রমণ চালিয়েছে।
এরপরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইএস দমনের জন্য এ বছরের শুরুতেই পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেয়।আল বাগদাদির হত্যাকে মার্কিনীদের বড় বিজয় বলে মনে করছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।